E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরে ৯টি শকুন অবমুক্ত

২০১৯ এপ্রিল ২৩ ১৯:০১:০০
দিনাজপুরে ৯টি শকুন অবমুক্ত

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : প্রায় বিলুপ্ত হতে যাওয়া পরিবেশের পরমবন্ধু ৯চি শকুন উদ্ধার ও অবমুক্ত করা হয়েছে দিনাজপুরে। এই শকুনের নিরাপদ এলাকা নিশ্চিত করণ ও শকুন সংরক্ষণে সচেতনা বৃদ্ধিমুলক কর্মসূচীর আওতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে “শকুন উদ্ধার ও অবমুক্ত করণ বিষয়ক আলোচনা সভা।

অনুুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। এসময় উদ্ধারকৃত ৯টি শকুনকে সেবা পরিচর্যা দিয়ে উইংক ট্যাক পরিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ছেড়ে দেয়া হয়।

শকুন এক প্রকার পাখি। এটি মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে থাকে। পাখিগুলো তীক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী শিকারি পাখি বিশেষ।বিশালাকার গাছে সাধারণত শকুন বাসা বাঁধে। সারা বিশ্বে প্রায় ২৩ প্রজাতির শকুন দেখা যায়। এর মধ্যে ৬ প্রজাতির শকুন আমাদের দেশে রয়েছে। ৪ প্রজাতি স্থায়ী আর ২ প্রজাতি পরিযায়ী। শকুন বা বাংলা শকুন ছাড়াও এতে আছে রাজ শকুন, গ্রীফন শকুন বা ইউরেশীয় শকুন হিমালয়ী শকুন, সরুঠোঁট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন।

দেশে তিন প্রজাতির শকুন স্থায়ীভাবে বসবাস করত। এর মধ্যে এক প্রজাতি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির পথে দেশি প্রজাতির বাংলা শকুনও। শকুন অধিকাংশই বিপন্নপ্রায়। তাই এই শকুন দেখতে এখন মানুষ ভীর করছে।পাঠ্যপুস্তকে পড়লেও বাস্তবে শকুন দেখে বেশ আপ্লুত এ প্রজন্মের শিক্ষার্থরা। তারা শকুন দেকে নানা কথাও বলেছেন। শকুন যে উপকারি পাখি তা বুঝেছেন।

শকুনকে বলা হয় প্রকৃতি’র ঝাড়ুদার। তবে একসময় মানুষ মনে করতো শকুন পাখিটা অশুভ। অনেকে আবার মৃত্যুর প্রতীক হিসেবেও কল্পনা করতেন এটিকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, শকুন অশুভ তো নয়ই, হিংস্্রও নয়। চিল, ঈগল বা বাজপাখির মতো শিকারিও নয়। এটা আমাদের পরিবেশের পরম বন্ধু। মৃত পশু খেয়ে শকুন আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। শকুন কখনোই জীবিত মানুষকে আক্রমণ করে না।

গবাদিপশুর চিকিৎ্সায় ব্যথানাশক ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার শকুন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ওই ওষুধ ব্যবহার করা গরু ও ছাগলের মৃতদেহ ভক্ষণ করলে কিডনি নষ্ট হয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শকুন মারা যায়। বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে গবাদিপশুর চিকিতৎসায় ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। তবে কোথাও কোথাও এখনও ব্যবহার হয়।

অন্যদিকে ফসলের মাঠে কীটনাশক ও সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পানির দূষণ, খাদ্য সংকট, কবিরাজি ওষুধ তৈরিতে শকুনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার, বিমান-ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ, ঘুড়ির সুতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়া, ইউরিক অ্যাসিডের প্রভাবে বিভিন্ন রোগ, বাসস্থানের অভাব প্রভৃতি কারণ জড়িত রয়েছে। এমনটাই মরÍব্য করেছেন, চ্যানেল আই এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন পরিচালক মুকিত মজুমদার বাবু। তিনি বলেছেন,শকুনের বাসা বাঁধার স্থানের অভাবের জন্য তাদের বংশবৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমছে।

দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলো মিটার উত্তরে বীরগঞ্জ উপজেলার জাতীয় উদ্যান সিংড়া ফরেস্ট। প্রায় ৭’শ একর বিস্তৃত বিশাল বনভুমিতে উদ্ধারকৃত ৯টি শকুনকে সেবা পরিচর্যা দিয়ে উইংক ট্যাক পরিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ছেড়ে দেয়া হয়।

এই শকুনের নিরাপদ এলাকা নিশ্চিত করণ ও শকুন সংরক্ষণে সচেতনা বৃদ্ধিমুলক কর্মসূচীর আওতায় সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা সভা। আইইউসিএন বাংলাদেশ এবং বন বিভাগের উদ্যোগে “শকুন উদ্ধার ও অবমুক্ত করণ বিষয়ক এ আলোচনা সভায় শিক্ষার্থী,বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাজীবীর মানুষ অংশ নেয়।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড.বিল্লাল হোসেন, চ্যানেল আই এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন পরিচালক মুকিত মজুমদার বাব, বগুড়া অঞ্চলের রন সংরক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল সরকার, আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ড. রকিবুল আমিন, রংপুর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ, দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান, আইইউসিএন বাংলাদেশের কর্মকর্তা সারওয়ার আলম দিপু, দিনাজপুর রাম সাগর জাতীয় উদ্যানের ত্বত্তাবধায়ক রোটারিয়ান এস.এম.আব্দুস সালাম তুহিনসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতির পরমবন্ধু এই শকুন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই শকুনকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের দৃষ্টি দেয়ার পাশাপাশি জনসচেতনতারও তাগিদ দিচ্ছেন পরিবেশবিদ ও প্রকৃতি প্রেমিরা।

(এসএএস/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test