E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাশ করে এমবিবিএস ডাক্তার মাছুদুল হক!

২০১৯ জুন ১৭ ১৫:১৮:২২
মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাশ করে এমবিবিএস ডাক্তার মাছুদুল হক!

দীপক চক্রবর্তী, মাগুরা : মাসুদুল হক নামে এইচএসসি পাশ এক ব্যক্তি এমবিবিএস চিকিৎসক পরিচয়ে অস্ত্রোপচারসহ নানা চিকিৎসা কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে মাগুরা ক্লিনিক মালিক সমিতি। রোববার দুপুরে তারা এ স্মারকলিপি প্রদান করেন । 

মাগুরা ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আহমেদের অভিযোগ , মাসুদুল হক নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ মাগুরায় অস্ত্রোপচারসহ নানা অপচিকিৎসা চালিয়ে আসছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি চিকিৎসক নয়। তিনি নিজেকে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী হিসেবে পরিচয় দেবার পাশাপাশি পিজিটি, সিডিডি সার্জন এ ধরণের যোগ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন।

তিনি আসলে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাশ। পরে ১৫ বছর রাশিয়ায় থেকে একটি ডিপ্লোমা সনদ জোগাড় করেছে। দেশে ফিরে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয়ে অস্ত্রোপচারসহ নানা প্রকার চিকিৎসা শুরু করে । তার ভুল অস্ত্রোপচারে অসংখ্য রোগী মারা গেছে। অনেকে জটিল অসুস্থায় ভুগছে। ২০০৫ সালে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে এক রোগীর খাদ্য নালিতে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তার একটি নাড়ি কেটে গেলে ক্ষত স্থান পলিথিন পেপার দিয়ে বেধে দেয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। ডাক্তার পুন: অস্ত্রোপচার করে ঐ পলিথিন উদ্ধার করে।

এ সময় মাসুদুল হককে পলিথিন ডাক্তার হিসেবে উল্লেখ করে পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হয়। যার সূত্র ধরে স্থানীয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তাকে জেল হাজতে পাঠায় । পরে জামিতে মুক্ত পেয়ে ২০০৬ সালে ড্যাবের সদস্য পদ নেয় ও বিএমডিএস ঢাকায় চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধিত হয় । যার নম্বর-এ-৪৩২১৪ তাং ১২.০৯.০৬। এই নিবন্ধনের পর সে মাগুরায় এসে মাগুরা ডায়াবেটিক হাসপাতালের চিকিৎসক হিসাবে যোগদান করে । এখনো সেখানেই কর্মরত আছেন।

পাশাপাশি বিগত সময়ের অপকর্মে উপার্জিত অর্থে মাগুরা সদর হাসপাতালের পূর্বদিকে ১০ তলা ভবন নির্মান করে তৈরি করেছেন নিজস্ব ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট স্থাপন করেছে । সেখানে এমন কোন অস্ত্রপচার নেই তিনি করছেন না । তার ভুল অস্ত্রপচারে বহু মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এমনকি মারা গেছে । অন্যদিকে তার নিজের টাকায় পোষা পেশি শক্তি ও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমে পার পেয়ে যান ।

ক্লিনিক মালিক সমিতির অভিযোগ, ২০১২ সাল থেকে শুরু করে বিগত ৭ বছরে তারা মাসুদুল হকের ভূয়া চিকিৎসক পরিচয় তুলে ধরে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন , ঢাকার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ বরাবর একাধিক চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কোন ফল হয়নি। বরং ডাক্তার মাসুদুল হকের অপচিকিৎসার প্রসার ক্রমশ বাড়ছে ।

ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন জানান, গত ১৩ জুন একটি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মাসুদুল হকের সব অবৈধ পরিচয়ের তথ্য প্রমান উঠে এসেছে। সেখানে তিনি এমবিবিএস ডিগ্রিধারী নন এ কথা নিজেই স্বীকার করেছেন।

এ প্রসঙ্গে এই টেলিভিশনের প্রতিবেদক মাসুদুল হককে তার ব্যবস্থাপত্রে এমবিবিএস লেখার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সবই সম্ভব। তার এই বক্তব্য দেশদ্রোহিতার শামিল উল্লেখ করে ক্লিনিক মালিক সমিতি এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি রেখেছেন ।

তবে একটি সুত্র জানিয়েছে, মাছুদুল হকের প্রকৃত নাম শহিদুল হক। মাছুদুল হক তার এক আত্মীয় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর যিনি মারা যান। শহিদুল মৃত আত্মীয় সার্টিফিকেট নিয়ে মাছুদুল হক সেজে রাশিয়া গিয়ে ডিপ্লোমা করে অসেন। পরে ৯০-এর দশকের শুরুতে অনৈতিক পথে ড্যাবের মাধ্যমে ডক্টরস কাউন্সিলের সদন নিয়ে মাছুদুল হক সেজে এমবিবিএস ডাক্তার বনে যান।

ক্লিনিক মালিক সমিতির অভিযোগ প্রাপ্তি স্বীকার করে মাগুরা জেলা প্রশাসক মো: আলী আকবর এ বিষয়ে বলেন, এ ব্যাপারে মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফরিদ হোসেন নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । এছাড়া পৃথক তদন্ত টিম গঠন করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সিভিল সার্জনকে বলা হয়েছে ।

মাসুদুল হক এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি বিএমডিএস থেকে নিবন্ধন নিয়ে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছি । আমি সংবাদ সম্মেলন করে সব তথ্য উপস্থাপন করব ।”

(আরএম/এসপি/জুন ১৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test