E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজ সরকারিকরণ

আট শিক্ষকের পদ শূণ্য : সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা নিয়ে চরম হতাশায় অভিভাবকেরা

২০১৯ মে ২০ ১৮:০৯:৩৯
আট শিক্ষকের পদ শূণ্য : সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা নিয়ে চরম হতাশায় অভিভাবকেরা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একমাত্র ‘সরকারী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজ’এ অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, বাংলা বিভাগসহ আট জন শিক্ষকের পদ শুন্য থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহত।

অধ্যক্ষসহ শুণ্যপদে শিক্ষক প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা জীবন ফিরিয়ে দিতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ডিজি বরাবরে জোর আবেদন জানিয়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।

সূত্র মতে, কলেজ জাতীয় করণ ঘোষণার কারনে শিক্ষকদের শুন্য পদের বিপরীতে কলেজ কর্তৃপক্ষ আইনী বাধ্যবাধকতার কারণে শিক্ষক নিয়োগ করতে না পারায় নতুন শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অভিভাবকদের দেখা দিয়েছে চরম অনীহা। সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন নিয়ে চরম হতাশা ব্যক্ত করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মোবারক হোসেন জানান, প্রয়াত অধ্যক্ষ রমেশ চন্দ্র সাহা ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই অবসরে যাওয়ার পর থেকে গত ১০ বছর যাবত কলেজের অধ্যক্ষর পদ শুন্য রয়েছে। উপাধ্যক্ষ এসএম হেমায়েত উদ্দিন ওই বছর ১৫ জুলাই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্ব পালন শেষে আট বছর পর ২০১৬ সালের ১৯জুন অবসর গ্রহন করেন। সেই থেকে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষর পদ শুন্য রয়েছে।

হেমায়েত উদ্দিন অবসরে গেলে বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাস ওই বছর ২০ জুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দ্বায়িত্ব গ্রহন করেন। তিনি ২০১৭ সালের ১জানুয়ারি অবসর গ্রহন করেন। ওই বছর ২ জানুয়ারি বাংলা বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক কমলা রানী মন্ডল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্ব পালন শেষে চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল অবসর গ্রহন করেন। কমলা রানী মন্ডলের পরে ২৮এপ্রিল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্ব পান রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সিনিয়র শিক্ষক মোবারক হোসেন। তিনিও ১৪জুন অবসর গ্রহন করবেন।

কলেজ সুত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় ১৩শ’ ৬৫জন শিক্ষার্থী কলেজে অধ্যয়নরত রয়েছে।
কলেলেজের জেনারেল শাখায় ২৬জন শিক্ষক, অফিস সহায়কসহ ৯জন নিয়মিত কর্মচারী ও মাষ্টার রোলে ৯জন কর্মচারী থাকলেও পাঠদানের প্রধান শাখাগুলো রয়েছে শিক্ষক শুন্য।

শিক্ষক শুন্য পদগুলোর মধ্যে রয়েছে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, বাংলা, পদার্থ বিদ্যা, জীব বিদ্যা, সমাজ বিজ্ঞান, দর্শণ ও ইতিহাসসহ মোট আটটি। কলেজটিতে এক সময়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি চাপের কারণে বোর্ড মানবিক শাখায় বাড়তি কোটা অনুমোদন করে। বর্তমানে দেড়শ শিক্ষার্থীর বিপরীতে আড়াইশ কোটা রয়েছে। বিজ্ঞান ও বানিজ্য বিভাগে দেড়শ শিক্ষার্থীর কোটা থাকলেও শিক্ষক স্বল্পতার কারনে এবছর ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী দিয়ে কোটা পুরণ করা যাবে না বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

১৯৯৮ সালের ১০ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে কলেজের নামকরণ করা হয় “শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রি কলেজ।”

২০১৮ সালের ৮আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ফুফা “শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের নামে কলেজটিকে জাতীয় করণের অনুমতি প্রদান করেন। উপজেলাবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পুরণ হলেও এরই মধ্যে অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের শুন্যপদে আইনী জটিলতার কারণে শিক্ষক নিয়োগ দিতে না পারায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত পাঠদান চরমভাবে বিঘিœত হয়ে আসছে।

সংশ্লিষ্ট কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিলাঞ্চলের জনগনকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি ও মন্ত্রী পদ মর্যাদায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি’র বাবা সাবেক মন্ত্রী শহীদ আ. রব সেরনিয়াবাতের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মতিয়ার রহমান তালুকদার, স্বর্গীয় শিক্ষানুরাগী বিভুতি ভুষণ বিশ্বাস, স্বর্গীয় আওয়ামী লীগ নেতা অতুল চন্দ্র মালাকার, নওয়াব আলী ফকির, তপন কুমার বিশ্বাস, ওহাব আলী ফকির ১৯৭২ সালে “বাংলাদেশ মহাবিদ্যালয়” নামে বর্তমান শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর ১৯৭৪ সালে কলেজটি সরকারী মঞ্জুরী প্রাপ্ত হয়।

’৭৫-এর ১৫ আগষ্ট ক্যুর মাধ্যমে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “আগৈলঝাড়া মহাবিদ্যালয়।” ১৯৮২ সালে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে পুনরায় কলেজটি সরকারীকরণের আশায় নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “পল্লীবন্ধু এরশাদ কলেজ”। যদিও সাইন বোর্ড ছাড়া এই নামটি কোন কাগজ কলমে কখনওই ছিলনা। এরশাদ পতনের রাতে পূর্বের নাম মুছে দিয়ে কলেজের নামকরণ হয় “আগৈলঝাড়া ডিগ্রি কলেজ”। ৮৪-৮৫ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতিক্রমে ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয় কলেজটিতে।

কলেজের সভাপতির দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস শিক্ষক শুন্যতার কারনে লেখাপড়া বিঘ্নিতর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জরুরীভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য তিনি প্রায় দুই মাস আগে ডিজি (মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা) কে পত্র প্রেরণ করেছেন। সরকারী আত্মীকরণ দেরীর কারণে মুলত শিক্ষক সংকটরে সমাধান হচ্ছে না। বিষয়টি স্থানীয় এমপি মহোদয় আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।

মন্ত্রী পদ মর্যাদায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র বরাত দিয়ে তার একান্ত সচিব মো. খায়রুল বাশার জানান, খুব শিঘ্রই ডিজি’র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(টিবি/এসপি/মে ২০, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test