E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

২০১৯ জুলাই ১৩ ১৭:৪৯:৫৫
রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সরকারী রাজস্ব ফাঁফি দেয়ার অসৎ উদ্দ্যেশে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে নিম্ন মূল্য ধরে (আন্ডার ভ্যালু) একটি দলিল রেজিস্ট্রেশন করার গোমর ফাঁস হয়েছে। ঘটনার ৬দিন পর দায় এড়াতে ঘষামাজা করে পূনরায় বাঁকী টাকা জমার দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

বর্তমানে এই সাব-রেজিস্ট্রি অফিস বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, দায়িত্বহীনতা ও সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে এলাকায় কথা উঠেছে। যার কারণে সরকার প্রতি বছর এই জনগুরুত্বপূর্ন দপ্তর থেকে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। অপরদিকে কতিপয় ব্যক্তি রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও দলিলের জাবেদা নকল থেকে জানা গেছে, উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের আমগ্রাম গ্রামের মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে সেকেন্দার সরদার আমগ্রাম মৌজার মাঠের ৪শতাংশ ধানী জমি বিক্রি করেন একই গ্রামের মৃত-রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে দুলু সরদার ও হেলাল সরদারের কাছে। ওই মৌজার সরকার নির্ধারিত প্রতি শতক ধানী জমির দাম ১২হাজার ৬শ’ ১৩টাকা। সে হিসেবে বিক্রিত জমির সরকারি মোট মূল্য (ভ্যালুয়েশন) হওয়ার কথা ৫১হাজার টাকা।

এই দলিলটি দলিল লেখক সমিতির সভাপতি বাচ্চু মুহুরীর সেরেস্তায় সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে দলিল লেখক সাইদুর রহমান অর্ধেক মূল্য মাত্র ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দলিল প্রস্তুত করে। পরে দাখিলকৃত উক্ত দলিল নি¤œ মূল্য (আন্ডার ভ্যালু) হওয়ার পরেও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে/ অজ্ঞাত কারণে সাব-রেজিস্ট্রার রাশিদা ইয়াসমিন মিলি দলিলটি চুড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করেন। যার দলিল নং-২১৪৯,তারিখ ১৮/০৬/২০১৯ইং ।

এমন গোপনীয় বিষয়টি জানাজানি হলে দলিল রেজিস্ট্রেশনের ৬দিন পর নিজেরা বাঁচতে কোন এক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আইন বর্হিভূত ভাবে অবশিষ্ট টাকা জমা দেয়া হয়। তবে মজার ব্যাপার হলো, এই দায় এড়াতে অবশিষ্ট টাকা কৌশলে জমা দিলেও দলিলের কোথাও ৫১হাজার টাকা মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। বিষয়টি চাউর হওয়ার পরেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় খোদ পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রারের দিকেই সন্দেহের তীর ঘুরপাক খাচ্ছে।

একাধিক গোপন সূত্রে জানা গেছে, রেজিস্ট্রেশন করার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত বিভিন্ন মৌজার জমির দেয়া মূল্য দেয়া থাকলে যোগসাজশে গোপনে অর্ধেক দামে (আন্ডার ভ্যালু) দলিল করা হয়। এতে করে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারালেও কতিপয় ব্যক্তি রাতারাতি লাখপতি বনে যাচ্ছেন। প্রতিটি জাবেদা নকল সরকারের বেধে দেয়া ফি ৬শ’ ৪০টাকা হলেও জাবেদা (নকল) কপির জন্য নেয়া হয় সর্বনিম্ম ১৪ শ’ টাকা। দ্বিগুন ফি দেয়ার পরও প্রতিটি জাবেদা কপির জন্য দিনের পর দিন অফিস ঘুরতে হয় গ্রাহককে।

এছাড়াও মৃত ব্যক্তির নামে জমি রেজিস্ট্রেশন, শ্রেণী পরির্বতনসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকান্ড গোপনে এই অফিসে সিদ্ধ করা হয়। এক কথায় অনিয়মই এখন এই অফিসের নিয়মে পরিণত হয়েছে। কতিপয় ব্যক্তি বিভিন্ন রেফারেন্সের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। যাদের ছত্র-ছাঁয়ায় হরহামেশাই একের পর এক এই সব দুর্নীতির কর্মকান্ড সংঘটিত হচ্ছে।

দলিল লেখক সাইদুর রহমান বলেন, এটি একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। এক মৌজা ভেবে আরেক মৌজার জমির দাম হিসেবে ওই জমির মূল্য নির্ধারণ করেছি। কিন্তু আরো দুই হাত যাচাই-বাছাই হওয়ার পর দলিলের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। তাদের চোখেও কি এই ভুলটি সেই সময় পড়েনি? তবে পরবর্তিতে অবশিষ্ট টাকা জমা দিয়েছি এবং তা দলিলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এটা তেমন কোন জটিল সমস্যা নয়।

সাব-রেজিস্ট্রার রাশিদা ইয়াসমিন মিলি বলেন, এক মৌজা ভেবে আরেক মৌজার জমির মূল্য তালিকা অনুসারে মুহুরী দলিলে মূল্য উল্লেখ্য করেছেন। বিষয়টি জানার পর আমি মুহুরীকে তলব করি এবং ঘাটতি টাকা আদায় করে দলিলে জমা করি। যদি এরকম ভুল হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অবশিষ্ট টাকা জমা দেয়ার কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। যখন ইচ্ছে তখন টাকাটা জমা দেয়া যাবে।

(বিএম/এসপি/জুলাই ১৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test