E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ

২০১৯ জুন ০২ ১৫:৪১:৫৮
অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : ঘরের দোতলার বিছানায় এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দোলার ব্যবহারের জামা কাপড়। বেড়ায় শোভা পাচ্ছে দোলা ও সম্রাটের বিবাহ বার্ষিকীর হাস্যোজ্বল ছবি। বিছানার পাশের ঠাকুর ঘর। সদ্য নির্মান করা ঘরে একটু একটু করে নিজের সংসার সাজাতে ছিলেন দোলা। ভালবেসে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িকেই নিজের করে নিয়েছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা দোলা। তিন মাস পর সন্তান পৃথিবীতে আসবে এ অন্তঃসুখে সদা হাস্যোজ্বল দোলা শত নির্যাতন ও বঞ্চনা মুখ বুজে সইতো। কিন্তু সন্তানের মুখ দেখার আগেই সাজানো সংসার ছেড়ে তাকেই চলে যেতে হয়েছে। পরিবারের দাবি দোলাকে মারধর করে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করছে স্বামী ও শ্বশুড় বাড়ির লোকজন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করছে দোলার শাশুড়ি।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের চিংগড়িয়া এলাকার বাবুল কর্মকারের ছেলে সম্রাট কর্মকারের সাথে দুই বছর আগে ভালবেসে বিয়ে হয় পৌর শহরের রহমতপুর এলাকার শ্যামল কর্মকারের মেয়ে দোলার সাথে। প্রথমে পরিবার বিয়েতে রাজি না থাকলেও ভালবাসার কাছে হার মেনে দোলার বাবা-মা বিয়েতে রাজি হয়।

গত ২৪ মে নিজ ঘরের দোতলা থেকে সাত মাসের অন্তঃসত্বা দোলার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে দোলার স্বামী । তাদের দাবি দোলা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দোলার মৃতদেহ শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পায়।

শনিবার দুপুরে কলাপাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দোলার কাকা শিক্ষক অমল কর্মকার অভিযোগ করেন, দোলা ছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্বা। দোলার স্বামী সম্রাট দোলাকে তলপেটে লাথি মেরে। এতে দোলা চিৎকার ও আর্তনাদ করলে স্বামী ও তার শাশুড়ী সাধনা রানী বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে দোলাকে। এরপর গলায় ওড়না পেচিয়ে দোলাকে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখে।

দোলার বাবা শ্যামল কর্মকার বলেন, তার মেয়েকে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য প্রায়ই নির্যাতন করতো। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ হয়েছে। কিন্তু নির্যাতন থেমে থাকেনি। তার মেয়েকে তাদের বাসায়ও যেতে দিতো না। তারা মোবাইল কিনে দিলেও তা ব্যবহার করতে পারতো না। এ কারনে শত নির্যাতন হলেও তাদের জানাতে পারতো না দোলা।

দোলার মা কল্পনা রানী কর্মকার বলেন, কোন অন্তঃসত্বা মা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনায় ২৪ মে রাতে কলাপাড়া থানায় ইউডি মামলা হয়েছে। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছে। কিন্তু মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে গত ৩০ মে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে দোলার মা কল্পনা রানী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় দোলার স্বামী সম্রাট কর্মকার, শাশুড়ী সাধনা কর্মকার, শ্বশুর বাবুল কর্মকার, ভাসুর গবিন্দ কর্মকার, মামা শ্বশুড় গৌতম কর্মকার ও মামাতো ভাই নিত্য কর্মকারকে আসামী করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে দোলার শ্বাশুড়ী সাধনা কর্মকার বলেন, যেদিন দোলা আত্মহত্যা করেছে সেদিন তারা কেউই বাসায় ছিলেন না। মানুষের কাছ থেকে খবর পেয়ে তারা বাসায় এসে দেখেন তার পুত্রবধূ আত্মহত্যা করেছে। তারা কখনও নির্যাতন কিংবা যৌতুকের জন্য কোন চাপ দেননি।

কলাপাড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, দোলার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই জানা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। তবে পটুয়াখালী দায়ের করা মামলার আদেশ কপি এখনও তারা পাননি। আদালতের আদেশ কপি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে দোলার মৃত্যুর ঘটনায় দোলার সহপাঠী ও এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ। তারা একজন অন্তঃসত্বা মায়ের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তারা এ মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

(এমকেআর/এসপি/জুন ০২, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test