E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নড়াইলে অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর সমাবেশ ও মানববন্ধন

২০১৯ সেপ্টেম্বর ০৫ ১৫:৪৫:২৩
নড়াইলে অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর সমাবেশ ও মানববন্ধন

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত লক্ষীপাশা মহিলা আদর্শ  ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ তরফদার কামরুল ইসলামের আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজণপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। ইতোমধ্যে অধ্যক্ষের দুর্নীতির  খন্ড চিত্রের ফিরিস্তি তুলে ধরে পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যাপক পোষ্টার ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের অপসারনের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের সামনে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। 

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাবেক ইউপি সদস্য বাবন শেখ, লোহাগড়া পৌরসভার কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল হাই সরদার, সমাজসেবক বি.এম লিয়াকত হোসেন, ইউসুফ আলী, শিক্ষক লিটন রেজা, ছাত্রনেতা রাসেল মাহমুদ প্রমুখ। ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মানবন্ধনে এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষজন উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৯৫ নারী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টায় উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে লক্ষ্মীপাশা আদর্শ মহিলা কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। চাকুরী বিধি মোতাবেক ২০০৩ সালে অবসরে যান প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ শেখ এখলাছুর রহমান। ২০০৬ সালে কলেজে যোগদান করেন তরফদার কামরুল ইসলাম।

তরফদার কামরুল ইসলাম অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তিনি অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন বলে সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন। তিনি একের পর এক দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও কথায় কথায় অধীনস্থদের হুমকি-ধমকি দিয়ে জিম্মি করে রেখেছেন কলেজের প্রশাসনিক কাজকর্ম। গড়ে তুলেছেন চাটুকার শিক্ষক ও কর্মচারি। আর তাদের নিয়ে সিন্ডিকেট করে কলেজ হ-য-ব-র-ল ভাবে পরিচালনা করছেন। আর এ কারনে স্থবির হয়ে পড়ে আছে কলেজের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। অধ্যক্ষ তরফদার কামরুল ইসলাম পূর্বে সহকারী অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন যশোর জেলার তালবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে। সেখানে সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারনে চাকুরীচ্যুত হন। এর আগে তিনি নড়াইলের কালিয়া শহীদ আব্দুস সালাম ডিগ্রী কলেজে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তৎকালিন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ছিলেন তিনি। দলীয় ক্ষমতার জোরে নিয়োগ বিধি লংঘন করে অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ পান লক্ষীপাশা অদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজে।

যোগদানের পর ২০১২ সালে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের অজুহাতে প্রায় দু’বছর কলেজে অনুপস্থিত থেকে বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন বলে অভিযোগ। এ সময় তিনি বাড়িতে বসে তথাকথিত ডিগ্রি অর্জন করলেও কলেজের বেতন ও আনুতোষিক ভাতা উত্তোলন করেন প্রায় ৬ লক্ষ টাকা। কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ। সম্প্রতি একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি ফি ১হাজার টাকার স্থলে ২হাজার ৫’শ, এইচ এসসি ও বিএ প্রথম বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষ ফর্ম পূরণে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত আদায়, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ সালের আগষ্ট মাস পর্যন্ত ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন। এ ছাড়াও কলেজ তহবিল থেকে ৯ লক্ষ ৪৮হাজার ২’শ ৫০ টাকা এবং সরকারি তহবিল হইতে ৬ লক্ষ টাকা আত্মসাত সহ নানা অভিযোগ ও অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয় পোষ্টার ও লিফলেটে। এ ঘটনায় ল্হোাগড়া পৌর শহর জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সুধীজনদের দাবি, অধ্যক্ষের দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ তরফদার কামরুল ইসলাম বলেন, তিনি ঢাকাতে রয়েছেন, তবে শুনেছেন তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসি পোষ্টার ও লিফলেট বিতরণ করেছে।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপাশা আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, অধ্যক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি আমার গোচরে রয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(আরএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test