E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

আদম ব্যাপারীর খপ্পড়ে পড়ে পরিবার নিয়ে দিশেহারা যুবক

২০১৯ মার্চ ১৬ ১৬:৪৪:২১
আদম ব্যাপারীর খপ্পড়ে পড়ে পরিবার নিয়ে দিশেহারা যুবক

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নের ফারাদপুর গ্রামের মৃত মিরাজ শাহের ছেলে দিনমজুর সিরাজুল ইসলাম দিনমজুরীর পেশা ছেড়ে স্বপ্ন দেখেছিল, বিদেশ গিয়ে পরিশ্রম করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভবিষ্যতে স্বচ্ছ জীবন-যাপন করবে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য যোগাযোগ হয় জেলার মহাদেবপুর উপজেলার বাগাচারা গ্রামের মৃত মোবারক আলী মন্ডলের ছেলে আদমব্যাপারী ওয়াহেদ আলী মন্ডলের সঙ্গে। এই আদমব্যাপারীর খপ্পড়ে পড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আজ স্বর্বশ্বান্ত হয়ে পড়েছে যুবক সিরাজুল ইসলাম।

নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁই বসতবাড়ি, শ্বশুর বাড়ির জমিজমা বিক্রি করে এবং একাধিক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কিস্তির মাধ্যমে আদমব্যাপারীকে ১৬ লাখ টাকা দিয়েছিল সিরাজুল ইসলাম। এর প্রমাণ হিসেবে আদমব্যাপারী ওয়াহেদ আলী যুবক সিরাজুলকে ১৬লাখ টাকা মূল্যের একটি ফাঁকা চেক প্রদান করে। আজ নয়, কাল এভাবে বছর পার হলেও সিরাজুলকে বিদেশ নিতে পারে না আদমব্যাপারী ওয়াহেদ। পরবর্তি সময়ে গ্রামে একাধিক বৈঠক করেও যখন সিরাজুল তার টাকা তুলতে পারছিল না তখন সে ফাঁকা চেক দিয়ে আদালতে একাধিক মামলা করে। সেই মামলাগুলো বর্তমানে চলমান। এমতাবস্থায় মামলাগুলো তুলে নেয়ার জন্য প্রভাবশালী আদমব্যাপারী বিভিন্ন রকম হুমকি-ধামকি প্রদান করছে সিরাজুল ইসলামকে।

নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সিরাজুল নওগাঁ সদর থানায় একটি সাধারন ডায়েরী (জিডি নং ৪৬৫) করলেও আদমব্যাপারী সিরাজুলকে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আদালতে আসতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ। এদিকে আদমব্যাপারীর খপ্পড়ে পড়ে সিরাজুল এখন পথে পথে ঘুরছে। বিভিন্ন এলাকার মানুষের বাড়িতে বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে ও ভটভটি চালিয়ে কোন ভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছে। সংসারের অভাব মোচনের জন্য সিরাজুলের স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজও করছে।

দিনমজুর সিরাজুল ইসলাম বলেন, গরীব সংসারের ভবিষ্যতের সুখের কথা ভেবে আমি সবকিছু শেষ করে বিদেশ যাওয়ার জন্য আদমব্যাপারীকে টাকাগুলো দিয়েছিলাম। কিন্তু আদমব্যাপারী যে আমাকে ও আমার পরিবারকে এভাবে পথে বসাবে তা আমি ভাবতেও পারিনি। টাকা পরিশোধ হওয়ার পর জানতে পারছি যে আদমব্যাপারী ওয়াহেদ আমার মতো শতাধিক মানুষকে এভাবে ঠকিয়েছে। তার বিরুদ্ধে আদালতে বেশ কিছু মামলা চলমান। কিন্তু সে প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কেউ তার কোন কিছু করতে পারে না। এখন আমি পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো।

এদিকে আদমব্যাপারী আদালতের মামলা তুলে নেয়ার জন্য ভয়-ভীতি প্রদান করছে। আমি বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি সরকার ও প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার চাই। সিরাজুলের স্ত্রী ফরিদা বেগম বলেন, বর্তমানে আমার ৭ম শ্রেণিতে ও ৫ম শ্রেণিতে পড়–য়া দুই সন্তান নিয়ে মানুষের বারান্দায় রাত্রি যাপন করছি। আদমব্যাপারীর প্রলোভনে বসতবাড়িসহ সবকিছু বিক্রি করে আজ আমরা পথের ফকির হয়ে গেছি। স্বামী ও আমি মানুষের দিনমজুরী কাজ করে কোন মতে বেঁচে আছি। তার ওপর আবার আদমব্যাপারীর বিভিন্ন হুমকি-ধামকি প্রদান। সবকিছু মিলে এখন আমরা যাযাবর হয়ে গেছি। তাই আমরা বর্তমানে পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের সহযোগিতা চাই।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার দেবেন্দ্রনাথ বলেন আদমব্যাপারীর এই বিষয়ে আমরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার বৈঠক করেছি। কিন্তু আদমব্যাপারী প্রভাবশালী হওয়ায় সে আমাদের বিচার মানতে চায় না। আদমব্যাপারী নাকি উল্টো সিরাজুলের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যে মামলা করেছে। আদমব্যাপারী ওয়াহেদ আলী মন্ডলের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

নওগাঁর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল হাই বলেন, আদমব্যাপারীর বিরুদ্ধে আদালতে এই রকম কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(বিএম/এসপি/মার্চ ১৬, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test