E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

কাপাসিয়ায় পিআইও কারসাজিতে ভুয়া প্রকল্পের নামে কোাটি কোটি টাকা হরিলুট  

২০১৯ আগস্ট ০৫ ১৫:২৯:০৮
কাপাসিয়ায় পিআইও কারসাজিতে ভুয়া প্রকল্পের নামে কোাটি কোটি টাকা হরিলুট  

সঞ্জীব কুমার দাস, কাপাসিয়া (গাজীপুর) : কাপাসিয়ায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়মের  অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় প্রশাসনের দুর্নীতি কারনে একটি প্রভাবশালী মহলের জোগসাজশে প্রকল্প বরাদ্দের পরিমাণ গোপন রেখে কাজ না করে কোটি কোটি হরিরুট করা হয়েছে। প্রকল্প গুলো বাস্তবায়ন না করে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে গায়েবি প্রকল্প সাজিয়ে বিভিন্ন কৌশলে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সুত্র জানায়, উপজেলার কড়িহাতা ইউনিয়নের ‘ইকুরিয়া পূর্বপাড়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা হতে মোশারফ মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার ইটের সলিং’ প্রকল্পে স্থানীয় সংসদ সদস্যের টি.আর প্রকল্প থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আমাদের বলেছেন, পিআইও অফিসের খরচ ও অন্যান্য খরচ বাদে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা এখানে খরচ করা যাবে। তাই ৫৬ হাজার টাকা দিয়ে সাত হাজার ইট, ৩ হাজার ৬শ’ টাকা দিয়ে তিন ট্রলি বালু কেনা হয়েছে এবং নির্মাণ শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ৮ হাজার টাকা খরচ করে ৮ প্রশস্ত বিশিষ্ট ১৭২ ফুট রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। সম পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সনমানিয়া ইউনিয়নের ‘ধানদিয়া গ্রামের কালীবাড়ি হতে ভবানীঘাট পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং’ প্রকল্পে। যেখানে নিম্ন মানের ইট ব্যবহার করে দুইশত ফুটের একটু বেশি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। একই পরিমাণ বরাদ্দ রাখা হয়েছে রায়েদ ইউনিয়নের ‘দরদরিয়া গ্রামের গোসিংগা-আমরাইদ রাস্তা সংলগ্ন হাবিবুরের বাড়ি হতে আমানউল্লাহ হুজুরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা ইট সলিং’ প্রকল্পে।

এ রাস্তাটি কোথাও ৬ ফুট কোথাও ৭ ফুট প্রশস্ত করে ২শত ফুটের একটু বেশি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে যা আমানউল্লাহ হুজুরের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছেনি। স্থানীয় সংসদ সদস্যের টি.আর প্রকল্প থেকেই ‘আড়াল ঈদগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টয়লেট নির্মাণ’ প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা এবং ‘কোটামনি বাজার মসজিদের টয়লেট নির্মাণ’ প্রকল্পে ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও এখনো পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। ‘টোকনগর বনফুল আদর্শ গ্রামের পুকুরের পাড় প্যালাসাটিং করণ’ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকা যে গ্রামের কথা এলাকাবাসী কোনো দিন শুনেনি এবং এলাকায় অনুসন্ধান করে এ প্রকল্পের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কড়িহাতা ইউনিয়নের ‘শ্রী শ্রী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির পরিচালনা পরিষদের উন্নয়ন’ নামে বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪০ হাজার টাকা যেখানে প্রকল্পের কোন কমিটি নাই বলে এলাকার মানুষ জানান। স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাবিটা প্রকল্প থেকে টোক ইউনিয়নের ‘উজলী দিঘিরপাড় ইটের সলিং এর মাথা হতে বীর উজলীর হাফিজ উদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত ইট সলিং’ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০ মে. টন চাল যার সরকারি দর অনুযায়ী বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। স্থানীয় লোকজন এ প্রকল্পে নিম্ন মানের ইট ব্যবহার করে তিনশত ফুট রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

সম পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ঘাগটিয়া ইউনিয়নের ‘ভূঁইয়া বাড়ি জামে মসজিদ হতে দুদার বাড়ি হয়ে সালদৈ বাজার পর্যন্ত রাস্তা ইট সোলিং’ প্রকল্পে। স্থানীয় লোকজন জানায় এ প্রকল্পের মাঝখানে অনেকটুকু রাস্তা বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের একটি প্রকল্প যুক্ত করে মোট চারশত ফুট রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। একই পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কড়িহাতা ইউনিয়নের ‘চরখামের পশ্চিমপাড়া মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের বাড়ি হতে পিপুলিয়ার টেক জামে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা ইট সলিং’ প্রকল্পে। স্থানীয়দের অভিযোগ এ প্রকল্পে নি¤œ মানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে এবং প্রকল্পে বর্ণিত রাস্তার দৈর্ঘ্যরে অর্ধেক কাজও হয়নি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের টি.আর থেকে ‘কাপাসিয়া উত্তরপাড়া মোশারফের বাড়ি হতে নজরুলের বাড়ি যাওয়ার রাস্তা ইট দ্বারা উন্নয়ন’ প্রকল্পে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এলাকাবাসী এ কাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করার অভিযোগ করেছেন এবং রাস্তাটি ২৫০ ফুটের মতো হবে বলে জানায়। অপরদিকে বারিষাব ইউনিয়নের ‘সিংগুয়া বাজার প্রধান রাস্তা মাটি ভরাট’ প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও তাতে মাত্র ৫ ট্রলি বালু ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে, যার স্থানীয় বাজার মূল্য ৫ হাজার টাকা বলে এলাকাবাসী জানায়। সনমানিয়া ইউনিয়নের ‘সনমানিয়া দেওয়ান বাড়ি জামে মসজিদ উন্নয়ন’ প্রকল্পে ১ লাখ ৪০ হাজার ১০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি বরাদ্দের পরিমাণ গোপন রেখে মসজিদ কমিটির সভাপতির কাছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা হস্তান্তর করেছেন এবং মসজিদের কাজ শুরু করলে আরো কিছু টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একই ইউনিয়নের ‘চরসনমানিয়া ইদ্রিস আলী প্রধানের বাড়ির পাশের জামে মসজিদ উন্নয়ন’ প্রকল্পে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৯ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি প্রকৃত বরাদ্দের পরিমাণ গোপন রেখে মসজিদ কমিটিকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রায়েদ ইউনিয়নের ‘হাইলজোড় পশ্চিমপাড়া পাকা রাস্তা হতে তোফাজ্জল মাস্টারের বাড়ি অভিমুখি রাস্তা সংস্কার’ প্রকল্পে ৪৪ হাজার ৪৮২ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এলাকাবাসী জানায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা উক্ত টাকা দিয়ে কাজ না করে সরকারের চলমান অন্য প্রকল্প ‘অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির’ তালিকাভুক্ত শ্রমিকদের দিয়ে এ কাজ করিয়েছে। ‘নামা বারিষাব চৌরাস্তার মোড়ে লেট্রিন নির্মাণ’ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকা যা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাবিখা থেকে ‘টোক ইউনিয়নের সালুয়ারটেকি চেয়ারম্যান বাড়ির মসজিদ হতে বিটুর বাড়ির অভিমুখী রাস্তা ইট সলিং’ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৮.২০ টন চাল যার সরকারি দর অনুযায়ী বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার ৬০০ টাকা। প্রকল্পের মাধ্যমে টোক ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে মাত্র ২১৫ ফুট রাস্তায় তুলনামূলক কম দূরত্বে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হলেও নিম্নমানের ইট ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। ঘাগটিয়া ইউনিয়নের ‘সালদৈ হযরত আলী মেম্বারের গোরস্থান হতে আকবরের বাড়ি পর্যন্ত মাটি ভরাট’ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪.৯৫ টন চাল যার সরকারি দর অনুযায়ী বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫০ টাকা।

এ প্রকল্পের একজন শ্রমিক জানান, তারা ‘অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির’ তালিকাভুক্ত ১০ জন শ্রমিক মাত্র ৪ দিন কাজ করেছেন এবং হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর রেখে প্রতিজনকে দৈনিক ৪০০ টাকা করে মোট ১৬ হাজার টাকা মজুরি দেয়া হয়েছে। একই তালিকায় একই প্রকল্পের নামে উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নে ৫.০৩ মে. টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যার সরকারি দর অনুযায়ী বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৯০ টাকা। বাস্তবে যার অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি। এসব অভিযোগের ব্যাপরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাকি বিল্লাহ‘র উপজেলা কার্যালয়ে গেলে অন্য কর্মকতারা জানান তিনি বদলী হয়েে গেছেন।

পরে এ ব্যাপারে জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কাপাসিয়া উপজেলার সব প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত টাকা ও চাল উত্তোলন করা হয়েছে এবং কোনো কিছুই ফেরত যায়নি। তবে আমি এখনও কাজ সমাপ্তির প্রতিবেদন পাইনি। প্রতিবেদন পেলে অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। উল্লেখ্য থাকে যে বাকি বিল্লার নামে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাধ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সব দুনীতির ঘটনার পয্যায় ক্রমে প্রকাশ হতে থাকলে বাকি বিল্লাহ তরিঘড়ি করে কাপাসিয়া থেকে বদলী... হয়ে অনত্র চলে যান ।

(এসকেডি/এসপি/আগস্ট ০৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test