E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদারীপুরের দুই স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

২০১৯ আগস্ট ০৭ ১৬:৫৯:১১
মাদারীপুরের দুই স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর শহরে অবস্থিত দু‘টি ঐতিহ্যবাহী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হলো সরকারি ডনোভান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি ইউনাইটেড ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। 

এই দুই স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ সব অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে রয়েছে ভর্তি বাণিজ্য, জেএসসির রেজিস্ট্রেশন ও ফরম ফিলাপে অতিরিক্ত ফি আদায়, অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থী ভর্তি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে অতিরিক্ত শাখা খোলা, ছাত্র হোস্টেলে বসবাস, প্রাইভেট পড়াতে উৎসাহ দিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে সুবিধা আদায়সহ নানা অভিযোগ।

অভিযোগ অনুসন্ধান করে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ডনোভান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ৪র্থ, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে যে সকল ছাত্রী কৃতকার্য হতে পারেনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক রতন কুমার খাঁ নিয়ম বহির্ভূতভাবে গত কয়েক মাস ধরে আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিতে বেশকিছু ছাত্রী ভর্তি করেছেন। ভর্তিকৃত ছাত্রী প্রতি ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। বিদ্যালয়ের সভাপতি ও জেলা প্রশাসকের কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্বেও প্রধান শিক্ষক সভাপতির নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিতে নিয়ম বর্হিভূতভাবে ছাত্রী ভর্তি করেছেন বলে অভিযোগ আছে।

এ ছাড়া জেএসসি (অষ্টম শ্রেণি) প্রায় ৩‘শ পরীক্ষাথীর রেজিস্ট্রেশন করার সময় প্রত্যেক ছাত্রীর কাছ থেকে বোর্ড ফি ১২০ টাকার স্থলে ৩‘শ টাকা পর্যন্ত এবং জেএসসি (অষ্টম শ্রেণি) ফরম ফিলাপে দুইশ পঞ্চাশ টাকার পরিবর্তে ৩’শ টাকার বেশি আদায় করেছেন। এসব টাকা আদায় করা হলেও প্রায় ক্ষেত্রে কোন রশিদ দেয়া হচ্ছে না।

অভিযোগ আছে, বার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্রীদের টাকার বিনিময়ে উত্তীর্ন করছেন। ছাত্রীদের দিয়ে জোর করে গাইড বই কিনতে বাধ্য করছেন। গাইড বই পাঠ্য করার জন্য ৩ লাখ টাকা কমিশন নিয়েছেন। এ সব অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সম্প্রতি স্কুলের মাসিক পাঠ মূল্যায়ন সভায় সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। এ সব অনিয়মের কারণে সাধারণ শিক্ষকদের তোপের মুখে পড়েন প্রধান শিক্ষক।

শিক্ষকরা প্রশ্ন করলে তিনি তার এসব অনিয়মের সঠিক জবাব দিতে পারেননি। তবে ঐ বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকরা চাকুরীতে সমস্যা হবার ভয়ে সাংবাদিকদের কাছে নাম না প্রকাশের অনুরোধ করেছেন।
এছাড়াও নিয়মিত ক্লাসের তদারকী করার নিয়ম থাকলেও প্রধান শিক্ষক তা করেন না। গত ১ আগস্ট স্কুলের প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণির বহু ছাত্রীকে অংক ও ইংরেজি বিয়য়ে ফেল করানো হয়। পরে অভিভাবকদের তোপের মুখে এসব খাতা পূনমূল্যায়ণ করে তাদের পাস করানো হয়। অনেক অভিভাবক স্কুলের অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা জানলেও সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। প্রধান শিক্ষকের এসব অপকর্মের কারণে শিক্ষকদের চেইন-অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

এ ব্যাপারে সরকারি ডনোভান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন কুমার খাঁ তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রেজিস্ট্রেশন বা ফরম ফিলাপের জন্য আমরা ছাত্রীদের কাছ থেকে কোন বাড়তি টাকা নিচ্ছি না।

এ ব্যাপারে ঐ স্কুলের একাধিক শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে আরো বলেন, জেলার একমাত্র সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রধান শিক্ষকের জন্য নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে যদি সঠিক তদন্ত করা হয়, তবে তার বিরুদ্ধে আরো অনেক দুর্নীতি ও অনিয়ম বেড়িয়ে আসবে।

একই ধরণের অভিযোগ উঠেছে সরকারি ইউনাইটেড ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। রয়েছে ভর্তি বাণিজ্য, জেএসসির অতিরিক্ত রেজিস্ট্রেশন ফি আদায়, আর্থিক সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ।

আরো অভিযোগ আছে, প্রধান শিক্ষক জেলা প্রশাসকের নাম ভাঙ্গিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন দুটি শাখা খুলে অতিরিক্ত ২ শতাধিক ছাত্র ভর্তি করেছেন। এতে পৌর এলাকার বেসরকারি স্কুলগুলো ছাত্র সংকটে পড়েছে। প্রধান শিক্ষক আগামী বছর থেকে ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে নতুন আরো দু‘টি করে শাখা খুলবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যা মন্ত্রণালয়ের বিধি বহির্ভূত। নতুন শাখা খুললে পৌর এলাকার সকল বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আরো শিক্ষার্থী সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ ছাড়া প্রধান শিক্ষক স্কুলের সাধারণ শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়াতে উৎসাহ যুগিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। তার উৎসাহে শিক্ষকরা ২৫-৩০ জনের ব্যাচে মাসে ১০/১২ দিন পড়িয়ে জনপ্রতি ১ হাজার টাকা করে আদায় করছেন। এ বাবদ তাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে সরকারি শতকরা ৪০ ভাগ বাসা ভাড়া বাঁচানোর জন্য প্রধান শিক্ষক তার সরকারি বাস ভবনে না থেকে ছাত্র হোস্টেল দখল করে ৫ লক্ষাধিক টাকা দিয়ে সংস্কার করে সপরিবারে বসবাস করছেন বলে নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান।

এছাড়াও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন আরো অনেক অভিযোগ উত্থাপন করে পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, ঢাকা অঞ্চল বরাবরে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এক অভিভাবক।

ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র, সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের সাবেক ভিপি ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জাহিদ হোসেন অনিক বলেন, জেলার দুটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল হলো সরকারি ইউনাইটেড ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি ডনোভান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। এ দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যদি দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে যুক্ত থাকে তা হলে জেলার পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। শিক্ষকরা শিক্ষাঙ্গণে দুর্নীতি করবে তা আমরা ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে কখনো মেনে নিবো না। দুর্নীতি ও অনিয়মের কঠোর নিন্দা জানাই। সাথে সাথে দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানাই। এদের শাস্তি না হলে প্রয়োজনে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করবো।

সরকারি ইউনাইটেড ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয়ে স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির একটি শাখা খোলার বিষয় আবেদন করা হয়েছে। আমরা ওই শাখায় ক্লাস শুরু করে দিয়েছি। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মান নিয়ে কোন অসুবিধা নেই।’

ছাত্রাবাসে বসবাস করা বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছাত্রাবাসের ভবনটি পরিত্যাক্ত পড়েছিল। তিন বছর ধরে আমি সংস্কার করে বসবাস করছি। এর জন্য আমি ব্যক্তিগত ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ করেছি। সরকারি হিসাবে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে ভাড়াও দিচ্ছি। এটা অবৈধ কিছু নয়।

এ ব্যাপারে ওই দুই সরকারি বিদ্যালয়ের সভাপতি মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনে ফি বাড়তি নেয়া, টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থী ভর্তি এ সব বিষয়ে আমাকে কেউ কখনো কিছু বলেনি। আমি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। বিষয়গুলো জেনে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।

(এএস/এসপি/আগস্ট ০৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test