E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মনিকার এখন নিজের থাকার একটা আশ্রয় হয়েছে 

২০১৯ জুন ১৮ ১৬:৩১:৪৮
মনিকার এখন নিজের থাকার একটা আশ্রয় হয়েছে 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধা সদর উপজেলায় নিজের কর্মে সব দুঃখ মুছে সর্বদা হাসি লেগেই রয়েছে।তার নাম হল ঘাগোয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘাগোয়ার সোনারকুড়া গ্রামে ২৬ বছর বয়সী মনিকা বেগম। 

১১ বছর আগে দিনমজুর খলিল মিয়ার সাথে বিয়ে হওয়া সময় স্বামীর সহায়সম্বল বলতে ছিল না কিছুই। এমন কি মাথা গোঁজার ছিল না ঠাঁই। স্বামী এক দিন কাজ করতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হতো পরিবারের সকলকে।

এখন আর তার সেই দিন নেই। আর না খেয়ে থাকতে হয় না, হয় না অন্যের কাছে ধারের উপর টাকা নিতে। তার এই দিন বদলে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে এই যতœ প্রকল্পটি। মাঠ পর্যায়ে এটি বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। মনিকার এই জীবন সংগ্রামের কাহিনী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট বইতে উঠে এসেছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত স্থানীয় সরকার বিভাগ অতিদরিদ্রদের জন্য ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট (আইএসপিপি) যতœ প্রকল্পের সুবিধাভোগী তিনি।

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে মনিকা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনায় রান্না করছিলেন তিনি। আর তার স্বামী খলিল মিয়া গরুর খাবার প্রস্তুত করছিলেন। মেয়ে রিয়ামনি আঙিনায় খেলছিল। বড় ছেলে ফরহাদ বাড়ির বাহিরে খেলা করছে বলে জানান মনিকা বেগম।

মনিকা স্মৃতিচারণ করে জানান, ১১ বছর আগে বিয়ে হয় তার। স্বামীর ঘরে আসার পর থেকে খুব কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। স্বামী খলিল মিয়ার নিজের বলতে কোনো জমি ছিল না। তার বড় ভাই মালেক মিয়ার জমিতে তার মেজো ভাইয়ের পরিবার ও মনিকাদের একটি ঘরে কষ্ট করে থাকতে হতো। মালেক মিয়া তাদের বাড়ি থেকে বারবার বের হয়ে যেতে বলতেন। পরে বাধ্য হয়ে আশা এনজিও থেকে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গাইবান্ধা-গিদারী সড়কের পাশে ঘাঘট নদীর তীরে মধ্যপাড়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে আট হাজার টাকা দিয়ে (খাস জমি) জমি কিনে ২০১৪ সালে সেই জমিতে ঘর তোলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে যতœ প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে তিন মাস পরপর সাড়ে তিন হাজার টাকা করে পেতাম। এই টাকায় নিজের ও সন্তানের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি কিছু টাকা করে সঞ্চয়ও করতাম। এ ছাড়া আমি আনসার ভিডিপির সদস্য হওয়ার কারণে সেখান থেকে পাওয়া টাকাও সঞ্চয় করতাম। ২০১৭ সালে কোরবানির ঈদের আগে ২৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনি। ওই বছরেরই শেষের দিকে যত্ন প্রকল্পের সাড়ে তিন হাজার ও নিজের সঞ্চিত ৫০০ টাকা দিয়ে দুইটি ভেড়া কিনি। ছয় মাস পর ভেড়া দুইটি জন্ম দেয় চারটি বাচ্চা। এরপর পাঁচ মাস আগে পাঁচটি ভেড়া আট হাজার টাকায় বিক্রি করি। পরে ভেড়া বিক্রির এই টাকা ও নিজের সঞ্চিত টাকা দিয়ে সম্প্রতি ২১ হাজার টাকা দিয়ে আরেকটি ছোট গরু কিনেছি। এখন এগুলোই আমার সম্পদ।’

মনিকা ও খলিল দম্পতির আট বছর বয়সী বড় ছেলে ফরহাদ বাড়ির পার্শ্ববর্তী কোনারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে ও ছোট মেয়ে রিয়ামনির বয়স আড়াই বছর।

খলিল মিয়া বলেন, ‘এখন নিজের থাকার একটা আশ্রয় হয়েছে এটাই শান্তি। কারও মুখাপেক্ষী তো হয়ে থাকতে হচ্ছে না। আগে ভ্যান চালাতাম। ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান চালু হওয়ায় পাচালিত ভ্যানে যাত্রী কম হওয়ায় আর ভ্যান চালাই না। তারপর থেকে রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করি আবার কখনো কৃষি কাজ করি। যখন যে কাজ পাই, তখন সেটাই করি। আগের চেয়ে ভালো আছি আমরা। ’

মনিকা বেগম বলেন, ‘এমনও দিন গেছে না খেয়ে থেকেছি। পরে বাধ্য হয়ে সুদের ওপর টাকা নিয়ে সংসারের খরচ চালাতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে বর্ষাকালে ও আমার স্বামী অসুস্থ হলে। তখন তিনি কাজ করতে না পারায় না খেয়ে থাকতে হতো আমাদের। আগে সম্পদ বলতে কিছুই ছিল না। এখন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মালিক আমরা।’

মনিকা বেগমের প্রতিবেশী আয়েশা বেগম বলেন, মনিকার পরিবারের সবার দিন খুব কষ্টে কেটেছে। এখন সুখের দেখা পেয়েছে ওরা। আগের চেয়ে অনেক ভালো আছে তারা।

(এস/এসপি/জুন ১৮, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test