E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রিফাত হত্যার প্রধান আসামি নয়ন বন্ধুকযুদ্ধে নিহত, বরগুনায় মিষ্টি বিতরণ

২০১৯ জুলাই ০২ ১৫:২৪:০৬
রিফাত হত্যার প্রধান আসামি নয়ন বন্ধুকযুদ্ধে নিহত, বরগুনায় মিষ্টি বিতরণ

অমল তালুকদার, পাথরঘাটা (বরগুনা) : বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামী সাব্বির হোসেন ওরফে নয়ন বন্ড রাব-পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে বরগুনার পুরাকাটা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।

তার মৃত্যুর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পরার সাথে সাথে বরগুনায় উল্লসিত জনতার মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেছে স্থানীয় যুব সমাজ।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডকে গ্রেফতার করতে ওই এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায় নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা।

পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির এক পর্যায়ে নয়ন বন্ড বাহিনী পিছু হটে। পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে নয়ন বন্ডের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় পুলিশের চার সদস্য আহত হয়েছেন বলে তারা দাবী করেছে। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে।

বন্দুকযুদ্ধে কুখ্যাত সন্ত্রাসী নয়ন বন্ডের মৃত্যুর খবর প্রকাশ হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে বরগুনাবাসী। আজ সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, নয়নের লাশটি দেখে ঘৃনা জানাতে শতশত মানুষ ভিড় জমিয়েছে।

নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে আরও আটটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে বরগুনা পুলিশ। এসব মামলায় নয়ন বন্ডকে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন সময় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এসব মামলার মধ্যে দুটি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র মামলা এবং হত্যাচেষ্টাসহ পাঁচটি মারামারির মামলাও রয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত দুই অভিযুক্ত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন, মামলার এজাহারভূক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা অভিযুক্ত তানভীর। সোমবার বিকেলে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়্যাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর কাছে স্বেচ্ছায় তারা এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে জানা যায়। পরে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিলে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার নাজমুল হাসানকে তিনদিনের রিমান্ড শেষে একই আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত তার আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে বলে জানাগেছে। সাগর ও সাইমুন নামের অপর দুইজনের জন্য পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী তাদেরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ওসি তদন্ত হুমায়ুন কবির।

অপরদিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দুই প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন (নয়ন বন্ড) ও রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে সোমবার ল্যাপটপ ছিনতাই চেষ্টা এবং শারীরিকভাবে জখম ও হুমকি দেয়ার পৃথক আরেকটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. নাহিদ হোসেন এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. শাহ আলম গাজী জানান, ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবরে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর নেতৃত্বে ৫-৬ জনের একটি সন্ত্রাসী দল বরগুনার চরকলোনি এলাকার আক্তারুজ্জামান নাসিরের ছেলে জিহাদ জামানের কাছ থেকে ল্যাপটপ ছিনতাই এর চেষ্টা করে এবং ল্যাপটপটি আছাড় মেরে পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেয় এবং জিহাদ জামানকে মারধর করে।

এরপর জিহাদের বাবা আক্তারুজ্জামান নাসির বাদী হয়ে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী ও অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালতের বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলায় আগের শুনানিগুলোতে নয়ন বন্ডের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন আনিসুর রহমান মিলন ও রিফাত ফরাজীর পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মোতালেব মিয়া। তবে এই শুনানিতে এদের কেউ আসামিদের পক্ষে দাঁড়াননি।

গত ২৬ জুন (বুধবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের বাধা দিয়েও স্বামীকে রক্ষা করতে পারেননি। রিফাতকে কুপিয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে হামলাকারীরা। তারা চেহারা লুকানোরও কোনও চেষ্টা করেনি। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওই দিন বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।।

এ ঘটনায় নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ ১২জনের বিরুদ্ধে ২৭ জুন হত্যা মামলা দায়ের করেন রিফাত শরীফের বাবা মো. আ. হালিম দুলাল শরীফ। বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ এ পর্যন্ত ৮ জনকে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে।

বরগুনার জ্যষ্ঠ সাংবাদিক হাচানুর রহমান ঝন্টু জানান,বরগুনার মানুষ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের প্রতি খুশী হয়েছেন।পাশাপাশি বাকি আসামীদের গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন তারা।

এদিকে ক্রসফায়ারে নিহত নয়ন বন্ডের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর হতে পারে আজ।

(এটি/এসপি/জুলাই ০২, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test