E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

‘রক্ত থাকতে এরশাদের দাফন রংপুর ছাড়া অন্য কোথাও না’ 

২০১৯ জুলাই ১৬ ০০:২০:৫৭
‘রক্ত থাকতে এরশাদের দাফন রংপুর ছাড়া অন্য কোথাও না’ 

মানিক সরকার মানিক, রংপুর : জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের দাফন নিয়ে জাতীয় পার্টি এবং প্রশাসনের মাঝে মঙ্গলবার রংপুরে এক অস্থিতিশীল ও মারমুখি পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সোমবার রংপুরে অনুষ্ঠিত রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার নেতাকমীরা রংপুরে এক জরুরী সভা কওে ‘শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতেও জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের দাফন রংপুর ছাড়া অন্য কোথাও করতে দেয়া হবে না’ মর্মে ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রয়োজনে হেলিকপ্টারের আগে পিছে মানব ঢাল মানব তৈরি করে হলেও তারা তারা লাশ রংপুর থেকে নিয়ে যেতে দেবেন না। আর এ জন্যই ইতোমধ্যেই দর্শনায় এরশাদের বাসভবন পল্লী নিবাসে তার কবর খোড়ার কাজও শুরু করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

জীবদ্দশায় এরশাদের ইচ্ছে অনুযায়ি কখনও বনানী, কখনও রংপুরে মা-–বাবার কবরের পাশে আবার কখনও ঢাকায় নিজ অর্থে জমি কিনে সেখানেই তার দাফনের কথা জানিয়েছিলেন। যার পাশে থাকবে একটি মসজিদ, দরিদ্র ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য একটি মাদ্রাসা। অবশ্য উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার জাপাও তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার বাস ভবন পল্লী নিবাসে সেই প্রস্তুতি নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এদিকে জাপা নেতাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে রংপুর জেলা ব্যবসায়ী সমিতি এরশাদের শোক ও জানাযায় অংশ নিতে মঙ্গলবার নগরীর সমস্ত দোকানপাট বিকাল ৩টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার প্রতি শোক জানাতে নগরীর সড়ক দ্বীপগুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অন্যদিকে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কথায় মিলছে ভিন্ন চিত্র।

তাদের মতে, এইচ. এম এরশাদ সাবেক একজন রাষ্ট্রপতি ছাড়াও তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। সেনাবাহিনীর বিধান অনুযায়ি কোন সাবেক সেনা প্রধান মৃত্যুবরণ করলে তার লাশ বনানীর কবরস্থানেই দাফন করার বিধান এবং সরকারের উপর মহল থেকে তাদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে, বনানী কবর স্থানে তার দাফনের জন্য সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে লাশ নিয়ে হেলিকপ্টারকে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে। এ অবস্থায় সরকার এবং দলীয় নেতাকর্মীদের বাধাঁর মুখে শেষ পর্যন্ত কি হতে পারে তা নিয়ে নানা প্রশ্নের পাশাপাশি নগরজুড়ে উৎকণ্ঠারও সৃষ্টি হয়েছে।

এক সময়কার দোর্দন্ড প্রতাপশালী ও আদালতের দেয়া রায়ে স্বৈরশাসক জাপা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ.এম এরশাদ প্রতিবছর যে কোরবানী ঈদের মাঠে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে দিতেন স্বদোপদেশ. মহান আল্লাহ তালহা’র কথা স্মরণ করিয়ে শোনাতেন অসম্প্রদায়িক চেতনার কথা. সেই মাঠেই সেই এরশাদের নিথর দেহ আসছেন কফিনে মোড়া অবস্থায়।

রংপুর মহানগর জাপার সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ দলের অনেক নেতাই বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর কবর যদি টুঙ্গিপাড়ায়, জিয়উর রহমানের কবর যদি চন্দিমা উদ্যানে হতে পাওে তবে এ অঞ্চলের প্রিয় নেতার লাশ রংপুরে দাফন করতে বাধা কোথায় ? সে জন্য দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় এই প্রিয় নেতার দাফন যাতে তার বাসভবন পল্লী নিবাসের লিচু তলায় হয় তার সব সব রকম প্রস্তুতিই প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে তার দাফন হলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন এসে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। কিন্তু বনানীতে হলে সে সুযোগ থাকবে না। আর এ কারণেই আমাদেও এই সিদ্ধান্ত। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, পরিবারের কিছু সদস্য এবং দলের অভ্যন্তওে কিছু নেতার কারণে এরশাদকে রংপুরে দাফন করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। এরা যখন যার, তখন তার ভূমিকা পালন করে। এ ক্ষেত্রে আমরা যারা ত্যাগী নেতা আছি, আমরা তাদেও সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করবো।

কারো নাম উল্লেখ না করে তিনি আরও বলেন, রংপুওে এরশাদেও দাফন হলে যাদের গায়ে লাগবে তারাই পর্দার আড়ালে থেকে নানামূখি ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, জাপা এবং পল্লী বন্ধুকে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতেই এই ষড়যন্ত্র। মেয়র মোন্তফা আরও বলেন, জীবদ্দশায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে কোনোদিন ভালোভাবে রাজনীতি করতে দেওয়া হয়নি। মৃত্যুর পরও তাকে এবং তার দলকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। একটি বিশেষ ও মহল কিছু সাধারণ মানুষ তাকে বিচ্ছিন্নভাবে দলকে নিশ্চিহ্ন করতে বনানীর সামরিক কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সোমবারের সভায় সাবেক সংসদ সদস্য শাহানারা বেগম, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রংপর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস.এম ইয়াসির, কেন্দ্রীয় জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, গাইবান্ধা জেলা জাপার আহ্বায়ক আব্দুর রশীদ সরকারসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারযোগে রংপুর ক্যান্টমেন্টে তার লাশ আসবে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে তার বাসভবন পল্লী নিবাসে। এরপর পার্টি অফিসে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপরই জানাযার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হবে রংপুরের কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ ময়দানে। সেখানে জানাযা শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার কথা সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

এদিকে এরশাদের দাফন এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রংপুরের জেলা প্রশাসক হাসিব আহসান জানান, সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে জানাযা শেষে আমাদেরকে শান্তিপূর্ণ লাশ হেলিকপ্টারযোগে পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সে মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা নেব। অন্যদিকে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানও জানান একই কথা।

তিনি জানান, লাশ নিয়ে হেলিকপ্টার অবতরণ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় পর্যন্ত আমাদের নির্দেশ দেয়া আছে। আমরা সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, কেউ যদি বাধা দেয়, কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাবার চেষ্টা করে তবে তা প্রতিহত করা হবে।

(এম/এসপি/জুলাই ১৬, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test