E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শেরপুরের সেই এনএসআই কর্মকর্তার স্ট্যান্ড রিলিজ

২০১৪ জুলাই ২৮ ১৫:০৭:৪৬
শেরপুরের সেই এনএসআই কর্মকর্তার স্ট্যান্ড রিলিজ

শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরে চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ব্যবসায়িকে ক্ষুরের আঘাতে জখম করার ঘটনায় অভিযুক্ত এনএসআই কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। একই সাথে ঘটনাটি তদন্ত এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে এনএসআই শেরপুরের উপপরিচালক আব্দুল কাদের খান জানিয়েছেন।

শনিবার দুপুরে শহরের গৌরীপুর এলাকায় এনএসআই শেরপুরের সহকারী পরিচালক আকরাম হোসেন মোটর সাইকেল ব্যবসায়ি ও শেরপুর চেম্বারের পরিচালক আবু সাঈদ শামীমের নিকট এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে ক্ষুর মেরে তার বাম গাল কেটে দেন। তাকে শেরপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী মহলের তদবিরে এনএসআই কর্মকর্তারা চাঁদাবাজি ও হামলার বিষয়টি আপোষ-রফার চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে শেরপুরের সর্বস্তরে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শনিবার বিকেলে শেরপুর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হলেও পরবর্তীতে উচ্চ পর্যায়ের তদবিরে পাল্টে যায় পরিবেশ। রাতারাতি চাঁদা দাবির অভিযোগ পাল্টে দেওয়া হয়। উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়, কেবল ব্যবসায়ি নেতাকে আঘাতে রক্তাক্ত করার অভিযোগ আনা যাবে। কিন্তু এরপরও অভিযোগের বিষয়ে কোন নিয়মিত মামলা রুজু হয়নি। উল্টো সদর থানা হেফাজতে থাকা এনএসআই কর্মকর্তা আকরাম হোসেনকে রবিবার অসুস্থ দেখিয়ে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শেরপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের পরিচালক এস এম আবু সাঈদ শামীম শনিবার বিকেলে স্ত্রী সামিরা আক্তার মিতুকে সাথে নিয়ে গৌরীপুরের বাসা থেকে প্রাইভেট কারযোগে তার মালিকানাধীন স্থানীয় অশিন টিভিএস শোরুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু শেরপুরে কর্মরত এনএসআই‘র সহকারী পরিচালক আকরাম হোসেন তাদের গাড়ীর গতিরোধ করেন। এরপর তাদের মধ্যে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে এনএসআই কর্মকর্তা তার প্যান্টের পকেট থেকে ধারালো ক্ষুর বের করে ব্যবসায়ি নেতা শামীমের বাম গালে পোচ মারেন। সাথে সাথে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই ব্যবসায়ি নেতা। স্বামীকে বাঁচাতে বাধা দিতে গেলে এক পর্যায়ে ওই কর্মকর্তা ব্যবসায়ি নেতার স্ত্রী মিতুকেও আঘাত করেন। ঘটনার সাথে সাথে এলাকাবাসী এগিয়ে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং ওই কর্মকর্তা পার্শ্ববর্তী তার নতুন ভাড়া বাসায় গিয়ে লুকিয়ে পড়েন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের এএসআই রবিউল ইসলামসহ দুইজন এনএসআই’র ওই কর্মকর্তার বাড়িতে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে তাদেরকেও ক্ষুর দিয়ে আঘাতে আহত করেন। সে সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই কর্মকর্তাকে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

ব্যবসায়ি নেতার স্ত্রী মিতু ঘটনার পর গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন, ঘটনার দুইদিন আগে ওই এনএসআই কর্মকর্তা তাদের টিভিএস শোরুমে গিয়ে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে না পাওয়ায় তিনি ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিকেলে তিনি অভিযোগের বিস্তারিত জানিয়ে থানায় এজাহার দায়ের করেন। কিন্তু এজাহার দায়েরের সাথে সাথে পাল্টে যায় পরিবেশ। টনক নড়ে উঠে উচ্চ পর্যায়ের মহলের। ওই মহলের তদবিরে এক পর্যায়ে রাতেই পাল্টে যায় বাদির অভিযোগের অর্ধেকটা। কিন্তু এরপরও সদর থানায় রুজু হয়নি নিয়মিত মামলা। বরং রবিবার ওই কর্মকর্তাকে অসুস্থ্য দেখিয়ে তাকে সদর থানা থেকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ওসি মাজহারুল করিম জানান, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। এখনও মামলা রুজু হয়নি। তবে এনএসআই কর্মকর্তাও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অভিযুক্ত এনএসআই কর্মকর্তা আকরাম হোসেন তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ি নেতা শামীমের চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শামীমের বাড়ির সামনে একটি ভ্যান গাড়ী পার্কিং নিয়ে কথাকাটাকাটি’র জের ধরে শামীম ও তার স্ত্রী তার উপর হামলা চালায় এবং স্থানীয় লোকজনদের ডেকে নিয়ে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।

এদিকে, শেরপুরে কর্মরত এনএসআই এর উপপরিচালক আব্দুল কাদের খান জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে এনএসআই কর্মকর্তা আকরাম হোসেনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। এছাড়া বিভাগীয় তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

(এইচবি/জেএ/জুলাই ২৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test