E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লোহাগড়ায় মাছের আকাল

২০১৯ মে ০৭ ২৩:৩৩:২৬
লোহাগড়ায় মাছের আকাল

নড়াইল প্রতিনিধি : মাছের বড্ড আকাল পড়েছে মাছ সমৃদ্ধ লোহাগড়া জনপদে। ১২ টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ১৫/২০ টি হাট-বাজারে মাছ নেই বললেই চলে। আর হাট-বাজারে যে মাছ মিলছে, তার মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। সব কিছু মিলে, চরম মৎস্য সংকটে জর্জারিত হয়ে পড়েছে এ জনপদের লক্ষাধিক খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুস্ক মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে লোহাগড়া জনপদের ছোট বড় খাল-বিল, হাওড়-বাওড় তথা জলাশয় গুলোতে মাছ নেই বললেই চলে। হাট-বাজারগুলো মৎস্য শুন্য হবার কারণে এ জনপদের লক্ষাধিক মানুষ আমিষ জাতীয় খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যার ফলে, নিত্য নৈমিত্তিক খাদ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। এহেন পরিবর্তনে জনজীবনে বাড়ছে নানা রোগব্যাধি।

আরও জানা গেছে, লোহাগড়া জনপদের উপর দিয়ে দুইটি নদী প্রবাহমান। উপনদী গুলো ভরাট হয়ে গেছে বহু বছর আগেই। চিত্রার আদুরি নদী নবগঙ্গা ও প্রমত্বা মধুমতি বিধৌত এ জনপদ। বর্তমান নবগঙ্গা নদী নাব্যতা ও গভীরতা হারিয়ে মানচিত্রে ঠাঁই নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চর পড়ায় নদীতে পানি নেই বললেই চলে। এ জনপদের মৃত প্রায়
নবগঙ্গা নদীর পাশাপাশি অসংখ্যা ছোট বড় বিল ও হাওড় রয়েছে। এক সময় এসব জলাশয় থেকে জনপদ বাসী মাছের সরবরাহ পেতো। মাছের জন্য মানুষের আর যাই হোক, অন্তত চিন্তা করতে হতো না। কিন্তু আবহাওয়াগত ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে এসব জলাশয়সমূহ আকার- আয়তনে ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। জলাশয় গুলো পানি শুন্য হয়ে পড়ার কারণে স্থানীয় জেলেরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর ভাবে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। যার ফলশ্রুতিতে, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মাছের উৎপাদন এবং একই সাথে মাছের দুষ্প্রাপ্যতা এমনই হয়েছে যে, হাট-বাজারে মাছ পাওয়া রীতিমত ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমশ মৎস্য সংকটের কারণে লোহাগড়া জনপদ আমিষবিহীন জনপদে পরিণত হতে চলেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে এ জনপদের হাট-বাজারে মাছের আকালের অন্য আরেকটি কারণ হল, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ। ফসল উৎপাদনের জন্য এক শ্রেণীর অশিক্ষিত কৃষক জমিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। যার প্রেক্ষিতে, মৎস্য জলাশয়সমূহ দূষিত হয়ে পড়েছে। জলাশয়ের পানি বিষাক্ত হবার কারণে মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধিও ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে এই জনপদের বাজার ব্যবস্থার উপর।

সোমবার সরেরজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদরে মাছের অভাব সবচেয়ে বেশি। উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ও প্রশাসনিক এলাকা লক্ষীপাশা ও লোহাগড়া বাজারে মাছের স্বাভাবিক সরবরাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বর্তমানে এই জনপদের এড়েন্দা, দিঘলিয়া, মহাজন, মানিকগঞ্জ, পাঁচুড়িয়া ও লাহুড়িয়াসহ অন্যান্য মাছ সমৃদ্ধ হাট-বাজারে যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে, তা খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে কিনে খাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। দ্বিগুন মূল্যে মাছ কেনার কথা শ্রমজীবী মানুষজন ভাবতেই পারছে না। এক শ্রেণীর মৎস্যজীবিরা সাতক্ষীরা, যশোর , খুলনার ফুলতলা, গোপালগঞ্জ
থেকে অধিক মুল্য দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ কিনে এনে লোহাগড়ার হাট- বাজারে তা বেশি দামে বিক্রি করছেন। বর্তমানে লোহাগড়ার হাট বাজারে কোল্ড ষ্টোরের ইলিশ মাছ কেজি প্রতি ৫০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ।

লক্ষীপাশা গ্রামের মাছ ব্যবসায়ি নেপাল বিশ্বাস (৩৭), গোপাল বিশ্বাস (৩৮), কুন্দশী গ্রামের কাত্তিক (৩৬) বলেন, প্রচন্ড রোদেও কারণে স্থানীয় জলাশয় গুলো দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এখানে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। বড় ধরনের বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত সহসাই এ সংকট দুর হবে না ।

মাছ বেশি পাওয়া যায় এমন ২/৩ টি হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে এ জনপদে মাছের আকাল চরম আকার ধারণ করেছে। স্বল্পবিত্ত আয়ের মানুষেরা খাদ্য তালিকা থেকে মাছ বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাছাড়া মাংসের বাজারও চড়া। অভাবী দরিদ্র লক্ষাধিক মানুষ আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে না পারায় পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।
বাড়ছে আমিয়ের অভাব জনিত রোগব্যাধি। বাজারে আগত ক্রেতা গোপিনাথপুর গ্রামের শাহিনুর রহমান (৪৫), জয়পুর গ্রামের শিক্ষক আমিনুর রহমান আমিন (৪৮), লক্ষীপাশা গ্রামের সৈয়দ কিবরিয়া (৪৩) ক্ষোভের সাথে জানান, টাকা দিয়েও ভালো মাছ কেনা যাচ্ছে না। এক কথায়, এক সময়ের মৎস্য সমৃদ্ধ লোহাগড়া জনপদে দিনদিন মৎস্য সম্পদ উজাড় হতে চলেছে। দেখা দিচ্ছে মাছের বড্ড আকাল।

(আরএম/এসপি/মে ০৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test