E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হালুয়াঘাট থানায় বসে অন্তঃসত্ত্বার বিয়ে, আদালতে পাঁচজনের নামে মামলা

২০১৯ এপ্রিল ২৩ ১৮:৩৮:৫০
হালুয়াঘাট থানায় বসে অন্তঃসত্ত্বার বিয়ে, আদালতে পাঁচজনের নামে মামলা

জোটন চন্দ্র ঘোষ, হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানায় বসে তের বছরের এক ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীর সঙ্গে ধর্ষকের বিয়ে না দিয়ে অন্য যুবকের সাথে বিয়ে দেয়ার অভিযোগে গত ১৭ এপ্রিল ভুক্তভোগী কিশোরী বিজ্ঞ বিচারক,নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, ময়মনসিংহ আদালতে ধর্ষক ও সহযোগী এক ইউপি সদস্যার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা তিন জনসহ পাঁচ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। যাহার নং-৫১/২০১৯।

মামলার বিবরণে জানা যায়, উপজেলার কিসমত নড়াইল গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীর সাথে উপজেলার করুয়াপাড়া গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর পুত্র ধারা বাজারের তাহা কসমেটিকস দোকানের মালিক দুই সন্তানের জনক আলাল মিয়ার সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। পরে বিয়ের প্রলোভনে আলাল কিশোরীকে তার দোকানে নিয়ে প্রায় সময়েই ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরলে আলালকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় ঐ কিশোরী।

আলাল বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে কিশোরী তার গর্ভে থাকা সন্তানের পিতৃ-পরিচয়ের দাবিতে থানায় আলালের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করেন। কিন্ত গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যা তাছলিমা বেগম, হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম তালুকদারকে ভুল বুঝিয়ে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে প্রকৃত অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য উপজেলার বাউশা গ্রামের আক্তার উদ্দিন এর পুত্র হাফেজ ইলিয়াসকে থানায় ধরে এনে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে পাঁচ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করেন। স্থানীয় কাজীকে থানায় ডেকে কাবিন করে কিশোরীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়।

প্রকৃত ধর্ষককে আড়াঁল করে অপর ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেওয়ায়, ভোক্তভোগী কিশোরী সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও স্বামীর দাবী এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবীতে পাঁচজনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। থানায় গিয়ে ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা করতে বিলম্ব হইল বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। মামলাটির আইনজীবি এডভোকেট স্বপন কুমার চক্রবর্তী জানান, বিজ্ঞ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মি.এস,এম এরশাদুল আলম মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ময়মনসিংহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে নির্দেশ দেন। বিয়ের প্রায় দুইমাস পর গত ১৯ এপ্রিল উক্ত কিশোরী কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। এ বিষয়ে ভোক্তভোগী কিশোরী বলেন, তার কোন কথা না শুনেই থানার ওসি ও তাছলিমা হাফেজ ইলিয়াস এর সাথে থানায় বসে বিয়ে দেয়। প্রকৃত পক্ষে তার নবজাতক সন্তানটি হাফেজ ইলিয়াসের নয়।

নবজাতকটি কসমেটিকস দোকানের মালিক দুই সন্তানের জনক আলাল মিয়ার বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির জন্য আদালতে মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান। এ বিষয়ে ইলিয়াস বলেন, ‘তিনি এই ঘটনার সাথে জড়িত না। পুলিশ তাকে আটক করে থানায় আনার পর ওসি স্যার তাকে বিভিন্ন মামলার ভয় দেখিয়ে ৫ লক্ষ টাকা কাবিন মূলে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীকে তার সাথে বিয়ে দেয়। তিনি এ ঘটনায় মানহানিসহ অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছেন।

ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবী করেন। মামলার মূল বিবাদী আলাল মিয়া বলেন, তার বিরুদ্ধে উদ্যেশ্য প্রণোদিত হয়ে মিথ্যা রটনা চালানো হচ্ছে। এ ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান। এ বিষয়ে মুখ খোলতে নারাজ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার পিপিএম। এ ঘটনায় হালুয়াঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর পিপিএম বলেন, মেয়েটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইমামকে থানায় আনা হয়। পরে স্থানীয়রা আলোচনা স্বাপেক্ষে মেয়েটির বিয়ে দেন।

(জেসিজি/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test