E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তাড়াশে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ভূমি অফিসের সম্পত্তি জালিয়াতির অভিযোগ

২০১৯ মার্চ ২৪ ১২:৫৮:২৯
তাড়াশে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ভূমি অফিসের সম্পত্তি জালিয়াতির অভিযোগ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : নাম তার শরিফুল ইসলাম  । তিনি একজন কলেজ অধ্যক্ষ । নিজেকে পরিচয় দেন একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে । শিক্ষকদের নেতৃত্বও দেন তিনি। পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করেন মাঝেমধ্যে । এতো সব সামাজিক পরিচিতির আড়ালে তার বিরুদ্ধে উঠে এসেছে সরকারি সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাত করার । ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বস্তুল গ্রামে ।

তাড়াশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সূত্র জানায়, উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বস্তুল ভূমি অফিসের জন্য ১৯৬৯ ইং সালে এসএ রেকর্ডের মালিক শ্রী মধু সরদার,শ্রী যাদু সরদার,শ্রী রমনী সরদার ও শ্রী চন্দ্র সরদার ২৯ শতক জমি বস্তুল তহশীল অফিসের নামে দান করেন (যার জেএল নং:৫৬,খতিয়ান নং:৪৭,দাগ নং:৬৫০ ও৬৫১,মৌজা:বস্তুল,তাড়াশ,সিরাজগঞ্জ ) । পরবর্তীতে আরএস জরিপ আমলে ১১৭৫ দাগে বস্তুল তহশীল অফিস ও ১১৭৬ দাগে হাট শ্রেণি উল্লেখ করে উক্ত সম্পত্তি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ডেপুটি কমিশনার সিরাজগঞ্জের নামে পরিশুদ্ধভাবে আরএস রেকর্ডে লিপিবদ্ধ হয় ।

ওই সম্পত্তির উপর স্থাপিত হয় বারুহাস ইউনিয়নের বস্তুল ভূমি অফিস । সম্প্রতি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক ৪৯ লাখ টাকা পাক্কলিত ব্যয়ে বারুহাস ভূমি অফিসের আধুনিক ভবন নির্মাণের কাজ হাতে নেয় সরকার ।সে মোতাবেক টেন্ডার আহবান করা হলে সর্বোচ্চ দরদাতা মীম কনস্ট্রাকশন কাজটি পায় । এবং নির্মাণ কাজের ভিত্তি স্থাপন করতে গেলে অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম গং কর্তৃক বাধা দেয়া হয় ।

কে এই শরিফুল ইসলাম

শরিফুল ইসলামের পিতার নাম মো: চাঁদ আলী ।বাড়ি তাড়াশ উপজেলার বস্তল গ্রামে । তিনি সিরাজগঞ্জ সদরের ছাতিয়ান তলী টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ । সে সহ তার অপর তিন সহদর ভাই উল্লেখিত ভূমি অফিস ও হাটের মোট ২০ শতক জায়গা তাড়াশ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ২০০০ ইং সালে ২৬ জানুয়ারি ৩৫৪ নং একখানা দলিল মূলে রেজিস্ট্রি করে নেয় ।

অনুসন্ধানে যা জানা যায়, বাংলাদেশ সরকারের ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ি দেখা যায় যে, জমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ রেকর্ড প্রযোজ্য । কিন্তু উল্লেখিত ভূমির রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে আরএস রেকর্ড টেম্পার করা হয়েছে। তাড়াশ সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে সম্পাদিত উল্লেখিত দলিলটি অনুসন্ধান করে দেখা যায়, দলিল দাতা হিসেবে দেখানো হয়েছে শ্রী যাদু সরদার কে । অথচ শ্রী যাদু সরদার সহ অপরাপর তিন দাতা ১৯৬৯ ইং সালে বারুহাস ভূমি অফিসের নামে ওই সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন । রেজিস্ট্রি করার পর দাতার কোন শর্ত না থাকায় সর্বশেষ রেকর্ডে (আরএস) বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ডেপুটি কমিশনার,সিরাজগঞ্জের নামে লিপিবদ্ধ হয়েছে

। অথচ অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম সহ অপর তিন দলিল গ্রহিতা আরএস রেকর্ডে সরকারি স্বার্থ থাকার পরও সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে ভূমি অফিসের ১২ শতক ও হাটের ০৮ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে নেন । উল্লেখিত ভূমির আরএস রেকর্ডে শ্রেণির জায়গায় যেখানে সুস্পস্টভাবে উল্লেখ রয়েছে তহশীল অফিস ও হাট।অথচ শরিফুল গং জালিয়াতি করে জমির শ্রেণি উল্লেখ করেছে নাল হিসেবে । এ ছাড়াও উক্ত দলিলে আরএস খতিয়ান কৌশলে উল্লেখ করেন নাই । উল্লেখিত ভূমিতে বস্তুল ভূমি অফিস বর্তমানেও চলমান রয়েছে । সরকারি এ সম্পত্তি কি ভাবে ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রি হলো ? এ জিজ্ঞাসা তাড়াশের সচেতন মহলের ।

তাড়াশে বর্তমান কর্মরত সাব-রেজিষ্ট্রার ফারহানা আজিজ বলেন, জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে সর্বশেষ রেকর্ড অবশ্যই প্রযোজ্য । সেটি এ দলিলে যথাযথ অনুসরন না করায় সরকারি স্বার্থের সাথে সাঘর্ষিক পরিস্থিথিতির সৃষ্টি হয়েছে । সরকারি সম্পত্তির ক্ষেত্রে এ ধরণের জালিয়াতির দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হওয়ার দরকার ।

বারুহাস ইউপি চেয়ারম্যান মো: মোক্তার হোসেন জানান, দলিল গ্রহিতারা একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত চ্ক্র । এরা সরকারি সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাত করার চেস্টা চালাচ্ছে । এর প্রতিবাদে সম্প্রতি এলাকাবাসী ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ।

বারুহাস ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মরত উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো: মোস্তাগীর কবির বলেন, সরকারি সম্পত্তির স্বার্থের প্রতি অবস্থান নেয়ায় শরীফুল ইসলাম গং তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে । ঘটনাটি তিনি তার র্উদ্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন ।

ঘটনাটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে কথা হয় অধ্যক্ষ শরীফুল ইসলামের সাথে । তিনি বলেন, এ নিয়ে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। সে কারণে কোন মন্তব্য করতে চাই না ।

তাড়াশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফফাত জাহান বলেন, জায়গাটি অবশ্যই বারুহাস ইউনিয়নের বস্তুল ভূমি অফিসের নিজস্ব জায়গা।যা দলিল ও রেকর্ড প্রমাণ করে । নিয়ম অনুযায়ী সব কিছু যাচাই বাছাই করেই টেন্ডারে দেয়া

(এমএস/এসপি/মার্চ ২৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test