E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রংপুরের পত্রিকা হকারদের ঈদ ভাবনা

২০১৯ জুন ০৩ ২২:৫৬:৩৩
রংপুরের পত্রিকা হকারদের ঈদ ভাবনা

রংপুর প্রতিনিধি : ‘রানার ছুটেছে তাই ঝুমঝুম ঘন্টা বাজছে রাতে, রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে। রাত্রির পথে পথে চলে কোন নিষেধ জানে না মানার, দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার- কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার। রানার ! রানার ! রানার ! জানা অজানার বোঝা আজ তার কাঁধে, বোঝাই জাহাজ রানার চলেছে চিঠি আর সংবাদে; রানার চলেছে, রানার ! যদি ভোর হয়. আরো জোরে, এ রানার দুর্বার দুর্জয়।... রানার ! রানার ! রানার ! হ্যা, দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোর হকারদের কথা ভেবে বলছিলাম কবি সুকান্ত ভট্রাচার্যের ‘রানার’ কবিতার কথাই। পত্রিকার এই হকারারও যেন এক রানারই। ... ‘শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে; হাতে লণ্ঠন জোনাকিরা দেয় আলো, মাভৈ: রানার ! এখনো রাতের কালো’। হ্যা, রাতের কালোই হোক আর ভোর বৃষ্টি ঝঞ্জাই হোক রানারকে পৌঁছুতেই হবে সকালের শহরে। তুলে দিতে হবে মানুষের হাতে গতরাতের লেখা সবশেষ সংবাদ।  

হকার। হকারের রয়েছে নানা রকমফের। কিন্তু প্রতিটি হকারেরই জীবন চিত্রটা একটু একটু ভিন্ন। প্রাত:ভ্রমন শেষে প্রেসক্লাব চত্বরে পা রাখতেই কানে এলো ‘কবি সাহিত্যিকদের ঈদ ভাবনা’। মাথা ঘুরে তাকাতেই দেখি একটি জাতীয় দৈনিকের বিশেষ সংখ্যা হাতে নিয়ে একজন পত্রিকা হকারের কণ্ঠস্বর এটি। আমায় দেখে অনেকটা আক্ষেপ করেই বললেন, ‘ঈদ বা কোন উৎসব এলেই প্রায় পত্রিকাতেই দেখি কবি, সাহিত্যিক, তারকা আর রাজনীতিকদের ঈদ ভাবনা’ নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট হয়। আর সে রির্পোট আমরা পৌঁছে দেই পাঠকের দ্বোরগোড়ায়। কিন্তু আমাদের ঈদ ভাবনা কিংবা জীবনচিত্র নিয়ে লেখে না কেউই। ঈদের দিনেও স্ত্রী সন্তান নিয়ে কী করে কাটে আমাদের দিন সে খবর রাখে কজন?

হ্যা, কেইবা রাখে কার খবর। আর তাইতো আগ্রহ জাগলো ঈদের দিনে কেমন কাটে হকারদের জীবন তা জানার।
জীবিতদের মধ্যে রংপুরের সবচে প্রবীণ হকার এখন এজেন্সেীর ব্যবসা করেন তোফাজ্জাল হোসেন মজনু। মুক্তিযুদ্ধের অনেক থেকেই এ পেশায় জড়িত তিনি। অসুস্থতার করণে তার এক ছেলেই এখন দেখে এজেন্সী। ঈদের নামাজ সেরে বাসায় নাতি নাতিদের সাথেই তিনি কাটান দিনটি। কখনো বেড়ান আত্মীয় স্বজনের বাসায়। তারপরই আসেন কিসমত আলী। আজ থেকে ৫বছর আগে দৈনিক আজাদের বিট পিয়ন ছিলেন তিনি। এখন হকারী এবং এজেন্সী দুটোই চালান তিনি। জানালেন, ঈদ কী আর স্বাভাবিক দিন কী? প্রতিদিনই সমান তার কাছে। প্রতিরাতেই নির্ধারিত সময়ে শুয়ে পড়ে স্বপ্ন দেখেন ভোরের আলো উঠবে কখন,। শুরু হবে কর্ম। একাধাওে বেশ কয়েকটি পত্রিকার এজেন্ট তিনি।

জানালেন , রোদ ঝড় বৃষ্টি কোন বাধাই আটকে রাখতে পারে না তাকে। এ যেন তার দায়িত্বের পাশাপাশি নেশায় পরিণত হয়েছে। ঈদের তিনদিনের ছুটিই ঘওে বসে কষ্টে কাটে তার। তিনি জানান, এখন পত্রিকার দাম বেশি কমিশন কম। তাই কমিশন বাড়ানো উচিত। রবিউল ইসলাম রবিও এখন প্রবীণ হকার ও নাট্য শিল্পী। বিগত ৫২ বছর থেকে থেকে প্রত্রিকা হকারের ব্যবসা কওে আসছেন তিনি।

জানালেন, ঈদের দিনগুলোই কষ্টে কাটে তার। কারণ সকালে উঠেই বাইসাইকেলে চেপে প্রেসক্লাবে যাত্রা। এখানেই দেশের সকল পত্রিকা এসে নামে। একত্তুরের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও চুপিসারে পত্রিকা বেচেছেন তিনি। এতকালের এই নেশা ঈদের এই তিনদিন তাকে কষ্টে রাখে। তারপরও নাতি নাতনিদের নিয়ে ঘুড়ে বেড়ানোতেও কিছুটা আনন্দ পান তিনি।

৩২ বছর ধরে এ পেশায় থাকা আব্দুর রউফ জানালেন, ১’শ কাগজ বিলি করতে করতে সময় লাগে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা। বিল্ডিং বাড়িতে উঠলে কখনও এসে দেখি সাইকেল নেই। চুরি হয়ে গেছে। আবার দেরি হলে কাষ্টমমারের গালমন্দতো আছেই। তারপরও ঈদের দিনটাকে উপভোগ করি বন্ধু বান্ধবদের সাথে। তবে দু:খ একটাই ঈদ বা পর্বনের দিনেও পত্রিকা কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের জন্য কোন সহযোগিতা তো দুরের কথা, একটা যুক্ত শুভেচ্ছা বার্তাও পাই না। ৫৫ বছরের লাবু মিয়া হকারীর সাথে যুক্ত ২০ বছর ধরে।

জানালেন, আমরা ট্রেড ইউনিয়নভূক্ত হলেও শ্রমিক হিসেবে কোন সুুযোগ সুবিধা পাইনা। ঈদের দিন ঈদে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে একটু ভিন্নতার সাথেই কেটে যায় দিনগুলো। ৫২ বছরের জাকির হোসেন ৭৫ সালে এ পেশায় আসেন বাবার হাত ধরে। এখন তার নেশা এটি। সকালে প্রেসক্লাব এলাকায় না এলে ভালই লাগে না। তাই ঈদেও নামাজ শেষে বাসায় একটু সেমাই মুখে দিয়েই চলে আসেন ক্লাব এলাকায় এখানেই চলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা। এমনি আরও আরো অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেল, ঈদের আনন্দ খুব একটা স্পর্শ করেনা তাদের।তবে ভাল লাগে অনেকদিন পর একে অপরের সথে এক সাথে নামাজ শেষে কোলাকুলি করার বিষয়টা।

(এম/এসপি/জুন ০৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test