E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ঈষিকার চিত্রকর্ম ‘অন্য আলোয় শিল্পী এমএ জলিল’

২০১৯ সেপ্টেম্বর ০৭ ২৩:১৪:৩৮
ঈষিকার চিত্রকর্ম ‘অন্য আলোয় শিল্পী এমএ জলিল’

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ফুলে ফুলে ভরে উঠলো ঈষিকা জলিল বেদী। শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বিশুদ্ধ সাংস্কৃতিক চেতনার মানুষ চিত্রশিল্পী এমএ জলিল। অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলেন গ্যালারি উপচে পড়া শুভাকাংখীরা। অশ্র“সজল হয়ে উঠলো যেনো তার রেখে যাওয়া সব চিত্রকর্ম। অন্য আলোয় উদভাসিত হলেন সদ্য প্রয়াত চিত্রকর এমএ জলিল। 

‘অপলক নেত্রে চেয়ে থাকি আমি, হৃদয়ের গভীরে অনুভবি আমি, তোমার মুক্ত চিন্তা আমাকে বিশুদ্ধ করে তোলে বারবার। আমাকে স্বপ্ন দেখায় ভষ্যিতের’।এমন সব অভিব্যক্তি হৃদয়ে গেঁথে নিয়ে গেলেন তার সুহৃদরা।
শনিবার বৈকালিক ভাদ্রের স্নিগ্ধ রোদ ছায়ায় এভাবেই নিজেদের হৃদয়ের ভাষা তুলে ধরলেন তার পথের সাথীরা। বললেন জলিল চলে গেছে। কিন্তু জলিলের শিল্পকর্ম ঠাঁই পেয়েছে আমাদের গভীরে । আমরা তাকে স্মরণে রাখবো তার চিত্রশালায় মনোযোগ দিয়ে।বারবার তাকে বুঝতে চাইবো, চিনতে চাইবো অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ,মুক্তমনা মানুষ,বাঙ্গালি চেতনার ধারক বাহক চিত্রশিল্পী এমএ জলিলকে।

তাকে নিয়ে আমরা ভালবাসবো বাংলাদেশকে, জীবন ও প্রকৃতিকে। ভালবাসবো শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের, ভাষা শহিদদের, শরিক হবো সব গণতান্ত্রিক মিছিলে সংগ্রামে। শিল্পী জলিলের তাই মৃত্যু নেই, অনন্তলোকে শিল্পী জলিলের রং তুলি থেমে থাকবে না থেমে যাবে না তার পথচলা।

জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই নাগরিক শোকসভা। শিল্পী জলিলের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অশ্র“সজল অনুষ্ঠানমালা। বক্তারা তাদের হৃদয় ভেঙ্গে তুলে ধরেন আপন মানুষটির কথা।

‘তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম’ কন্ঠশিল্পী আবু আফফান রোজবাবুর দরাজকন্ঠে গাওয়া গানের মধ্য দিয়েই শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন। ঘন্টাব্যাপী প্রামান্য চিত্র প্রদর্শনের সাথে সাথে উঠে এলো সব ভক্ত সুহৃদের প্রাণের কথা। তারা নিজেদের মতো করে শিল্পী জলিলের কথা বললেন। শিল্পী জলিলকে উদ্দেশ্য করে কবি দিলরুবা আবৃত্তি করলেন ‘এবার সময় হয়েছে নিকট, এখন সময় হয়েছে যাবার’। আর শিল্পী চৈতালি মুখার্জীর কন্ঠে ভেসে এলো ‘মরনের পরে আমার স্মরণে গড়ো না তাজমহল’।

স্মরণ অনুষ্ঠানের অতিথি জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন ‘ আমি শ্রদ্ধা ভালোবাসা জানাতে এসেছি। আমি মৃত্যু নয় জীবনের কথা বলতে এসেছি। আমি এমএ জলিলের স্বপ্নের কথা বলতে ও শুনতে এসেছি। আমি ব্যথিত, আমি শোকস্তব্ধ, আমার আক্ষেপ কেনো আমি জলিলের ঈষিকায় অংশ নিতে পারিনি। জলিল মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। জলিলের স্বপ্নের তুলিতে সব বাধা ভেঙ্গে যাক, আলোকময় সমাজের লক্ষ্যে। আমার আক্ষেপ তার রং তুলিতে আর অংকিত হবে না নিষ্প্রাণ প্রাণসায়ের খাল। তার তুলিতে আর নতুন করে উদভাসিত হবেনা ভোরের আলো, বিশুদ্ধ রুচিশীল শিল্প সংস্কৃতি,বাংলাদেশ,মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা সংগ্রাম। মুক্তমনের প্রতিধ্বনি ঝংকৃত হবেনা কোনো দিন। তবু জলিল বেঁচে থাকবেন তার শিল্পকর্মে’।

নাসরিন খান লিপি গাইলেন জলিলের প্রিয় গান ‘আমিও পথের মতো হারিয়ে যাবো। আমিও আর নদীর মতো ফিরে আসবো না কোনোদিন------- একলা এসেছিলাম আমি একলাই চলে যাবো, আসবো না ফিরে কোনোদিন’।।
শোকস্তব্ধ অনুষ্ঠানের আরেক অতিথি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন এমএ জলিলের মতো ক্ষণজন্মা মানুষকে স্মরণে রাখতে হবে। এমএ জলির তার শিল্প বাতিঘর ঈষিকায় গড়ে তুলেছিলেন এক মিলন মেলা।
শিল্পী এমএ জলিল নাগরিক শোকসভা আয়োজক কমিটির আহবায়ক, স্মরণ অনুষ্ঠানের সভাপতি তালা কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন ‘আমরা জলিলকে হারিয়ে আরও জলিলের সন্ধান চাই। আমরা তার শিল্প কর্মকে প্রাণবন্ত করে স্মরণে রাখতে চাই। তার স্বপ্ন পূরণে গড়ে তুলতে চাই জলিল আর্ট গ্যালারি। আমি জলিলকে বারবার দেখতে চাই,যেমনটি দেখেছি ৪৪ বছর ধরে। জলিলের চিত্রকর্ম আমাদের অণুপ্রাণিত করে। আমাদের সংগ্রামী করে তোলে । আমাদের মুক্তচিন্তায় বাতি জ্বালায়।

নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাহিমুল হক কিসলুর স্বাগত বক্তব্য আর শোকসভা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান মাসুমের সঞ্চালনায় শোকাবহ অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে হৃদয়স্পর্শী। সুহৃদদের হাত দিয়ে ‘অন্য আলোয় শিল্পী জলিল’ এর মোড়ক উন্মোচিত হয়। এ সময় প্রয়াত শিল্পীর একটি প্রতিকৃতি উঠে আসে তার পত্নী লতিফুন নাহার লতার হাতে।

সব শেষে শিল্পী শামীমা পারভিন রত্নার করুন কণ্ঠে ভেসে এলো ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ণ এই বাটে, আমি বাইবো না , বাইবো না মোর খেয়া তরী এই ঘাটে গো। চুকিয়ে দেবো বেচাকেনা,মিটিয়ে দেবো গো, মিটিয়ে দেবো লেনাদেনা, বন্ধ হবে আনাগোনা এই বাটে’ ।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test