E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

চাষিদের পাওনা সাড়ে ১১ কোটি টাকা

রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের ৫ মাসের বেতন বাকী!

২০১৯ এপ্রিল ২৭ ১৫:০১:০৫
রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের ৫ মাসের বেতন বাকী!

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, (গাইবান্ধা) : অবশেষে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে কেজিতে ৫ টাকা কম দরে মজুদ ১লক্ষ মেট্রিক টন চিনি বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা (বিএসএফআইসি)। নির্ধারিত দর পাঁচশ’ কোটির স্থলে সাড়ে চারশ’ কোটি টাকায় এ চিনি বিক্রি করে রংপুর চিনিকলসহ সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন চিনিকলগুলোতে চাষীদের সরবরাহ করা আখের বকেয়া মূল্য ও শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী বকেয়া রয়েছে রংপুর চিনিকলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলার একমাত্র কৃষিভিত্তিক ভারিশিল্প কারখানা মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকলে আখ সরবরাহের চার মাসের মধ্যে সরবরাহ করা আখের সাড়ে ১৬ কোটি টাকার মধ্যে দুই কিস্তিতে পৌনে সাত কোটি টাকা পরিশোধ করা হলেও এখন পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে সাড়ে ১১ কোটি টাকা। গত নভেম্বরের পর থেকে এখনও পরিশোধ করা হয়নি এখানকার ৭শ’ ৮৭ জন শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতনভাতা। চলতি মাস (এপ্রিল) নিয়ে পাঁচ মাসে এ বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় কোটি টাকায়। এরফলে সরবরাহ করা আখের মূল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে আখ চাষ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন আখচাষিরা।

অন্যদিকে ধারদেনা করে ও চড়া সুদে বিভিন্ন এনজিও বা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। প্রতিদিন চিনিকলে এসে হাজিরা খাতায় সই করলেও কাজ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তারা।

এ সব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, বেসরকারী চিনিকলগুলোর সাথে প্রতিযোগিতার কারণে রংপুর চিনিকলসহ সকল সরকারি চিনিকলের উৎপাদিত চিনি বিক্রি না হওয়ায় টাকার অভাবে শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তার বেতন এবং চাষীদের পাওনা বিপুল অংকের টাকা পরিশোধ পরিশোধ করা যায়নি। তবে সরকারের হস্তক্ষেপে অচিরেই এ সমস্যার সমাধানে কাজ শুরু হয়েছে।

রংপুর চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের সাত ডিসেম্বর এ চিনিকলের ২০১৮-১৯ আখ মাড়াই মৌসুমের সূচনা করে এ বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭০ দিনে ৫৬ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করা হয়েছে ২ হাজার ২৪৩ মেট্রিক টন। মিলস গেটসহ আটটি সাবজোনের চাষীদের সরবরাহ করা এ আখের মূল্য ১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকার মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম সপ্তাহে সরবরাহ করা আখের মূল্য বাবদ চাষীদের মাত্র পৌনে দুই কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকী ১৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার মধ্যে গত ১১, ১২ ও ১৩ এপ্রিল ৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তবে শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের নভেম্বর মাসের পর থেকে বেতন-ভাতাও পরিশোধ করা হয়নি টাকার অভাবে। চলতি মাস (এপ্রিল) পর্যন্ত বেতন-ভাতার বকেয়া টাকার পরিমাণও দাঁড়িয়েছে ছয় কোটি টাকায়। এ ছাড়াও চিনিকলের নিজস্ব খামারের আখ উৎপাদন ও পরিচর্যার কাজ, ঠিকাদারের পাওনা, ভ্যাট-ট্যাক্সসহ রয়েছে প্রায় ছয় কোটি টাকা। এ সব কারণে বর্তমানে চিনিকলের সামগ্রিক কর্মকান্ড এক রকম স্থবির হয়ে পড়ছে।

জানা গেছে, কেবলমাত্র রংপুর চিনিকলের গুদামেই অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে ২২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা মূল্যের সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন চিনি। বিএসএফআইসির আওতাধীন অন্য চিনিকলগুলোতে বর্তমানে মজুদ আছে ৩৫০ কোটি টাকার ৭০ মেট্রিক টন চিনি। একই সাথে মজুদ আছে সংস্থার আমদানী করা পাঁচশ’ কোটি টাকার এক লক্ষ মেট্রিক টন চিনি। তবে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমদানীকরা এক লক্ষ মেট্রিক টন চিনি হ্রাসকৃত মূল্যে সাড়ে চারশ’ কোটি টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ইতিমধ্যে তা বিক্রি শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এ চিনি বিক্রি শেষ হলে বেতনভাতা ও চাষীদের পাওনা টাকা পরিশোধ করা হবে।

রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন আকন্দ এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উর্ধতন হস্তক্ষেপে দ্রুতই সমাধান হচ্ছে এ সমস্যার। দেশের বেসরকারী চিনিকলগুলোতে বিদেশী র-সুগার থেকে উৎপাদিত চিনির চেয়ে অনেক উন্নতমানের হওয়ায় ইতিমধ্যে বিএসএফআইসি কর্তৃক আমদানী করা চিনি বিক্রি শুরু হয়েছে। আসন্ন রোজার আগেই চাষীদের সরবরাহ করা আখের বকেয়া টাকার পাশাপাশি বেতন-ভাতার টাকাও প্রদান করা হবে শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের।

(এস/এসপি/এপ্রিল ২৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test