E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সন্ত্রাসী মহব্বত বেপরোয়া : দুই সন্তানকে ভারতে পাঠালেন বিশ্বনাথ সানা

২০১৯ জুলাই ০৮ ২৩:০৯:২৩
সন্ত্রাসী মহব্বত বেপরোয়া : দুই সন্তানকে ভারতে পাঠালেন বিশ্বনাথ সানা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ‘প্রায়ই গভীর রাতে ঘরের চালে ঢিল মেরে, জমি জবর দখল করে, একের পর এক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সর্বশেষ ঘরে আগুন দিয়েও যে পার পেতে পারে আগামিতে সে সন্তানের জীবন নিয়ে টানাটানি করবে না এমন গ্যারান্টি আছে কোথায় ? নিজেদের জীবনের চেয়ে সন্তানদের বেশি ভালবাসি তাই কাদাকাটি আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী শাপলা সানা ও কাদাকাটি আরার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র মনিমোহন সানাকে ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছি। পাড়ার ১৮টি পরিবারের মধ্যে এখন মাত্র ৫টি পরিবার এখানে বসবাস করছেন। ১৩টি পরিবার মহব্বতের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আগেই ভারতে চলে গেছে।’

সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের কাদাকাটি গ্রামের নগেন্দ্র সানার ছেলে বিশ্বনাথ সানা ও তার স্ত্রী অঞ্জনা সানা হতাশার সুরে এ প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন।

দিনমজুর হিসেবে অন্যের জমিতে কাজ করার কারণে তাদেরকে দিনের বড় অংশটাই বাইরে কাটাতে হয়। এ সময় বাড়িতে থাকে দু’ ভাই বোন। দু’ মাস আগে তাদের ঘরে আগুন দিয়েও মহব্বত পার পেয়ে গেছে। তাদের কয়েকটি পরিবারের মালিকানাধীন গোসল করার পুকুর ও আহ্লাদির মা নুনু খুকির শ্মশানটি দখল করে দোতলা বাড়ি বানিয়েছে মহব্বত। পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জেনে সাবেক থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব নাথ পুকুর বন্টনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিলেও তার বদলী জনিত কারণে তা কার্যকর না হওয়ায় পাউডার দিয়ে পুকুরের মাছ মেরে উল্টে জয়ন্তসহ কয়েকজনের নামে মামলা দিয়েছে মহব্বত।

মহব্বতের টাকার কাছে সঠিক বিচার আর আলোর মুখ দেখে না। আমাদের যত অত্যাচার করে করুক কিন্তু ছেলে মেয়ের কোন ক্ষতি তারা চোখে দেখতে পারবেন না তাই বাধ্য হয়েই তাদেরকে ভারতে পার করে দিয়েছেন।

বিশ্বনাথ সানা বলেন, একই গ্রামের নেয়ামত আলী সরদারের ছেলে মহব্বত আলী সরদার দীর্ঘ দিন থেকে তাদের এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বি কমপক্ষে ৫০টি সংখ্যালঘু পরিবারকে ভারতে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের সম্পত্তি গ্রাস করার জন্য হামলা মামলা করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি মহব্বতের লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান কাদাকাটি গ্রামের মৃত কওছার সরদারের ছেলে কাশেম আলী তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। কান্নায় ভেঙে পড়ে বিশ্বনাথ ও তার স্ত্রী অঞ্জনা বলেন, জন্ম ভূমি ছেড়ে কেউ কি যেতে চায়! আমরা আর বিচার চাই না। জন্মিলে মরিতে হবে তাই যে দেশে জন্ম গ্রহন করেছি সে দেশেই মরতে চাই।

বিশ্বনাথের প্রতিবেশি মৃত হরিপদ মন্ডলের স্ত্রী আহ্লাদী মন্ডল(৮৫), হরিপদ সানা, অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দূর্গপদ মন্ডল ও বিনা পানি মন্ডল বলেন, তাাদের কথা কেউ বিশ্বাস করে না। মহব্বতের টাকার কাছে তারা হেরে যান। সবাইকে দেখানো হয় এটি মহব্বত ও সংখ্যালঘুদের বিষয় না। প্রতিবেশি সোহরাবের সাথে মহব্বতের জমিজমা সংক্রান্ত সমস্যার কারনে সোহরাব সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করে। যখন আমরা সবাই এদেশ ছেড়ে চলে যাব তখন হয়তো বিশ্বাস করবে কিন্তু তখন তো আর তাদের এদেশে পিরে আসার মত পথ থাকবে না।

কাদাকাটি ইউনিয়ন পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব রায় বলেন, মহব্বত আলী সম্পর্কে এক কথায় বলতে গেলে এভাবেই বলতে হয় ” মহব্বত জমি জবর দখলের জন্য এত জর্ঘন্য কাজ করে যাচ্ছেন যার কারণে আমাদের এলাকায় কেউ অন্যায় ভাবে জমি দাবি করলে সবাই বলবে তুমি কি মহব্বত সেজেছো”? মহব্বতের মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে রেহাই পায়নি মনোরঞ্জন সরকারের ছেলে মারাত্বক শারীরিক প্রতিবন্দ্বী মৃত্যুঞ্জয় সরকার।

কাদাকাটি ০২ ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মফিজ উদ্দীন গাজী বলেন, প্রতিবেশি গরিব সংখ্যালঘু পরিবার গুলোকে তাড়িয়ে তাদের জমি নিয়ে নেওয়ায় মহব্বতের মূল উদ্দেশ্য। হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে বহু অন্যায় অত্যাচার পরিবার গুলোর উপর চালিয়েছেন এবং চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে পরিবার গুলোর একাধিক সদস্যকে হয়রানি করেছে সে। কাদাকাটি ০২ ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য হরেকৃষ্ণ মন্ডল বিশ্বনাথ সানা ও বিপ্লব মণ্ডলের কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

কাদাকাটি ইউপি চেয়ারম্যান দিপংকর সরকার দ্বীপ বলেন, মহব্বতের অত্যাচার নিয়ে তিনি শুনেছেন। তবে বিশ্বনাথের ছেলে মেয়েদের ভারতে চলে যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।

(আরকে/এসপি/জুলাই ০৮, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test