E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

পায়রা সেতু প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়ম খুঁজতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন

২০১৯ জুলাই ১০ ১৫:৪৫:১৭
পায়রা সেতু প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়ম খুঁজতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন

দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর পায়রা সেতু প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহনে অনিয়ম-দুর্নীতি খুঁজতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের গঠিত ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টিম বুধবার লেবুখালী ফেরীঘাট সেতু এলাকা পরিদর্শণ করে অধিগৃহীত জমির মালিক ও স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজনের কাছ থেকে এ বিষয়ে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন। 

পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো: জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: আমিনুল ইসলাম ও দুমকির সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: আল-ইমরান সরেজমিন সেতু এলাকার সর্বস্তরের লোকজনের সাথে কথা বলে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

দুমকি উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) ও তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য মো: আল-ইমরান বলেন, সেতুর উভয় দিকে ১শ’ফুট বিস্তৃত জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগৃহীত জমিতে, ভিটিবাড়ি, বসত:ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গাছপালার তথ্যে বিস্তর ফারাক আছে। কাঁচা ঘরবাড়িকে আধাপাকা টিনশেড, আধাপাকা টিনশেডের ঘরকে পাকা ভবন দেখিয়ে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ মূল্য দেখানোর প্রমাণ স্পষ্ট। বাস্তবে গাছপালা শূণ্য জায়গায় দেশীয় নানা প্রজাতির গাছ দেখিয়ে অধিক ক্ষতিপূরণ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে যা আদৌ কাম্য নহে। বিশেষত: সেতুর ১শ’ফুটের বাইরের জমি অধিগ্রহণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ সকল অনিয়মে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘুষ কেলেংকারীরও তথ্য মিলেছে। তিনি বলেন, অধিগৃহীত জমির প্রকৃত মালিক ও অংশিদারগণের প্রাপ্যতায় কোন ঘাটতি হবে না, তবে বে-আইনী ভাবে যাদের নাম ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তা অচিরেই বাদ দেয়া হবে। আর অনিয়ম-দূর্ণীতিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হবে।

উল্লেখ্য, লেবুখালী ফেরীঘাটের পায়রা সেতু প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা তুহিন ফরাজী, শাহজাহান ফরাজী, হানিফ হাওলাদার, সহিদ ফরাজী সম্প্রতি পায়রা সেতু প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়মের বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে তারা বলেন, পটুয়াখালী এলএ শাখার কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজসে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেনে নির্দিষ্ট মাপের বাইরের জমি বে-আইনী প্রক্রিয়ায় অধিগ্রহণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তা ছাড়া ভিটিবাড়ি, বসত:ঘর ও গাছপালার বাস্তব মূল্যের ৭/৮গুণ উচ্চমূল্য দেখিয়ে সরকারী তহবিলের কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হচ্ছে। এলাকার প্রভাবশালী ইউপি সদস্য মো: ইউনুচ ফরাজীর বিরুদ্ধে করা ওই অভিযোগে বলা হয়, অধিগ্রহন নীতিমালায় ১শ’ফুটের বাইরে তাঁর (ইউনুচ ফরাজী) বসত:ভিটি এবং ১টি রেন্ট্রিগাছ মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে বে-আইনীভাবে অধিগ্রহণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করানো হয়েছে। যার ক্ষতিপূরণ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা।

পায়রার সেতুর ভূমি অধিগ্রহণকালে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বপালণকারী সার্ভেয়ার-কানুনগোসহ পটুয়াখালী এলএ শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ লেনদেনে ওই অনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় ইউনুচ ফরাজীর মতো আরও বেশ কিছু পরিবার অনৈতিক সুবিধা লাভের গোপন তৎপড়তা চলছে। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন এলএ শাখার লোকজন।

অভিযোগের বিষয়ে লেবুখালীর ইউপি সদস্য ইউনুস ফরাজী ঘুষ দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সার্ভেয়ার ও ফরেস্ট অফিসার সরেজমিন পরিদর্শন করে মূল্য নির্ধারণ করেছেন। এতে আমার কোনো হাত নেই।

সার্ভেয়ার আনোয়ার হোসেন বলেন, কারো কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়নি, ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা শুধু জমির ধরণ, পরিমান এবং গাছপালার সংখ্যা নির্ধারণ করেছি। গাছের মূল্য নির্ধারণ করেছে বন বিভাগ। সংখ্যাগত গরমিল থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সঠিক সংখ্যা দিয়েছি, হয়তো বন বিভাগ পরিবর্তন করেছে।

জানতে চাইলে সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, অনেক বড় গাছ তো, তাই অনুমাননির্ভর দাম নির্ধারণ করেছি। এ ব্যাপারে কাগজপত্র দেখে আপনাদের জানাব।

গাছের সংখ্যা পরিবর্তনের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা সার্ভেয়াররা করেছে, আমি কিছুই জানি না।
এদিকে জেলা প্রশাসনের তদন্ত টিমের সরেজমিন তদন্তের পরের দিন গত শুক্রবার থেকে পায়রা সেতুর অধিগৃহীত জমি পুনরায় মাপজোক শুরু হয়েছে। পটুয়াখালী ভূমি অধিগ্রহণ শাখার (এল.এ শাখা) সার্ভেয়ার কানুনগোসহ ৫জনের একটি জরিপ টিম শুক্রবার সকাল থেকে পায়রা সেতুর অধিগৃহীত জমির মাপজোক, ভিটি-বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গাছপালার পরিসংখ্যাণ সংগ্রহ করছে।

(এস/এসপি/জুলাই ১০, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test