E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

পদ্মাপাড়ে এখনও চলছে হাহাকার

২০১৪ আগস্ট ০৩ ১১:৪২:১২
পদ্মাপাড়ে এখনও চলছে হাহাকার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : গঙ্গারামপুর, ফারাকপুর ও বৈরাগীর চর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মাপারের ছোট্ট তিনটি গ্রাম। এ গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে এখনও চলছে কান্নার রোল, চলছে হাহাকার। গত মঙ্গলবার সকালে দেশের আর দশটা গ্রামের মতো ঈদের আনন্দ ওই গ্রামগুলোতেও শুরু হয়েছিল। কিন্তু বেলা গড়িয়ে বিকেল হতেই সেই আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। ঈদের আনন্দে পদ্মায় নৌভ্রমণে গিয়ে নিখোঁজ হন ওই তিন গ্রামের বেশ কয়েকজন পুরুষ, মহিলা ও শিশু। গত তিন দিনে তাদের ১৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার সকালে গ্রাম তিনটি ঘুরে দেখা যায়, স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। প্রতিটি বাড়ীতে চলছে কান্নার রোল, চলছে হাহাকার।

ফারাকপুর গ্রামের আবু বক্করের মেয়ে সাবরিনা সিদ্দিকা বিভা। তিনি রাজশাহীতে থেকে পড়াশোনা করতেন। তাকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা। বাড়ির সামনে বসে কেঁদেই যাচ্ছেন আবু বক্কর।

আবু বক্করের বাড়ির কাছেই রাস্তার অপর পাশে স্বপন, সাহাজুল ও শিপনের বাড়ি। ওই তিন বাড়ি থেকেও ভেসে আসছে কান্নার শব্দ।

স্বপন, সাহাজুল, শিপনের বাড়িতে ও একই অবস্থা, সবার চোখে পানি।

বৈরাগীর চরের শিখা খাতুন আর ইমরান দুই ভাই-বোন। তাদের বাবা ইমারুল কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না একসঙ্গে দুই সন্তান হারানোর শোক। শিখার স্বামী মিঠুন প্রামাণিক বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

গঙ্গারামপুর গ্রামে অহিদুলের পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন। সেই পরিবারের সদস্যরা নির্বাক হয়ে পড়েছে। তবে এখনও নিখোঁজ রয়েছে তাবাসসুম কাজল নামের এক শিশু।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেন, তাবাসসুম কাজলের খোঁজে পদ্মার বিভিন্ন জায়গায় নৌকা দিয়ে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে।

দৌলতপুর থানার ওসি এনামুল হক বলেন, নিমজ্জিত নৌকাটির মাঝি আশরাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতের নির্দেশে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

পদ্মা কেড়ে নিল বিভা’র স্বপ্ন

অভাব অনটনের সংসার। বাবা আবু বক্কর সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু। মা ছন্দা আক্তার গৃহিণী হলেও অনেকটা তারই ওপর সংসারের ভার। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়ানো, বাড়িতেই গরু-ছাগল পালন আর কিছু জমির ফসলের আয় থেকে কোনো রকমে তাদের সংসার চলছিল। বাবা আর মায়ের অনেক ইচ্ছা ছিল মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। তারা অনেক চেষ্টা করে ও মেয়েকে কোনো মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাতে পারেননি। তাই বিভা রাজশাহী প্যারামেডিকেল ইনস্টিটিউটে ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হয়। এতেই খুশি হন দুর্ঘটনায় পঙ্গু বাবা আবু বক্কর আর মা ছন্দা। মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন মা-বাবা। বিভা ফাইনাল ইয়ারে ওঠেন। আর ক'দিন পরই পড়ালেখা শেষ করে বিভা একটি ভালো চাকরি পাবেন, বক্কর-ছন্দা দম্পতির স্বপ্ন পূরণ হবে। কিন্তু হঠাৎ পদ্মা নদী তাদের সব স্বপ্ন-সাধ কেড়ে নিয়েছে।

ঈদের দিন দৌলতপুর উপজেলার বৈরাগীরচর এলাকায় পদ্মা নদীতে নৌকাডুবিতে অন্যদের সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন সাবরিনা আক্তার বিভা। মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে রাজশাহী থেকে বাড়িতে এসেছিলেন বিভা। দলবেঁধে চলে যান বৈরাগীরচর গ্রামে পদ্মা নদীর পাড়ে। নদীর পাড় থেকে ৪০০ মিটার দুরে কাঁশবনের চর ওদের গন্তব্য। সে অনুযায়ী ঘাটে বাঁধা একটি ছোট মাছধরা নৌকায় চড়ে বসেন সবাই। মাথাপিছু ১০ টাকা ভাড়া, টাকার লোভে মাঝি সেন্টু ৫-৬ জনের ধারণক্ষমতার নৌকায় তুলে নেন ২০-২২ জনকে। নৌকাটি পাড় থেকে ছেড়ে কিছু দুর যাওয়ার পর প্রবল ঢেউ আর অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ডুবে যায়। স্থানীয় লোকজন এ সময় নৌকার মাঝিসহ ৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করলেও স্রোতের তোড়ে অন্যদের সঙ্গে নদীতে তলিয়ে গিয়ে মারা যান বিভা।

(কেকে/এইচআর/আগস্ট ০৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test