E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শ্রীপুরে ঘর পেলো ৭৪৪ পরিবার 

২০১৯ এপ্রিল ২০ ১৮:২২:৪২
শ্রীপুরে ঘর পেলো ৭৪৪ পরিবার 

মাগুরা প্রতিনিধি : ‘জমি আছে ঘর নেই-নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’ এর আওতায় মাগুরার শ্রীপুর উপজেলাতে ৭’শ ৪৪ টি ঘর বরাদ্ধ হয় ।

এর মধ্যে অধিকাংশ ঘরের নির্মান কাজ শেষপ্রান্তে। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫’শ ২৮টি ঘর সুবিধাভাগী পরিবারের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরও করা হয়েছে। পাকা পোতা, টিনের চালা, টিনের বেড়া,সিমেন্টের খুটি ও বাথরুমসহ প্রতিটি ঘর নির্মান করতে সরকারিভাবে একলক্ষ টাকা হারে বরাদ্ধ ধরা হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান উক্ত কাজের দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পর তিনি ঘরগুলির গুনগত মান নির্ণয় করে দেখেন, যদিও কাজটি চ্যালেঞ্জিং তারপরও বরাদ্ধকৃত অর্থে অনেক সুন্দর ও উন্নতমানের কাজ করা সম্ভব । এ দৃঢ় প্রত্যয়কে সামনে নিয়ে অতি দুরদর্শীতার সাথে নির্ধারিত নকশাটির সাথে অতিরিক্ত কিছু নতুন নকশা যুক্ত করে টিনের বেড়া,সিমেন্টের খুটিকে বাদ দিয়ে বরাদ্ধকৃত অর্থে পাকা পোতা, রং করা পলাষ্টার বিশিষ্ট দেয়াল ঘর ও পাকা বাথরুম নির্মান করে অত্র উপজেলাতে ব্যাপক সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। বরাদ্ধকৃত একলক্ষ টাকায় এই ধরনের ভালমানের কাজ সঠিকভাবে সমাধান করা যদিও কঠিন তারপরও পিছটান হননি ইউএনও বরং সফলকামই হয়েছেন ।

তিনি চিন্তা করে দেখেছেন টিনের বেড়া ও সিমেন্টের খুটির ঘর থেকে এই ইটের দেয়াল ঘরগুলি হবে বসবাসের উপযুক্ত উপযোগী,দীর্ঘস্থায়ী,টেকসই ও মানানসই। তাঁর এই পরিকল্পনাটিকে বাস্তবে রুপ দিয়ে ইউএনও শ্রীপুর “টক অব দা টাউন”এ পরিনত হয়েছেন । সুবিধাভোগীদের মধ্যে কলেজ পাড়ার হতদরিদ্র অজিৎ দাস জানান,তিনি ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে বসে ছেঁড়া,কাঁটা জুতা,স্যান্ডেল মেরামত ও রং পলিশের কাজ করেন। বসত বাড়িতে সামান্য কিছু জমি ও মাথা গোজার মতো ৮ খানা টিনের জীর্ণশীর্ণ একটিমাত্র কাঁচা মাটির ছাপড়া আর ছাড়া কিছুই নেই তার । এই ঘরেই তিনি স্ত্রী,সন্তান ও পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন ।

আকাশে কালো মেঘ দেখলেই তিনি ভীত সন্ত্রন্থ হয়ে পড়তেন । তখন একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই তার আশা-ভরসা। একটু ঝড় বৃষ্টি হলেই সহসাই জল গড়িয়ে পড়ে ঘরের মেঝেতে । তিনি কোনদিনও ভাবেননি যে, পাকা ঘরে ঘুমাবেন । কিন্তু ভাগ্যক্রমে ইউএনও’র সানুগ্রহে হতদরিদ্র অজিৎ দাস প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’ এর আওতায় ‘জমি আছে ঘর নেই-নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের অধীন ৭’শ ৪৪ টি ঘরের মধ্যে তিনিও একটি ঘর পেয়েছেন । ঘর পেয়ে তিনি মহা খুশী । উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধা, পথ ভিক্ষুক চামেলী বেগমও এ প্রকল্পের আওতায় একটি ঘর পেয়েছেন । তিনি সারাদিন পথে পথে ভিক্ষা করে যখন বাড়িতে ফিরতেন তখন তাঁর আশ্রয় গ্রহন ও মাথা গোজার মতো ঠাই পর্যন্ত ছিলনা ।

তিনিও ঘর পেয়ে খুশী। টুপিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আরেকজন ষাটোর্ধ্ব হতদরিদ্র নুরজাহান বেগম তিনিও ঘর পেয়ে সুখী । সুবিধাভোগি পরিবারের লোকেরা পূর্বেই অবগত ছিলেন যে, তাদের বাড়িতে ঘর নির্মান করা হবে টিনের চাউনি, টিনের বেড়া ও সিমেন্টের খুটি দিয়ে এবং প্রতিটি ঘর নির্মানে বরাদ্ধ রয়েছে একলক্ষ টাকা । অথচ শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান উক্ত টাকায় টিনের বেড়া ও সিমেন্টের খুটির পরিবর্তে নির্মান করে দিলেন ইটের গাঁথুনি মানসম্মত পাকা দেয়াল ঘর। ভালমানের বসবাস উপযোগী ঘর পেয়ে সুবিধাভোগীরা খুশি । অতিসম্প্রতি মাগুরার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী আকবর,পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজোয়ান,উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান ও সহকারি কমিশনার(ভুমি) হাসিনা মমতাজ স্বরেজমীনে ঘরগুলি পরিদর্শন পূর্বক ৫’শ ২৮টি ঘর সুবিধাভাগী পরিবারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছেন।

তবে অবশিষ্ট ঘরগুলি কয়েক দিনের মধ্যেই ভুক্তভোগী পবিবারকে বুঝে দেওয়া হবে বলে জানা যায় । এবিষয়ে শ্রীপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মসিয়ার রহমান বলেন,এই কাজের সাথে উপজেলার সকল ইউপি চেয়ারম্যানগণ সংশ্লিষ্ট রয়েছেন । চেয়ারম্যানদের কাজের দেখ-ভাল করার দায়িত্বও রয়েছে। সদরের চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে প্রশাসনের পাশে থেকে এই কাজে যথেষ্ট সহযোগিতাও করতে হয়েছে। তবে ঘুরে –ফিরে যতটুকু দেখেছি ,শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার যে প্রক্রিয়ায় এই ঘরগুলি নির্মান করেছেন । তাতে ঘরগুলি দেখতে যেমন হয়েছে সুন্দর ও মানসম্মত, তেমনি হবে টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী । আমি মনে করি মাগুরার জেলার মধ্যে শ্রীপুর উপজেলাতে এ প্রকল্পের আওতায় সবচেয়ে ভাল কাজ হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান এবিষয়ে বলেন,এই ঘরগুলি নির্মান করতে সরকারি বরাদ্ধ ছাড়া সুবিধাভোগি পরিবারের নিকট থেকে সামান্যতম কোন সুযোগ-সুবিধা গ্রহন করা হয়নি । বরং এক লাখ টাকায় টিনের বেড়া,সিমেন্টের খুটির পরিবর্তে পাকা বাথরুমসহ,পাকা পোতা ,রং ও পলাষ্টার করা ইটের দেয়াল ঘর নির্মান করা বড়ই চ্যালেঞ্জের বিষয়। তারপরও বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া,জেলা প্রশাসক মহোদয়, ইউপি চেয়ারম্যানগণ,কাজের সাথে জড়িত কর্মকর্তাসহ স্থানীয় লোকজনদের সহযোগিতায় কাজটি সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।

মাগুরা জেলা প্রশাসক মোঃ আলী আকবর এলাকা পরিদর্শন করে ঘরের কাজ সম্পর্কে বলেন, সৎ সদিচ্ছা থাকলে সকল কাজেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব । দরকার সৎ সাহস ও মনোবল । একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইচ্ছা করলে এলাকায় অনেক ভাল ভাল কাজ করতে পারেন ।

ঘরগুলি দেখে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, যতটুকু দেখেছি ঘরগুলির নির্মান কাজ যথেষ্ট ভাল হয়েছে যা সাধারণ মানুষের মনকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও ভাল কাজ করতে গিয়ে ইউএনওকে অর্থনৈতিকভাবে একটু বেগ পেতে হয়েছে তারপরও বলব তিনিি যা করেছেন ভাল করেছেন ।

(ডিসি/এসপি/এপ্রিল ২০, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test