E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরা সিটি কলেজে শিক্ষক নিয়োগে আরো অনিয়ম ও দুর্নীতির খতিয়ান

২০১৯ অক্টোবর ২৫ ১৮:১৩:১৬
সাতক্ষীরা সিটি কলেজে শিক্ষক নিয়োগে আরো অনিয়ম ও দুর্নীতির খতিয়ান

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ২০০৫ সালের ১৯ মার্চ সিটি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান সাতক্ষীরার আশাশুনি উপাজেলার হাজরাখালি গ্রামের সাহারাবানু।  দীর্ঘদিন তিনি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়া জেলাতে বিবাহিত জীবন যাপন করছেন। 

সাহারাবানুর অভিযোগ, ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি আবু সাঈদ সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করার পর তাকে একটি জালিয়াতির মাধ্যমে পদত্যাগপত্র দেখিয়ে পদশূন্য করে ২০১৫ সালের ১০ মে সমকাল ও পত্রদূতে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন।

একইসাথে অনার্স পদেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে নিয়োগ বোর্ড গঠিত হলেও মনোবিজ্ঞানে নিয়োগ বোর্ড গঠিত হয়নি। ওই নিয়োগ বোর্ডে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সুজিত কুমার বিশ্বাস, সমাজ বিজ্ঞানে তাপস কুমার সরকার, ইসলামের ইতিহাসে রওফিকা নূর ও অর্থনীতিতে জিএম ফিরোজ কবীরকে নির্বাচিত করে তাদেরকে পরে নিয়োগ দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ২০১৫ সালের আগষ্ট মাসে মনোবিজ্ঞানসহ ১৮টি পদে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর মনোবিজ্ঞানের উত্তম কুমার সাহাকে অনার্সের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের পহেলা ডিসেম্বর উত্তম সাহাকে ডিগ্রীর মনোবিজ্ঞানের শূন্যপদে নিয়োগ করান অধ্যক্ষ আবু সাঈদ। ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর কলেজের প্যাডে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর ডিগ্রী পাসকোর্সে পদশূন্যকরণের আবেদন করান অধ্যক্ষ। যাহা সম্পূর্ণ চাকুরিবিধির পরিপন্থি।

জনবল কাঠামো বহির্ভুতভাবে অর্থনীতি বিভাগের মফিজ ২০০৩ সালে চতুর্থ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেও ২০১৮ সালে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে তার এমপিও ভুক্তি করানো হয়েছে।

এভাবে তথ্য গোপন ও জালিয়াতি করে ২০১৭ সালের মে মাসে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে এমপিওভুক্ত করান অধ্যক্ষ। ২০১৫ সালের ১০ মে সমকাল ও পত্রদূত পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্ক্যান করে পরে টেম্পারিং করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জাল করা হয়। উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগে ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে মোস্তাফিজুর রহমান নিয়োগ পেলেও তার নিবন্ধন ছিল না।

পরবর্তীতে ২০১৫ সালে নিবন্ধন হওয়ার পর নিয়োগ সংক্রান্ত সব তথ্য জালিয়াতি ও গোপন করে কাম্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী(১৫জন) না থাকার পরও এমপিও ভুক্তি করা হয়। ২০১৮ সালের ২৮ আগষ্ট ও চলতি বছরের ১২ মার্চ এর পরিপত্র অনুসারে কাগজপত্র জালিয়াতি করে অনার্স শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজকল্যান, ইতিহাসের ইতিহাস, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, মনোবিজ্ঞান, ভুগোল ও পরিবেশ, ফিন্যান্স এণ্ড ব্যাংকিং বিষয়ের এমপিওভুক্তির জন্য কাগজপত্র জালিয়াতি করেশিক্ষামন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইডে তথ্য পাঠিয়েছেন। যাহা পরবর্তীতে ১৬ জনের পক্ষে এমপিওভুক্তির জন্য পাঠানো হবে।

এদের মধ্যে ভুগোলে মুরাদুল হক, ফাইন্যান্স ও ব্যাঙ্কিং এ শ্রীপতি রায় এর এমপিও সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র জালিয়াতি ও তথ্য গোপন করে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলামের কাছে পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরার একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষাবীদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষক ও কর্মচারিদের নিয়োগ ও যোগদানের সঠিক তারিখ বেইনবেজ এবং ২০১৭ সালের ৩ ও ৪ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা ও পরিদর্শণ অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে সঠিক নিয়োগ ও যোগদান সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যাবে।

এদিকে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদ একপ্রেস বিবৃতিতে দাবি করেছেন তিনি ও সভাপতি মীর মোস্তাক আহম্বেদ রবি কলেজের কোন অনিয়ম ও দূর্ণীতির সঙ্গে যুক্ত নন। একটি মহল তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরা সিটি কলেজে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ৩ ও ৪ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রালয়ের নিরীক্ষা ও পরিদর্শণ অধিদপ্তর থেকে রাশেদুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম তদন্ত করলেও গত আড়াই বছরেও সে তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ২৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test