E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

গৌরীপুর শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ

২০১৯ মে ১৪ ১৯:০০:৩৭
গৌরীপুর শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে বদলী বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষক বদলীর ক্ষেত্রে ১৮টি অনিয়মের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিমের কাছে একটি লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন ধূরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কয়েস আল কায়কোবাদ লাজুক।

৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে ৩১মার্চ গৌরীপুর ছিল সাধারণ ছুটির দিন। ওই ছুটির দিনে সরকারি বিধিবিধান ভঙ্গ করে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একাধিক স্মারক ব্যবহার করে নিয়মবহি:র্ভূত বদলী ও অবমুক্তির আদেশ জারীর অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ ও শিক্ষকদের সূত্র জানায়, ৫৬টি বিদ্যালয়ে ২২জন প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ৯জন ও সহকারী শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) ৩১জনের পদ শূন্য ঘোষণা করে ২০ জানুয়ারি মধ্যে আবেদনের জন্য ২জানুয়ারি নোটিশ জারি করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার। কিন্তু ২০জানুয়ারির পরও ঘাটেরকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুবুর রহমান, লামাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুরাইয়া আক্তার এর আবেদন গ্রহণ করেন। এছাড়াও আরো একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে গোপনচুক্তিতে আবেদন গ্রহণ করেন তিনি।

৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে ৩১মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গৌরীপুর উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এদিন উপজেলা শিক্ষা অফিসার নির্বাচন কন্ট্রোলরুমের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নির্বাচন কন্ট্রোলরুমের দায়িত্বে থেকে এবং নির্বাচনে কর্তব্যরত শিক্ষকদেরকে ওইদিনই কর্মবিমুক্ত ঘোষণা করেছেন। প্রশ্ন রয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাজে নিজে নিয়োজিত থেকে আদেশ জারি এবং নির্বাচন কাজে নিয়োজিত শিক্ষকদের ওইদিন তিনি অবমুক্ত করতে পারেন কি না?

নিয়ম অনুযায়ী বদলীর আবেদনে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সুপারিশ বাধ্যতামূলক। গোপন বাণিজ্যের কারণে এ নিয়ম মানা হয়নি। যা দ্বারা চেইন অব কমা- নষ্ট হয়। পৌর শহরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, একজন শিক্ষকের বদলীতে যেখানে ২লাখ ৭০হাজার টাকা নেয় হয়। সেখানে সুপারিশ নেয়ার প্রয়োজন কোথায়?

বদলির আবেদন ডকেটভুক্ত করা হয়নি, তারিখ ও রিসিভ নেই। কোন বিদ্যালয়ের জন্য কারা আবেদন করেছেন তারও কোন তালিকা করা হয়নি। মানা হয়নি সিনিয়র-জুনিয়র নিয়মনীতি। বদলির ফাইল অফিসে না রেখে শিক্ষা অফিসার ময়মনসিংহের নিজের বাসায় নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। ৩১মার্চের মধ্যে বদলি কার্যক্রম শেষ করার বিধান থাকলেও বদলিকৃত অধিকাংশ শিক্ষক ১৫এপ্রিলের পর এসব বদলীর গোপন আদেশ প্রকাশ পায়।

এছাড়াও অফিস নথিতে রয়েছে অসংখ্য অনিয়মের চিত্র। ২৮মার্চের ১১১/২১১ স্মারকে গোলকপুরের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম রতনকে শেখ লেবু স্মৃতিতে বদলী প্রস্তাব, ওই স্মারকেই তাঁকে অবমুক্ত করেন। আবার একই স্মারকেই ভোলার আলগীর সহকারী শিক্ষক দিলরুবা নাসরিনকে বদলীর আদেশ দেন। এসব বদলীর আবেদন ও আদেশে অফিস সহকারীর অনুস্বাক্ষর নেই। এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, তিনি কাউকে কিছু না বলেই অফিসে আসেননি। বিষয়টি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তার জন্য তো কাজ বন্ধ করে রাখা যাবে না।

১৭৫নং স্মারকে সিধলা চারআনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আপ্তাব উদ্দিনকে চূড়ান্ত জিপিএফ এর অথরিটির জন্য উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে প্রেরণ করেন। একই স্মারকে তাত্রাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবেদা খাতুনকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় প্রস্তাব ও একই স্মারকে অবমুক্ত করেছেন। একই স্মারকে এমন অসংখ্য একাদিক বদলী ও অবমুক্ত করা হয়েছে। চিকিৎসা ছুটিতে থাকা সহকারি শিক্ষক শরফুল হায়দার বিদ্যুৎ ও ডিপিএড প্রশিক্ষণে থাকা সহকারি শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে বদলীর প্রস্তাব করেছেন। প্রত্যেকটি বদলীর জন্য লাখ টাকারও বেশী উৎকোচ নেয়া হয়েছে।

অপরদিকে অফিস সহকারী মো. বাসির উদ্দিন জানান, বদলির এসব নথিপত্র শিক্ষা অফিসার অফিসে রাখেননি। এসব আবেদন বা আদেশ আমার কোন অনুস্বাক্ষর বা অফিসিয়াল স্মারক ও বিধি, কাগজ কিছুই আমার জানা নেই।
কয়েস আল কায়কোবাদ লাজুক আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম খান। তিনি অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে বলেন, তিনি কি স্কুলে যান? এ শিক্ষক বিদ্যালয়ে যান না, ক্লাস নেন না। বদলি বাণিজ্যে কারা টাকা নিয়েছে তা অনুসন্ধান করুন। আমি কারো নিকট থেকে টাকা নিয়েছি এ কথা কেউ বলতে পারবে না।

সম্প্রতি শিক্ষা অফিসের নিয়োগকৃত ৬০জন দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী নিয়োগে চার কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ এনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে গৌরীপুর সচেতন নাগরিক সমাজ। এ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয় প্রতিটি বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী নিয়োগে ৫ থেকে ৮লাখ টাকা করে ঘুষ নেয়া হয়েছে।

এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহে উপকরণ মেলা, শিশুদের নাস্তার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগেরও সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। ভুলেভরা প্রশ্নপত্র নিয়ে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে গৌরীপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস। তদন্ত কমিটি একটি প্রশ্নে ‘৮৪টি’ ভুলের সন্ধান পায়।

শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিম। তিনি জানান, অভিযোগটি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে।

(এসআইএম/এসপি/মে ১৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test