E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঘুষ ছাড়াই পুলিশে চাকরি পেলেন নাগরপুরের বন্যা-রিনি

২০১৯ জুলাই ০৮ ১৮:৫৩:০৭
ঘুষ ছাড়াই পুলিশে চাকরি পেলেন নাগরপুরের বন্যা-রিনি

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি : অনেক স্বপ্ন ছিল টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার দক্ষিণ নাগরপুর এলাকার কৃষক পরিবারের সন্তান বন্যা আক্তারের চোখে মুখে। ছোট বেলা থেকেই পুলিশে চাকরি করার ইচ্ছে ছিল বন্যা আক্তারের।

চাকরি করে অভাবের সংসারের হাল ধরবেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন যেন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছিল বন্যার। গত বছর পুলিশে চাকরির ভাইভা পরীক্ষা দিয়েও চাকরি না পেয়ে ভেঙ্গে পরেননি তিনি বরং চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন পুলিশে চাকরি করবেনই তিনি। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে বন্যা সবার ছোট বন্যা পড়াশোনা করছেন নাগরপুর মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে।

বাবা সোরহাব মিয়া দরিদ্র কৃষক। তার একার পক্ষে বড় এ সংসার চালানো দায়। কিন্তু অভাবের সংসারে ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার সেই সামর্থ্য নেই তার। কিন্তু এবার তিনি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জেনেছেন চাকরিতে কোনো ঘুষ লাগবে না, ১০৩ টাকায় পুলিশের চাকরি পাওয়া যাবে। পুলিশের আইজিপি’র পক্ষ থেকে এমন প্রচারণা দেখে আবেদন করেছিলেন তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকেও তাকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। শরীরিক ফিটনেস কিংবা মেধা দু’টিই ছিল তার। তাই আত্মবিশ্বাসও ছিল তার। মাত্র ১০৩ টাকায় হয়েও গেলো সেই চাকরি।

এ ব্যাপারে বন্যা আক্তার বলেন, ‘আমি কখনই কল্পনাই করতে পারিনি যে ১০৩ টাকায় চাকরি পাবো। কখনই এমন হয়নি। কিন্তু ঘুষ ছাড়াই চাকরি দিয়ে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়। ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। আমার বাবা একজন কৃষক। আমার এ চাকরিটি খুব দরকার ছিলো। আশা করছি এখন আমি পরিবারের হাল ধরে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে পারবো। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমাদের স্থানীয় সাংসদ আহসানুল ইসলাম টিটুকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। কারন তারা ঘুষ ছাড়া চাকরির ব্যাপারে আন্তরিক না হতেন তাহলে আমার মত দরিদ্র মেয়ের পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন পূরন হত না।

অপরদিকে নাগরপুর উপজেলার ভাড়রা গ্রামের রিনি আক্তার নামের এক কলেজ ছাত্রীর চাকরি হয়েছে। তার ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়ার। পুলিশ হয়ে মানুষের সেবা করবে। আর তার এই স্বপ্ন পূরণ হলো। পরিবারও তাকে এ ব্যাপারে সহযোগীতা করেছে। তিনি চলতি পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ঘুষ ছাড়াই সরকার নির্ধারিত মূল্য ১০৩ টাকায় চাকরি পান তিনি। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে রিমি মেঝো।

এ ব্যাপারে রিনি আক্তার বলেন, ‘যখন থেকে আমার বুদ্ধি হয় তখন থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল পুলিশের চাকরি করে জনগণের সেবা করবো। প্রথম দিকে আমার আবু-আম্মু আমাকে সায় না দিলেও পরবর্তীতে আমাকে উৎসাহ যোগায়। পরবর্তীতে চলতি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ঘুষ ছাড়াই আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়।

তিনি আরো বলেন, মানুষের ধারণা ছিল টাকা ছাড়া পুলিশের চাকরি হবে না, কিন্তু এবার এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ঘুষ ছাড়াই আমরা চাকরি পেয়েছি। এতে আমি অনেক খুশি।

এ ব্যাপারে রিনি আক্তারের মা বিনা বেগম বলেন, আমার মেয়ে ঘুষ ছাড়াই চাকরি পেয়েছে এতে আমি খুবই খুশি। আমি দোয়া করি সে যেন মানুষের সেবা করতে পারে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ‘আমি আশাবাদি ছিলাম স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই মাত্র ১০৩ টাকায় ১৩৬ জন যুবক-যুবতীকে চাকরি দেয়া হয়েছে। মাননীয় আইজিপি মহোদয় ও ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি’র প্রেরণা আমাদের এ সাহস জুগিয়েছে। যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। প্রকৃত মেধাবিরাই সুযোগ পেয়েছে চাকরিতে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারসহ পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাচ্ছেন পুলিশে স্বচ্ছতা ফিরে আসুক। সেই চাওয়া পূরণেই টাঙ্গাইল পুলিশ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছে। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে চাই। পুলিশ জনগণের বন্ধু। পুলিশ সব সময়ই জনণের সার্থে কাজ করে। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হওয়ায় তারা আগামীর দিনগুলিতে বিভিন্ন কর্মস্থলে দেশের সাধারণ নাগরিকদের পাশে থেকে সেবা প্রদান করবেন।

(আরএস/এসপি/জুলাই ০৮, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test