E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সমস্যার ভাগার কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র 

‘অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা’ না দেয়ায় দায়িত্ব পালন করেন না চিকিৎসকরা! 

২০১৯ জুন ২২ ২২:৩৬:৪৮
‘অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা’ না দেয়ায় দায়িত্ব পালন করেন না চিকিৎসকরা! 

মানিক সরকার মানিক, রংপুর : অতিরিক্ত দায়িত্বের জন্য ‘অতিরিক্ত কোন সুযোগ সুবিধা না থাকায় অযথা বাড়তি ঝামেলা’ নিচ্ছেন না রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা। এমন উক্তি ওই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ৯ বছর আগে অন্যত্র বদলি হওয়ায় তখন থেকেই পদটি শূণ্য রয়েছে। ফলে কমপ্লেক্সের অন্য চিকিৎসকদের ওই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু আবাসিক সমস্যাসহ অন্যান্য ‘অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা’ না দেয়ায় কেউই ওই পদের দায়িত্ব পালন করছেন না। এতে করে দুপুরের পরই চিকিৎসক শূণ্য হয়ে পড়ছে তিস্তা নদী পরিবেষ্টিত কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। 

রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্তমান বাণিজ্য মন্ত্রী এই এলাকার এমপি হওয়ায় এবং পদাধিকার বলে তিনি স্বাস্থ্য সেবা কমিটির সভাপতি হওয়া সত্বেও একটিবারও তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা কমিটির সভা করেননি। ফলে যেনতেনভাবে কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে নামকাওয়াস্তে চলছে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি।

হাসপাতাল ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় রুপান্তর হওয়ার পরই কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা: মজিবর রহমান ২০১১ সালে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার পর থেকেই ওই পদটি শূণ্য। তখন থেকেই একেক সময়ে একেক মেডিক্যাল অফিসারদের (এম.ও) নিয়মিত দায়িত্বের পাশাপাশি আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে বাড়তি দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু নিয়মিত দায়িত্বের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য অতিরিক্ত কোন সুযোগ সুবিধা না দেয়ায় কেউই ওই পদে দায়িত্ব পালন করেন না।

বর্তমানে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া আছে ডা. গোলাম রব্বানীকে। তিনি কোন দিনই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন না। যুক্তি হিসেবে তিনি দেখান এখানে রাত যাপনের ব্যবস্থা নেই, নেই বাড়তি সুযোগ সুবিধা। তাই কেন তিনি এই দায়িত্ব পালন করবেন। এ কারণে অন্যান্য চিকিৎসকদের মত প্রতিদিন দুপুরেই তিনি তার রংপুর শহরের বাড়িতে ফিরে যান। ফলে দুপুরের পর হাসপাতালটিতে কোন চিকিৎসককেই পাওয়া যায় না। এ সময় দায়িত্ব পালন করেন নার্স-আয়ারা। হাসপাতালে ভর্তি রোগিরা সারাদিনে একবার মাত্র চিকিৎসকের দেখা ও ব্যবস্থাপত্র পান।

জানা গেছে, ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে ৩ জনকে দায়িত্ব পালন করতে হয় উপজেলার উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। উপজেলার এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির সমস্যার যেন শেষ নেই। বেশ কয়েক বছর আগে ৫০ শয্যায় রূপান্তরের সময় এখানে একটি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার গড়ে তোলা হয়। কিন্তু রোগিকে অজ্ঞান করা চিকিৎসক (এনেসথেটিষ্ট) না থাকায় কোন ধরণের অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হচ্ছে না।

এছাড়াও ২০ বছর আগে আনা একটি এক্সরে মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে শুধুমাত্র টেকনিশিয়ান অভাবে। তা সত্বেও সম্প্রতি দেড় কোটি টাকা মূল্যের আরেকটি এক্সরে মেশিন আনা হয়েছে এই কমপ্লেক্সের জন্য। যা কয়েক বছর যাবত বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে থাকতে থাকতে তার কার্যকারিতা হারাতে বসেছে।

বিষয়গুলো নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আসিফ ফেরদৌস জানান, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার না থাকায় চরম সমস্যার মধ্যে আছেন তিনি। তিনি জানান, জরুরী বিভাগে জরুরী চিকিৎসক না থাকলে রোগিরা চিকিৎসা নেবেন কার কাছে ? এছাড়াও উপজেলার জনসংখ্যা অনুযায়ি হাসপাতালটিতে চিকিৎসক, অন্যান্য জনবলসহ সমস্যার যেন শেষ নেই। এ বিষয়গুলো বিভিন্ন সময়ে তিনি তার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ অধিদফতরকে অবহিত করেছেন। সেখান থেকে ব্যবস্থা না নিলে তার কী করার আছে ?

(এম/এসপি/জুন ২২, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test