E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বৃহস্পতিবার নড়াইলের ইতনা গণহত্যা দিবস

২০১৯ মে ২২ ২৩:২৫:২১
বৃহস্পতিবার নড়াইলের ইতনা গণহত্যা দিবস

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : আজ ২৩ মে । নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গণহত্যার ৪৮তম বার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক-হানাদার বাহিনী লোহাগড়া উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ইতনা গ্রামে একের পর এক ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শিশুসহ হত্যা করে হিরু মাস্টার, সফিউদ্দিন মোল্যা, তবি শেখ, হাদি সিকদার, নালু খাঁসহ ৩৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে। 

বিষাদময় সেইদিনের কথা মনে করে এ অঞ্চলের মানুষ আজও আতকে ওঠেন। চোখের জলে বুক ভাসান স্বজনেরা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও শহীদদের কবর গুলো চিহিৃত করা হয়নি। শুধু তাই নয়, স্বীকৃতি মেলেনি শহীদ পরিবার গুলোর। এ সব শহীদ পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে মানবেতর ভাবে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

তবে, ইতনা গণগ্রন্থাগারের পরিকল্পনায় এবং শেখ সিরাজ ইশতিয়াক আফছার উদ্দিন ট্রাস্টের সহযোগিতায় ১৯৯৪ সালের ২৩ মে ইতনা স্কুল ও কলেজের পাশে ৩৯ জনের ‘নামফলক’ স্থাপিত হয়েছে মাত্র।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে মধুমতি নদী তীরবর্তী পাশাপাশি দুই গ্রাম ইতনা ও চরভাটপাড়া গ্রামে বসেই মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা করতো। পাক বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান আঁচ করতে পেরে ১৯৭১ সালের ২২ মে দুপুরে চরভাটপাড়া গ্রামে হানা দিয়ে নিরীহ মানুষজনের ওপর হামলা-নির্যাতন শুরু করে।

এ সময়ে মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং হানাদার বাহিনীর সঙ্গে শুরু হয় যুদ্ধ। প্রাায় দুই ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধে চারজন পাক সেনা ও ১৪ মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। এক পর্যায়ে পাক-সেনারা পিছু হটার সময় ইতনা গ্রামের অনিল কাপালি নামে এক সাহসী ব্যক্তি এক পাক-সেনার কাছ থেকে রাইফেল কেড়ে নিয়ে পাশের মধুমতি নদীতে ফেলে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।

এ ঘটনার পর ভাটিয়াপাড়া ক্যাম্পের পাক হানাদার বাহিনী হিংস্র রূপ ধারণ করে। তারা চরভাটপাড়া গ্রামের অনিল কাপালিকে খুঁজতে থাকে। তখন প্রাণের ভয়ে চরভাটপাড়ার মানুষজন জানিয়ে দেয়, অনিল কাপালির বাড়ি মধুমতি নদীর পূর্ব পাড়ের ইতনা গ্রামে। অনিল কাপালিকে ধরার জন্য পাক বাহিনী গানবোটে চেপে ২৩ মে ভোরে ফজরের আজানের সময় ইতনা গ্রামে প্রবেশ করে এ জঘন্য বর্বর গণহত্যা শুরু করে।

এই হামলায় শিশুসহ ৩৯ জন নারী-পুরুষ হত্যার শিকার হন। ২৩ মে ইতনা গ্রাম প্রেতপুরীতে পরিণত হয়। নিহতদের কবর দেওয়ার মতো কোনো লোক ইতনা গ্রামে ছিল না। রাতে গোপনে নিহতদের নিকট আত্মীয়-স্বজনেরা ৩৯ জনকে গ্রামের বিভিন্ন স্থানে গণকবর দিয়ে প্রাণভয়ে অন্যত্র পালিয়ে যান।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শিক্ষক আতাউর রহমান ফিরোজ জানান, ২৩ মে ভোররাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নির্বিচারে হত্যা করে ইতনা গ্রামের শেখ হাফিজুর রহমান হিরু, সৈয়দ শওকত আলী, সৈয়দ কওছার আলী, সৈয়দ এসমত আলী, সৈয়দ মোশাররফ আলী, শেখ তবিবর রহমান (তবি), সিকদার ওয়ালিয়ার রহমান, শিকদার হাবিবুর রহমানসহ ৩৯ জন মুক্তিকামী মানুষকে। এ সময় তারা কয়েক'শ বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগও করে। ইতনা গণহত্যা দিবস সরণে ইতনা গণগ্রন্থাগারের উদ্যোগে কোরআনখানি, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়েজন করা হয়েছে।।

(আরএম/এসপি/মে ২২, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test