E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাটে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ‘পুকুর চুরির’ অভিযোগ

২০১৯ মার্চ ২৪ ১৪:২৩:০৭
বাগেরহাটে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ‘পুকুর চুরির’ অভিযোগ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটে জনসাধারনের সুপেয় পানির আধার ৬টি পুকুরের পূন:খনন ও সংরক্ষণ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘পুকুর চুরির’ অভিযোগ উঠেছে। গত বছর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের পল্লী অঞ্চলে পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে বাগেরহাটের কচুয়ায় এই পুকুরগুলো খনন করা হয়। সরকার দলীয় সদ্য বিদায়ী সাংসদ এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশার ছেলে মীর রহমত আলী ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিক। শুধু তাই নয় পুকুর থেকে অবৈধ ভাবে বালি তুলে বিক্রি করার পর পুকুরের পাড়ের ভাঙ্গন ঠেকাতে খাল থেকে লবন ও পঁচা পানি ঢুকানো হয়। ফলে একমাত্র সুপেয় পানির আধার এই পুকুরগুলোর পানি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আর কাজে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা মেলায় সংশ্লিষ্ট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ৮০ লাখ টাকা বিল আটকে দিয়েছে। 

সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কচুয়া উপজেলার রাঢ়িপাড়া ইউনিয়নের চরকাঠি গ্রাম এবং বাধাল ইউনিয়নের সাংদিয়া গ্রাম। এই দুটি গ্রামে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের বসবাস। এই গ্রাম দুটিতে ভূগর্ভস্ত পানিরস্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপে সুপেয় পানি মেলে না। তাই এখানকার বাসিন্দাদের পানি পানের জন্য পুকুরের পানির উপর নির্ভর করতে হয়। চরকাঠি গ্রামের জেলা পরিষদের মালিকানাধীন পুকুরের পানিই একমাত্র ভরসা। গত অক্টোবর মাসে স্থানীয় মেসার্স রহমত ট্রেডার্স পুকুরটি পূন:খনন ও সংরক্ষণ কাজ শুরু করে। গত জানুয়ারিতে পুকুরটি পূন:খনন ও সংরক্ষণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

চরকাঠি গ্রামের আবু সাঈদ ও হাসিনা বেগম এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, পুকুর পূন:খননের জন্য ঠিকাদার পানি মেশিন দিয়ে শুকিয়ে মাটি কাটেন। পুকুর থেকে তোলা ওই মাটি দিয়ে তিনি পুকুরের চারপাশের পাড়ে দেন। পুকুরকাটার পর পাশ^বর্তি খাল থেকে পুকুরে লবনপানি তোলার উদ্যোগ নিলে আমরা তাতে বাধা দেই। তবে তিনি সব বাধা উপক্ষো করে জোর করে পুকুরে লবনপানি তোলেন। এখন আমরা ওই কুকুরের পানি পান করতে পারছি না। আমাদের এখন কয়েক কিলোমিটার দূর গোয়ালমাঠ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে আনতে হচ্ছে। আর যারা আনতে পারেন না তারা টাকা দিয়ে পানি কিনে পান করছেন। এরপর তিনি সিমেন্ট, বালু ও লোহার রড দিয়ে আরসিসি পিলার তৈরি করে চারপাশে কাটাতারের বেড়া দিয়ে বেষ্টনী দিয়েছেন। বেষ্টনীতে ব্যবহার করা আরসিসি পিলার ঢালাই করে করে লাগানোর কথা থাকলেও তিনি মাটির ভেতরে কোন রকমে আলগা করে পুতে রেখেছেন। কাটাতার লাগাতে না লাগাতেই তাতে মরিচা ধরেছে। ওই ঠিকাদার স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে আমরা সেসময়ে সেভাবে প্রতিবাদ করতে পারিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম শেখ ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বাধাল ইউনিয়নের সাংদিয়া সরকারি পুকুরের পানি দুটি গ্রামের মানুষ পান করে থাকে। এই পুকুর খনন কাজে নানা অনিয়ম করেছেন ঠিকাদার। এই পুকুরের যতটুকু গভীর করার কথা ছিল তা না করে শুধু চারপাশ দিয়ে মাটি তুলে পাড় বড় করেছে ওই ঠিকাদার। এছাড়া তিনি এই পুকুরের বালি ও মাটি তুলে অন্যত্র বিক্রি করায় পুকুরের পাড় ভেঙে যাচ্ছিল। তিনি এসময় ভাঙ্গন ঠেকাতে লবন পানি তুলে দেন বলে অভিযোগ তাদের। তারপর থেকে গ্রামবাসী এই পুকুরের পানি পান করতে পারছে না। বিশুদ্ধ পানির জন্য ওই গ্রামে হাহাকার লেগেছে।
ওই ঠিকাদার স্থানীয় সাংসদের ছেলে হওয়ায় ভয়ে আমরা সেসময়ে সেভাবে প্রতিবাদ করতে পারিনি। তিনি তার ইচ্ছা মত পুকুর খনন কাজ করেছেন। আমরা এলাকাবাসী যাতে বিশুদ্ধ পানি পেতে পারি তার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি তাদের।

অনিয়মের অভিযোগ স্বীকার করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শামীম আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ পল্লী অঞ্চলে পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৩০ কোটি ব্যয়ে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ১০৮টি পুকুর, দিঘী ও জলাশয় পূন:খনন ও সংষ্কারের উদ্যোগ নেয়। এই কাজের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ দরপত্র আহ্বান করলে স্থানীয় সাংসদের ছেলে মীর রহমত আলী মেসার্স রহমত ট্রেডার্সের নামে দরপত্রে অংশ নেন। মেসার্স রহমত ট্রেডার্সকে কচুয়া, চিতলমারী ও রামপাল উপজেলার ছয়টি পুকুরের মাটি কাটা, আরসিসি পিলার ও কাটাতারের বেড়ার কাজ দেয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে পুন:খনন কাজ শেষ করে আশি লাখ টাকার বিল জমা দিয়েছে। এরপর জনস্বাস্থ্য বিভাগ কাজের মান পরিদর্শনে যেয়ে শেষ হওয়া কাজে নানা ত্রুটি দেখতে পেয়েছে। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ত্রুটিপূর্ণ কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ও জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে পূন:খনন করা পুকুর হস্তান্তর করে তাদের কাছ থেকে অনাপত্তি চিঠি নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিভাগের কাছে চুড়ান্ত বিল জমা দিতে বলা হয়েছে। দুই দফায় ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হলেও তিনি এখনো তা জমা দিতে পারেননি। এজন্য ওই প্রতিষ্ঠানের আশি লাখ টাকার বিল আটকে দেয়া হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামরুজ্জামান টুকু এই প্রতিবেদককে বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের পল্লী অঞ্চলে পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে বাগেরহাটে বিশুদ্ধ সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন বিভিন্ন উপজেলার মোট ১০৮টি পুকুর, দিঘী ও জলাশয় পূন:খনন ও সংষ্কারের উদ্যোগ নেয়। বেশ কয়েকটি প্রকল্পে এই কাজ চলমান আছে। এরমধ্যে মেসার্স রহমত ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছয়টি পুকুর পূন:খনন ও সংরক্ষণের কাজ পেয়ে তা ইতিমধ্যে শেষ করেছে। আমরা তার কাজ বুঝে না পাওয়ায় তাকে ছাড়পত্র দেইনি।
অভিযোগ ওঠা মেসার্স রহমত ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী মীর রহমত আলীর সাথে এবিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। (০১৭১৭-৫৩০৩২০)

(এসএকে/এসপি/মার্চ ২৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test