E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে চলছে শরীয়তপুরে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ

২০১৯ মে ২৬ ১৬:৩৭:৫৪
সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে চলছে শরীয়তপুরে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : গত ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে সরকারি পর্যায়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে বোরো ধান ও মিল মালিকদের থেকে চাল ক্রয় কর্মসূচি।

ধান-চাল ক্রয়ের শুরুতেই লক্ষ্য করা গেছে সীমাহীন অনিয়ম ও দূর্নীতির চিত্র। শরীয়তপুর সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া খাদ্যগুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তার সহকারি মিলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নিষেধাজ্ঞা অনাম্য করে মানসম্মত নয় এমন চাল নিয়মবহির্ভূতভাবে গুদামজাত করার তথ্য পাওয়া গেছে। ধান ক্রয়ের ক্ষেত্রেও প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে কালো বাজারী চক্রের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মমৌসুমে শরীয়তপুর জেলায় ১ হাজার ৬ শত ১৩ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৭৪০ মেট্রিক টন বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কর্মসূচির আওতায় শরীয়তপুর সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া খাদ্য গুদামে সংগ্রহ করা হচ্ছে ৩৫৫ মেট্রিক টন চাল এবং ১৬৭ মেট্রিক টন ধান। চাল সংগ্রহের জন্য আঙ্গারিয়া খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ খান রাইচ মিল ও সোনালী রাইচ মিল নামে দুইটি চাল কল মালিকের নামে ৩৫৫ টন চাল বরাদ্দ দিয়ে তা সংগ্রহ করছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আভ্যন্তরিণ খাদ্য শস্য সংগ্রহ নীতিমালা ২০১৭ এবং চাল সংগ্রহ ও নিয়ন্ত্রণ আদেশ ২০০৮ এর নিয়ম পরিপন্থী উপায়ে চাল সংগ্রহ করছেন খাদ্য গ্রদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ আলম ও উপ-সহকারি খাদ্য পরিদর্শক ইকবাল মোল্যা। নীতিমালায় সুস্পষ্ট বলা হয়েছে, চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে মিলিং লাইসেন্স ও ফুড গ্রেইন লাইসেন্সধারী প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সম্পন্ন সচল মিল চুক্তিযোগ্য হবে। সেখানে বলা আছে যে সকল মিলে বয়লার ও চিমনি নেই সেই সব হাস্কিং মিলের সাথে চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তি করা যাবে না। মিল মালিকদের প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় হতে প্রাপ্ত সনদ থাকতে হবে।

অথচ আংগারিয়া বাজারে অবস্থিত মতিউর রহমান খানের খান রাইচ মিল ও আবুল কালাম তালুকদারের সোনালী রাইচ মিল থেকে ৩৫৫ টন চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে শতভাগ অনিয়ম এর মাধ্যমে। সরেজমিনে দেখা গেছে, উল্লেখিত দুটি চালকলে কোন বয়রাল ও চিমনি নেই। প্রধান বয়লার পরিদর্শকের সনদের কোন কাগজ নেই। মিলগুলোতে শর্তানুয়ায়ী গুদাম নেই। খাদ্যগুদাম থেকে সরবরাহকৃত খাদ্য অধিদপ্তরের সীলমোহরযুক্ত বস্তাও পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট চালকলে। তারপরেও গত ২১ মে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চুক্তির প্রথম কিস্তি ৫৩ টন চাল দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদ্বয় গুদামজাত করেছে বলে জানা গেছে। শুধু আঙ্গারিয়া খাদ্য গুদামই নয় জেলার অন্যান্য উপজেলার চিত্রও প্রায় একই রকম।

অনিয়মের বিষয়ে জানার জন্য আঙ্গারিয়া খাদ্য গুদামে গিয়ে প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। উল্লেখিত দুজন কর্মকর্র্তাকে শতাধিকবার ফোন দিয়েও তাদের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। গুদামের ফটকে পাহারারত দারোয়ানদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানিয়েছে, গুদামের ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দিতে বারণ করা হয়েছে।

এদিকে গত ২২ মে আঙ্গারিয়া খাদ্যগুদামে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ। প্রথম দিনেই জেলা প্রশাসক যার কাছ থেকে ১২ মন ধান ক্রয় করে কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন সেই আনোয়ার হোসেন মোল্যা প্রকৃত কৃষক নন। তিনি খাদ্য গুদামের উপ-সহকারি পরিদর্শক ইকবাল মোল্যার আপন বড় ভাই। কৃষি বিভাগ থেকে প্রদত্ত কৃষক তালিকায় দেখা গেছে ইকবাল মোল্যার আপন তিন ভাই সহ বেশ কয়েকজন স্বজনের নাম দেয়া হয়েছে ধান চাষির তালিকায়। যাদের একজনও কৃষক নয় এমনকি তাদের কারো ন্যুনতম কৃষি জমি নেই।

জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি অফিসার প্রদীপ কুমার শিকদার ও আব্দুল ওহাব মিয়া কালো বাজারী চক্র ও খাদ্য বিভাগের কর্মচারি ইকবাল মোল্যার কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহন করে অসংখ্য অবৈধ ও ভূয়া কৃষকের নামে তালিকা প্রনয়ন করেছে এবং তাদের কাছ থেকেই ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে।

আঙ্গারিয়া বাজারের চাল কল মালিক আবুল কালাম তালুকদার বলেন, আমি গত ৪০ বছর আগে সোনালী রাইচ এন্ড ফ্লাওয়ার মিল প্রতিষ্ঠা করি। আমার মিলের নামে জনৈক ব্যবসায়ী টাকা খরচ করে লাইসেন্স করেন। আমি কখনো গুদামে চাল দেইনা। আমার মিল সরকারি নিয়ম মেনে চাল উৎপাদনে অনুপোযোগি।

তিনি আরো বলেন, শুনেছি এবছরও ১৫৫ টন চাল আমার মিলের নামে বরাদ্দ পেয়েছে। ২৩ টন চাল গুদামে দেয়ার জন্য আমার কাছ থেকে নির্ধারিত কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন ব্যবসায়ী আব্দুর রব হাওলাদার। কিন্তু আমার মিল থেকে এক ছটাক চাউলও দেয়া হয়নি। যতটুকু শুনেছি ঝিনাইদাহ জেলা থেকে চাল ক্রয় করে তা গুদামে দেয়া হয়েছে।

নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে মর্মে এই প্রতিবেদক একাধিকবার শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা খাদ্য কমিটির সভাপতি মো. মাহবুর রহমান শেখকে বিষয়টি অবহিত করার পরে তিনি জানিয়েছেন, খাদ্য গুদাম পরিদর্শণ করে কোথাও কোন অনিয়ম বা অসঙ্গতি থাকলে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করেবন।

শরীয়তপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক খন্দকা নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, গত ২১ মে সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমার কাছে সংগৃহিত চালের নমুনা পাঠিয়েছিল। সেই চাল মানসম্মত না হওয়ায় আমি বাতিল করে দিয়ে ফেরৎ পািঠয়েছি। স্পষ্টভাবে আমি বলে দিয়েছি, কোন খারাপ চাউল আমি ক্রয় করবনা। সরকারি নিয়মের বাইরে কোন চাল গুদামে গ্রহন করলে সেই চালের মূল্য আমি পরিশোধ করবনা। তারপরেও কিভাবে চাল গুদামে প্রবেশ করিয়েছে সে বিষয়ে আমার ধারনা নেই।

(কেএনআই/এসপি/মে ২৬, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test