E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

দিনমজুর আব্দুল জলিলের ৭ কি: মি: রাস্তা নির্মাণ

২০১৯ জুলাই ১৩ ২২:৩৯:৫৮
দিনমজুর আব্দুল জলিলের ৭ কি: মি: রাস্তা নির্মাণ

মো. শাহ্ জামাল : জামালপুরের মেলান্দহে পঞ্চাশোর্ধ দিনমজুর আব্দুল জলিল স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় ৭ কি: মি: রাস্তায় মাটি কেটে দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। জলিল ১১নং শ্যামপুর ইউনিয়নের টুপকারচর গ্রামের মৃত সবদের আলীর ছেলে। তিনি টানা দুই মাস যাবৎ টুপকারচর পাইলিং থেকে ৪নং চর ফেরিঘাট পর্যন্ত রাস্তায় মাটি কাটছেন। 

এলাকাবাসী জানান-রাস্তায় মাটি কাটার শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করতে নিজের গবাদি পশু বিক্রি করেছেন। এ ছাড়াও বর্গাচাষকৃত জমিতে উৎপাদিত সব্জি বিক্রির টাকায় রাস্তার মাটি কাটছেন। জলিলের হাতে এখন টাকা নাই। তাই নিজেই রাস্তায় মাটি কাটছেন। তাঁর এই মহৎ কর্মটি মানুষকে অবাক করে দিয়েছে।

জলিলের নিজ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তিনি থাকেন জীর্ণ কুঠিরে। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন তাঁর পরিবারবর্গ অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তথাপি মানুষের দুরবস্থা লাঘব করতে কর্দমাক্ত চলাচলের অনুপযোগি রাস্তা নির্মান করেন।

আব্দুল মোতালেব (৩৫) এবং মেহেদী হাসান (২২)সহ এলাকাবাসি জানিয়েছেন-নিজের গরু বিক্রি করে জলিল মাটি কেটে দেয়ার পর রাস্তাটি চলাচল উপযোগি হয়েছে। এখন যানবাহনও যাতায়াত করতে পারে।

এমন মহৎ কাজে জড়িত হবার বিষয়ে জলিল জানান-রাস্তার দুরবস্থা দেখে আমি একদিন স্থানীয় মেম্বারকে বলি। তিনি আমাকে বলেন, বেশি দরদ থাকলে তুমিই রাস্তা করে দাও। এই কথার প্রেক্ষিতে রাস্তাটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
রাস্তা নির্মাণে কোন প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করেছেন কি না? এমন প্রশ্নে আব্দুল জলিল বলেন-এলাকাবাসির কোন ধরণের সহযোগিতা পাই নি। মাটি কাটার জন্য শেরপুর থেকে ভাড়াটে ঘোড়ার গাড়ি এনেছি। রাতের অন্ধকারে গাড়ির চাকা চুরি করেছে দুস্কৃতিকারিরা। এজন্য আমাকে জরিমানাও দিতে হয়েছে। রাস্তার জঙ্গল পরিস্কারকালে অনেক সাপ-পোকা মাকড় বের হলেও; কামড় দেয় নি।

জলিলের শেষ ইচ্ছা ব্যক্ত করে বলেন, আমার সহায় সম্বল দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছি। এই রাস্তাটি পাকাকরণসহ টুপকারচর ও ৪নং চরের সাথে যোগাযাগ রক্ষার্থে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি আশা করছি।
এ বিষয়ে শ্যামপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাতুজ্জামান সুরুজ মিলিটারি দিনমজুরের কর্মকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন-আব্দুল জলিল কখনো দিনমজুরি কখনো ক্ষুদ্র ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়ন এবং ইসলামপুর উপজেলার চরপুটিমারি ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারণের জটিলতার কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না। এলাকাটি অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামিম আল ইয়ামীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন-এই এলাকাটি আগে ইসলামপুর উপজেলায় ছিল। পরে মেলান্দহের আওতায় চলে আসে। সীমানা নির্ধারণের জটিলতা নিরনে দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, সর্বত্রই এখন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু; জগতে এখনো ভালো মানুষ-ভালো মনের অধিকারি লোক থাকতে পারে। জলিল তারই নিদর্শন। দিনমজুর জলিলও পারেন। তা প্রমাণ করলেন। লেখক-সাংবাদিক-মানবাধিকার কর্মী ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মেলান্দহ রিপোর্টার্স ইউনিটি, জামালপুর।

(এসজে/এসপি/জুলাই ১৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test