E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মহব্বত বাহিনীর অত্যাচারে দেশ ছেড়েছে ৪০ হিন্দু পরিবার, ছাড়ার পথে ৫০ পরিবার

২০১৯ জুন ১৮ ১৪:৫৫:৫৯
মহব্বত বাহিনীর অত্যাচারে দেশ ছেড়েছে ৪০ হিন্দু পরিবার, ছাড়ার পথে ৫০ পরিবার

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার দক্ষিণ কাদাকাটি গ্রামের মামলাবাজ মহব্বত আলী সরদার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ওই গ্রামের প্রায় ৫০টি হিন্দু পরিবার। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে হামলা ও মামলা সহ্য করতে না পেরে ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়েছেন ওই এলাকার ৪০টি হিন্দু পরিবার। তার অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না নিজের সহোদরসহ কয়েকজন আত্মীয়। অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রতিকারের জন্য জোট বেঁধেছেন এলাকার উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ।

মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণ কাদাকাটি গ্রামে গেলে বৃদ্ধা আহ্লাদি জানান, তার মা নুনুখুকির পৈৃতক সূত্রে পাওয়া জমি অংশ বিশেষ তার চার ছেলে মালিক হন। সুবিধাবাদি দলের সদস্য মহব্বত বাহিনীর অত্যাচারেছেলে গোলক, জগদীশ ও বাবু’র ছেলে ছেলে প্রবীর ৮৮ শতক জমি ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর ৩৩৬৮ নং দলিল মুলে মহব্বত সরদারের ছেলে আসাফুর ও আজিজুলকে লিখে দিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এ সুযোগে মহব্বত তার অপর ছেলে মনোরঞ্জনের ৩০ শতক জমি ও জবর দখল করেছে।

শুধু তাই নয়, ৩৫ বছর আগে যদুরডাঙি গ্রামে তাদের শরীক ব্রজেন সানা, গিরিশ সানা, নলিনী সানাসহ কয়েকজনের কাছ থেকে নামমাত্র জমি কিনে দক্ষিণ কাটাকাটি গ্রামে আপোষসূত্রে ভোগদখল করা তাদেরসহ (আহ্লাাদি) অনেকের জমি জবরদখল করে নিয়েছেন। হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানতে তার মা নুনুখুকির নামীয় জমিতে থাকা দীর্ঘদিনের শ্মশান উচ্ছেদ করে সেখানে দ্বিতল ভবন তৈরি করেছে মহব্বত সরদার। এরপরও ৩৩ শতকের পুকুরের মধ্যে তিন শতক জমির পরিবর্তে পুরো পুকুরটাই দখলে রেখেছে মহব্বত ও তার লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান আবুল কাশেম।

কাদাকাটি ইউনিয়ন পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার রায় বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সময়ে এক জেলার জমি অন্য জেলায় রেজিষ্ট্রি করার আইন থাকার সুযোগে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে মহব্বত তালার ইসলামকাটিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে দলিল করে বহু জমির মালিক বনে গেছেন। অবৈধভাবে তৈরি করার বিপুল সম্পদ রক্ষায় তিনি প্রয়োজনমত বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেছেন।

ম্যানেজ করেছেন স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সময়ভেদে প্রভাবশালী ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের। তার দৌরাত্ম্যে দক্ষিণ কাদাকাটি সার্বজনীন কালিমন্দির ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার আভ্যন্তরীন রাস্তাগুলো প্রায় বেদখল করে যানবাহন ও মানুষ চলাচলের অনুপোযোগী করেছেন মহব্বত। অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক দুর্গাপদ মণ্ডলের বাড়ি ও জমি দখলের চেষ্টা চলছে। আহ্লাদির ছেলে ও তার শরীকদের কাছ থেকে নামমাত্র পুকুরের অংশ কিনে পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করে একদিকে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেছেন।

অপরদিকে পুকুর নিজের দখল দেখিয়ে বিষ দেওয়ার অভিযোগ এনে পুকুরের প্রকৃত মালিকদের নামে আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। সদ্য বদলী হওয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব নাথ উদ্যোগ নিয়ে পুকুরের অংশসহ বিভিন্ন জমি অংশ অনুযায়ি বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও কৌশলে দেরী করানোয় সেটা আর হয়ে ওঠেনি।

সামছুদ্দিন সরদার বলেন, বাবা নিয়ামত আলী সরদারের ঘরটুকুর বাইরে জমি ছিল না। তার ভাই মহব্বত একজন রাজাকার। সকল ভাই এক সঙ্গে থাকাকালিন উপার্জন করে কয়েক বিঘা জমি কিনলেও নকল বাবা সাজিয়ে সে পাঁচ বিঘে জমি নিজের নামে লিখে নেয়। অভিযোগ, হিন্দুদের জমি জবরদখলে বাধাদান কারি বিশ্বনাথ সানা ও সাহাবুদ্দিন সানার ঘরে আগুন দেয় মহব্বত , তার ছেলে আসাফুর, আজিজুল ও আরার গ্রামের বর্তমানে দক্ষিণ কাদাকাটি’র আবুল কাশেম।

প্রতিমা শিল্পী জয়ন্ত সরকারের মামা গোবিন্দ সানার বাড়িতে ২০১৫ সালে গরুর মাংশ ঝুলিয়ে, সারা বারান্দায় ও উঠানে গরুর রক্ত ছড়িয়ে তাকে প্রতিবন্ধি সোহরাবের কাছে বাাড়ি ও জমি বিক্রি করতে বাধ্য করে দেশ ছাড়া করেছে। মনোরঞ্জন সরকারের জমি ডিড নিয়েছে এমন জাল কাগজের মাধ্যমে জমির প্রকৃত মালিকদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করে হয়রানি করেছে মহব্বত।

সুবিধাবাদি দলের সদস্য ঠাণ্ডা মাথায় হিন্দু নির্যাতনকারি মহব্বত এর জাল দলিল, তার বাহিনীর হামলা, মামলায় জর্জরিত হয়ে পূর্ব কাদাকাটি গ্রামের মথুর বিশ্বাস, কৃষ্ণপদ সানাসহ সাতটি পরিবার,পূর্ব কাদাকাটির নীলমনি সরদারের পাঁচটি পরিবার, কাদাকাটির সূর্য বাগ, অভিমন্যু সরদার ও সূর্য বৈরাগীসহ কমপক্ষে ৪০টি পরিবারের জমি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে বর্তমানে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কোন বুনিয়াদ বা শর্ত না থাকার পরও সিএস রেকডীয় মালিকদের জমি এসএ ২১৫ খতিয়ানে রেকর্ড করার সময় অংশ উল্লেখ না করার সূযোগকে ব্যবহার করে ১২২৭,১২৪৯,১২৫০ ও ১২৫১ দাগের আট বিঘা জমি আপোষ চিহ্নিত মতে দখল দেখিয়ে দেঃ ২৭/১৬ নং মামলার বাদি শ্রেণীভুক্ত হয়েছেন মহব্বত। একই স্থানে জমি কিনে বাড়ি করায় প্রতিবেশী হিসেবে সংখ্যালঘুদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় একের পর এক মামলার আসামী হচ্ছেন প্রতিবন্ধি সোহরাব হোসেন ও হাবিলসহ কয়েকজন মুসলিম।
সামছুদ্দিন, হাবিল, সোহরাব সহ কয়েকজন আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, জমি জবরদখল করে সম্পদ

লুটপাট, হুমকি ধামকিসহ বিভিন্ন কারণে অভিযোগ পেয়ে থানাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে প্রথমে মহব্বত এর উপর ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তার বাড়িতে যেয়ে পুত্রবধুদের আদর আপ্পায়নে গদগদ হয়ে এসে বলেন, বুঝলেন হিন্দু ভাইয়েরা, কাদাকাটিতে নয়, সারা জেলায় মহব্বতের জুড়ি নেই। তার বিরুদ্ধে কি কখনোই যাওয়া যায়?

জানতে চাইলে মহব্বত সরদার থানার সকল পুলিশ তাকে খুব ভালবাসে দাবি করে বলেন, তিনি চোখে ভাল দেখেন না। কেউ যদি গণ্ডগোলের জমি তার কাছে কম দামে বিক্রি করে যায় তাহলে কি তিনি দখল নেবেন না?

জানতে চাইলে সদ্য বদলী হওয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার নাথ এ প্রতিবেদককে বলেন, দক্ষিণ কাদাকাটির হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন মহব্বত সরদারের অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার । তিনি চলে আসলেও তার নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন।

(আরকে/এসপি/জুন ১৮, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test