E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আদিবাসী নমিতার দেশসেরা খেলোয়াড় হওয়ার গল্প

২০১৯ এপ্রিল ২০ ২২:১০:১৮
আদিবাসী নমিতার দেশসেরা খেলোয়াড় হওয়ার গল্প

নড়াইল প্রতিনিধি : বাবা মাখন কর্মকার দিনমজুর। মা চায়না কর্মকার অন্যের বাসা বাড়িতে কাজ করেন। এই পরিবারের কিশোরী কন্যা নমিতা কর্মকার দেশসেরা খেলোয়াড়। এ বছর জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিজক্স জ্যাভলিন থ্রোতে (বর্ষা নিক্ষেপ) পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ছিনিয়ে নিয়েছেন স্বর্ণপদক। নারী হকি স্টিকে হয়েছেন ইতিহাসের অংশ।

নমিতা নড়াইলের লোহাগড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবে। লোহাগড়া পৌর শহরের কচুবাড়িয়ায় তাঁদের বসবাস। সাড়ে সাত শতাংশ জমির ওপর বসতভিটাই তাঁদের সম্বল। এখানে ছোট্ট দুটি ঝুপড়ি টিনের ঘর। অন্য কোনো জমিজমা নেই। নেই আর কোনো আয়।

বাবা মাখন কর্মকারের বয়স প্রায় ৬০। কানে শোনেন না। এক চোখে দেখেন না। মাজায় ব্যাথা। বুকে ব্যাথা। শরীরের নানা অসুস্থতায় কর্ম অক্ষম প্রায়। আগে ছিলেন কাঠুরে। এখন শক্ত পরিশ্রমের কাজ করতে পারেন না। তাই পানের বরজে কাজ করেন। কিন্তু এটি মৌসুমি কাজ। প্রায় ছয় মাস কাজ থাকে না। নভেম্বর থেকে কাজ নেই। তখন পরিবারের সদস্যদের নির্ভর করতে হয় নমিতার মায়ের ঝিয়ের কাজের ওপর।

অবশ্য বছর দুই হলো জ্যাভলিন খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনে (বিজেএমসি) যোগ দিয়েছেন নমিতা। বেতন পান সপ্তাহে ১৯০০ টাকা। এই টাকা সংসারে যোগ হয়।

মাখন কর্মকারের তৃতীয় সন্তান নমিতা। বড় দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। এখন পাঁচজনের সংসার। ছোট মেয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

নমিতা ৩৪তম জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে জ্যাভলিন থ্রোতে ৩৬ দশমিক ৩৬ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে স্বর্ণ জিতেছেন। এটিই এ যাবৎকালের দূরত্বের সর্বোচ্চ রেকর্ড। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গত ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এই অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় চাকতি নিক্ষেপে ও শটপুটে হয়েছেন দ্বিতীয়। ২০১৪ সাল থেকে জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে খেলে আসছেন নমিতা। নতুন রেকর্ড গড়ে অ্যাথলেটিকসে এখন জাতীয় পরিচিত মুখ জ্যাভলিনের স্বর্ণকন্যা নমিতা।

এদিকে নারী হকিতে এই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় করে নমিতারা হয়েছেন ইতিহাসের অংশ। দুই ম্যাচে ঢাকা একাদশের করা ৫ গোলের মধ্যে দুটিই এসেছে নমিতার স্টিক থেকে। গত ৭ ও ৮ নভেম্বর ঢাকার মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে ভারতের কলকাতা ওয়ারিয়র্সের সঙ্গে এই খেলা হয়। কলকাতা ওয়ারিয়র্স হলেও খেলোয়াড়েরা ভারতের উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খন্ড থেকে এসেছিলেন। কেবল অ্যাথলেটিকসেই নয়, হকি স্টিক হাতেও তিনি দুর্বর তার স্বাক্ষর রেখেছেন নড়াইলের কিশোরী নমিতা। গোল করেছেন, করিয়েছেনও। ঢাকা একাদশের সেরা পারফরমার হয়েছিলেন তিনি। দেশের নারী ক্রীড়াঙ্গন এবার নতুন করে চিনলো নমিতাকে।
‘ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক ছিল খেলাধুলায়। শুরু ফুটবল দিয়ে। অ্যাথলেটিকস হয়ে এখন হকিতে। আমি হকি নিয়েই এখন বেশি স্বপ্ন দেখি’, বলিছিলেন নমিতা। নমিতার স্বপ্ন, ‘দেশে একদিন হকিতে নারীদের জাতীয় দল হবে। সে দলে খেলবেন। ক্রিকেটের মতো বাংলাদেশকে নিয়ে যাবেন অনন্য উচ্চতায়।’

নমিতার খেলার হাতেখড়ি তাঁর বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক দিলীপ চক্রবর্তীর কাছে।

দিলীপ চক্রবর্তী বললেন, ‘হকিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। নিজের চেষ্টায় উঠছে নমিতা। নমিতাদের লালন করা গেলে হবে এ দেশের বড় সম্পদ।’

(আরএম/এসপি/এপ্রিল ২০, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test