E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হালদা রক্ষায় হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের অভিযান কি শুধুই আইওয়াশ!

২০১৯ আগস্ট ৩০ ১৭:৩৪:১১
হালদা রক্ষায় হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের অভিযান কি শুধুই আইওয়াশ!

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : হালদা নদী হতে বালু উত্তোলন চলছেই। ফলে তীর রক্ষাবাঁধের অনেকাংশে তলিয়ে ঘরবাড়ি বিনষ্ট হচ্ছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে বলে অনেকের দাবি।

আরো অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকতার যোগসাজেসে সিন্ডিকেট দলটি প্রায় সময় দিনদুপুরে হালদা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে।

ফলে পরিসংখ্যান বলছে দিন দিন হালদায় কমে যাচ্ছে মাছের পোনা। এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয়দের। তবে কী হালদা রক্ষায় হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের অভিযান শুধুই আইওয়াশ! না সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দেওয়া।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অবৈধভাবে হালদা নদী থেকে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের কিছু অতি অর্থলোভী নেতারা। যদিও অজ্ঞাত কারণে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অনেকটা নির্বিকার।

জানা গেছে, হালদা নদীতে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে কার্পজাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ) মা-মাছ ডিম ছাড়ে। এ সময় রাউজান-হাটহাজারীর ডিম সংগ্রহকারী ও মৎস্যজীবীরা নদী থেকে নৌকা ও জাল বসিয়ে মাছের ডিম সংগ্রহ করেন। এ কারণে মা-মাছ রক্ষায় হালদা নদীকে মৎস্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করে মৎস্য মন্ত্রণালয়।

এছাড়া নদীতে ছয় মাস যান্ত্রিক নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে। এর মধ্যে নাজিরহাট থেকে কালুরঘাট হালদা নদীর মোহনা পর্যন্ত সারা বছর মাছ শিকার ও বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়।

অথচ প্রভাব খাটিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু উত্তোলন করে প্রতি ফুট বালু ১৩ টাকা দরে উপজেলার নাঙ্গলমোড়া, ছিপাতলী, গুমানমর্দ্দন, মেখল, মির্জাপুর ইউনিয়নসহ রাউজান ও ফটিকছড়িসহ চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন জিপ (চাঁদের গাড়ি) এবং যান্ত্রিক নৌযানে করে বিক্রি করছেন।

নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারীরা জানান, প্রভাব কাটিয়ে প্রায় এক বছর ধরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হালদা থেকে বালু উত্তোলন ও তা বিক্রি করছে। শ্রমিক দিয়ে ভাটার সময় নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ফলে হালদার গভীরতা বৃদ্ধি ও ভাঙনে এর তীর রক্ষাবাঁধ ও স্থানীয় বসতঘর নদীতে বিলীন হচ্ছে।

পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার হালদা নদীর আজ করুণ অবস্থা। যেখানে রুই জাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে এবং নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। যদিও রুই জাতীয় মাছের "জীনগত মজুদ" সম্পূর্ণ অবিকৃত রয়েছে রয়েছে বলে দাবি এই হালদায়।

হালদা নদী কেবলমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ঐতিহ্য নয়, এটি ইউনেস্কোর শর্ত অনুযায়ী বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্যেরও যোগ্যতা রাখে। সুতরাং এ নদী রক্ষার দায়িত্ব সকলের।

২৯ আগষ্ট বৃহস্পতিবার জাতীয় দৈনিক যুগান্তর এর শিরোনাম ‘হালদায় বালু উত্তোলন’ ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় ‘নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু উত্তোলন চলছেই’ সংবাদ প্রকাশ হলে তড়িগড়ি করে একইদিন দুপুরে হাটহাজারী উপজেলার লাঙ্গলমোড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে হালদা তীরবর্তী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ড্রেজার জব্দ না করে কয়েকটি পাইপ পুড়িয়ে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রুহুল আমীন। তা নিয়ে এলাকায় নানা সমালোচনা ও গুঞ্জন উঠেছে। কেন না বালু উত্তোলনের সময় প্রশাসন নীরব থাকে আর মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হলে নামে মাত্র আইওয়াশ অভিযান দেখিয়ে বাহবা কুড়াতে ব্যস্ত এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র হালদা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিল। অব্যাহত বালু উত্তোলনের ফলে হালদার বিভিন্ন অংশে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হয়। বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত স্থাপনা গুড়িয়ে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত পাইপ বিভিন্ন মেশিনারিজ পুড়িয়ে দেয়া হয়।’

একই সময়ে ড্রেজর জব্দ করা হলো না কেন প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে জানান, ‘নদীর ক্ষতি করে কাউকেই কোন ধরণের অনৈতিক সুবিধা প্রদান করা হবে না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বালু উত্তোলন বিষয়টি আমার জানা ছিল না, এখন শুনেছি। আমি বালু উত্তোলন বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

(জেজে/এসপি/আগস্ট ৩০, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test