E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে দুই আ.লীগ নেতার বাড়িতে ভাংচুরের অভিযোগ

২০১৯ আগস্ট ৩০ ১৪:১৪:২২
গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে দুই আ.লীগ নেতার বাড়িতে ভাংচুরের অভিযোগ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : গোয়েন্দা পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা হাইকোর্টের জামিনে থাকা দু’ আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ও চিংড়ি ঘেরের বাসায় ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাপষণ্ডা গ্রামে বৃহষ্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে ঘণ্টাব্যাপি এ ভাঙচুর চালানো হয়।

আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের প্রচার সম্পাদক রায়হানউদ্দিন সরদার ওরফে খোকা জানান, গত ১০ আগষ্ট রাতে পবিত্র কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে তিনবস্তা সরকারি চালসহ ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমের ঘের কর্মচারি অরিফ গাজীকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায় পুলিশ। ডালিম চেয়ারম্যানের প্রতিপক্ষ হিসেবে ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রমজান আলী ওই চালসহ আরিফকে ধরিয়ে দিয়েছে এমন অভিযোগে গত ২২ আগষ্ট তার(রমজান) উপর হামলা চালায় খালিয়া গ্রামের তারামনি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী কবীর হোসেন, রফিকুল হত্যা ও কয়েকটি নাশকতা মামলার আসামী বিএনপি নেতা আব্দুস সাত্তারসহ চেয়ারম্যানের সমর্থক সন্ত্রাসীরা। রমজানের উপর হামলার খবর পেয়ে তার সমর্থকরা পাল্টা হামলা চালায়।

এতে উভয়পক্ষের সাতজন আহত হয়। চেয়ারম্যান সমর্থক মহসিন আলী বাদি হয়ে তাকে (খোকা), রমজানসহ ১৬ জনের নামে পরদিন আশাশুনি থানায় মামলা করে। রমজান বাদি হয়ে অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। গত বুধবার আফসার ব্যতীত তিনি ও রমজানসহ ১৫ জন হাইকোর্টের বিচারপতি আব্দুল হাফিজ ও বিচারপতি আব্দুল করিমের আদালত থেকে চার সপ্তাহের জন্য অগ্রিম জামিন লাভ করেন। বৃহষ্পতিবার সকালে জামিন সংক্রান্ত কাগজপত্র মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক ইসারত আলীর কাছে জমা দেন।

সরেজমিনে শুক্রবার সকালে কাপষণ্ডা গ্রামে গেলে প্রত্যক্ষদর্শী সাবিনা খাতুন, মাসুরা খাতুন, জরিনা খাতুন ও তাহমিনা খাতুন জানান, বৃহষ্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে একজন সাদা পোশাকের পুলিশসহ ছয়জন গোয়েন্দা পুলিশ তাদের বাড়িতে এসে খোকা কোথায় জানতে চায়। বাড়িতে নেই বলার সাথে সাথে তারা তারা বারান্দায় থাকা আয়না ও ঘরের মধ্যে ঢুকে গ্যাসের চুলা, রাইস কুকার ও টুল ভাঙচুর করে। সে বুধবার হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে বলার সাথে সাথে শুক্রবারের মধ্যে সেকেণ্ড স্যার রিয়াদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ না করলে আরো বেশি ক্ষতি হবে বলে হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা হকি স্টিক নিয়ে তাদেরকে হুমকি দেয়।

কাপষণ্ডা গ্রামের হাফিজা খাতুন বলেন, একটি মাইক্রোবাস ও দু’টি মহেন্দ্রযোগে খোকার বাড়ি থেকে চলে এসে গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক রিয়াদুল ইসলাম, উপপরিদর্শক হুমায়ুন কবীরসহ কয়েকজন পুলিশ ও কাপষণ্ডা গ্রামের চেয়ারম্যান পালিম সমর্থক হাফিজুল,মফিজুল, চেউটিয়া গ্রামের লিটু , কালাম, আজিজুল ও কবীর হোসেনসহ কয়েকজন তাদের বাড়িতে আসে। স্বামী রমজান কোথায় আছে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা আছে বলার সাথে সাথে বসত ঘরের দরজায় লোহার রড ও হকি স্টিক দিয়ে দরজা ভাঙার চেষ্টা করে পুলিশ। দরজা খুলে দেওয়ার পর পুলিশ ছাদে উঠে ১০০ ওয়ার্ডের সোলার প্যানেল ভেঙে ফেলে। ননদ সাজিদা খাতুন প্রতিবাদ করায় পুলিশ বলে রমজান মামলার আসামী তাই তাকে ধরতে এসেছি। সে বুধবার হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে, কাগজ থানায়জমা দেওয়া হয়েছে বললে তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের ভিতরকার আলনা, টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।

ভাঙচুর করা হয় ছেলে সুমনের স্কুলে যাওয়ার বাই সাইকেলটি। পরে বারান্দায় থাকা নতুন লাল রং এর এপাচি ১৫০ সিসি মোটর সাইকেলের আংশিক ভাঙচুর করে ঠেলতে ঠেলতে রাস্তার দিকে নিয়ে যায় পুলিশ। মফিজুলের মুদি দোকানের সামনে যেয়ে নেমপ্লেটের স্থলে ব্যাংকে জমা দেওয়ার টাকার রসিদ পুড়িয়ে ফেলে তারা। চলে যাওয়ার আগে রমজানকে ক্রস ফায়ারে দেওয়া হবে বলে চলে যায় পুলিশ। এ সময় গ্রাম পুলিশ সামছুর রহমান পুলিশের সঙ্গে ছিল। বিষয়টি তার স্বামী রমজান আলী আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার ও খুলনা রেঞ্জের উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক সাহেবকে অবহিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা মঈরুদ্দিন সরদার জানান, রমজানের বাড়িতে পুলিশ গেছে খবর পেয়ে তিনি সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করলে হাতে থাকা হকি স্টিক, লোহার রড ও পিঠে অস্ত্র থাকা পুলিশ বাধা দেয়। তবে তাদের বাড়ির আসবাবপত্র ও সোলার লাইট ভাঙচুরের শব্দ তিনে শুনেছেন। পুলিশ চলে যাওয়ার পর তিনিসহ কয়েকজ যেয়ে ভাঙচুরের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। রমজান আসামী হলে থানার পুলিশ আসবে, অথচ হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পর থানার পুলিশের পরিবর্তে গোয়েন্দা পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা কিভাবে একজন যুবলীগ নেতার বাড়িতে হামলা চালালো সেটা তার বোধগম্য হচ্ছে না।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক হুমায়ুন কবীর শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, রমজান ও খোকা আশাশুনি থানার জিআর ২০৯/১৯ নং মামলার আসামী রমজান ও খোকা। তাদেরকে ধরতে তিনিসহ গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন সদস্য তাদের বাড়িতে বৃহষ্পতিবার রাতে যান।

ভাঙচুর ও ক্রস ফায়ারের হুমকির কথা অস্বীকার করে বলেন, রমজানের ওয়ান টেষ্ট মোটর সাইকেলটি তাদের জিম্মায় আছে। একটু প্রস্তুত হয়ে এলে মোটর সাইকেলটি রমজানকে দিয়ে দেওয়া হবে। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্তকারি কর্মকর্তার পরিবর্তে তারা কেন হাইকোর্টের জামিনে থাকা আসামীদের ধরতে গেলেন এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ৩০, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test