E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লক্ষ্মীপাশা আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজ

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শিক্ষক-কর্মচারীদের

২০১৯ সেপ্টেম্বর ১৪ ১৫:৫১:৫১
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শিক্ষক-কর্মচারীদের

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা সদরের লক্ষ্মীপাশা আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ তরফদার কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, অশোভন আচরণ ও হয়রানিসহ নানা অভিযোগ করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। গত ৭ সেপ্টেম্বর কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জেলা প্রশাসক আনজুমান আরার নিকট অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।


এ অভিযোগের শুনানি গ্রহণের সময়ে অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী অধ্যক্ষের সামনেই তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর বিকেল পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত কলেজের দোতলায় কম্পিউটার ল্যাবরেটরি কক্ষে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে গত ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদের সামনে লোহাগড়া-নড়াইল সড়কে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করে মানববন্ধন থেকে তাঁর অপসারণ দাবি করা হয়। এ মানববন্ধনে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে উপজেলা সদরে ব্যাপকভাবে পোস্টার সাঁটা হয়েছে। বিতরণ করা হয়েছে প্রচারপত্র। ৪১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এসব বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজার কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন।

কলেজের পিয়ন শিকদার শফিউল হাসানকে নিয়োগের পর থেকে গত দুই বছর ধরে নড়াইল সদরে অধ্যক্ষের নিজের বাড়িতে রেখে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন শফিউল হাসান নিজেই। এরপর থেকে অধ্যক্ষ ও তাঁর আত্মীয়-স্বজনেরা নানা হুমকি দিচ্ছেন বলে গত ১০ সেপ্টেম্বর তিনি লোহাগড়া থানায় জিডি করেছেন।

লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মোকাররম হোসেন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গত ১২ সেপ্টেম্বর বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত অধ্যক্ষ ও সকল শিক্ষক-কর্মচারীর সামনেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধের শুনানি গ্রহণ করেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। শুনানি নেন জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুকুল কুমার মৈত্র, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সাবেক সাংসদ শেখ হাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস, আজিজুর রহমান ও মো. বাদশা শেখ।

ওই শুনানি বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে অধ্যক্ষের নানা আর্থিক অনিয়ম, শিক্ষকদের গালাগাল করা, কর্মচারীদের মারধর ও গালাগাল করা, ছুটিসহ নানা কাজে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, ৩-৪ জন শিক্ষক ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর সঙ্গে নানা হয়রানি ও বৈষম্যমূলক আচারণ, ছয়জন শিক্ষক-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা, অন্যদের প্রায়ই বরখাস্তের হুমকি দেওয়াসহ এমন নানা অভিযোগ করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, অধ্যক্ষ দুর্নীতির টাকায় নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুরে একটি আলিশান বাড়ি গড়ে তুলেছেন।

শুনানি শেষে সুবাস চন্দ্র বোস প্রস্তাব দেন, এখন দুুটি পথ আছে একটি হলো ভবিষ্যতে অধ্যক্ষ সঠিকভাবে চলবেন এর ভিত্তিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে সমঝোতা করা। আরেকটি হলো তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী এ সময়ে তদন্ত ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। একজন পিওন বলেন, সমঝোতা করে অধ্যক্ষ বহাল হলে এ কলেজে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি করার আর পরিবেশ থাকবে না।

ইউএনও মুকুল কুমার মৈত্র বৈঠকের এসব বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে ১৩সেপ্টেম্বর শুক্রবার বলেন, ‘৮০ ভাগ শিক্ষক-কর্মচারী অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। তাঁরা আর অধ্যক্ষকে চাইছে না। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। হয়তো দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে ওই বৈঠকে অধ্যক্ষ কোনো কথা বলেননি। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী একজোট হয়ে আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা শুনানি নিয়েছেন। বিষয়টি তাঁরা দেখবেন।

(আরএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test