E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দীপাবলী ঘিরে উৎসব মুখর বরিশাল

২০১৯ অক্টোবর ২৬ ১৭:৪৩:৩৪
দীপাবলী ঘিরে উৎসব মুখর বরিশাল

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : উপ-মহাদেশের সর্ববৃহৎ দীপাবলী উৎসবকে ঘিরে বরিশাল নগরীর মহাশ্মশানে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দুইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবকে কেন্দ্র করে নগরীতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ভূত চতুর্দশী পুণ্য তিথিতে এ উৎসব হয়ে থাকে। দীপাবলী উৎসব ও মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জী জানান, এ বছর তিথি অনুযায়ী শনিবার (২৬ অক্টোবর) দীপাবলী উৎসব এবং পরেরদিন শ্মশান কালীপূজা অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি এবছরই সর্বপ্রথম এ উৎসবকে ঘিরে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের উদ্যোগে বিশেষ আইন-শৃঙ্খলা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিএমপির পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বলেন, পুরো অনুষ্ঠানকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্বিঘ্নে এ উৎসব পালনের জন্য সিটি কর্পোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

হিন্দু সস্প্রদায়ের নেতারা জানান, সমাধির ওপর হাজার হাজার মোমবাতি জ্বালিয়ে হিন্দু সস্প্রদায়ের লোকজন তাদের পূর্ব পুরুষদের স্মরণ করবে। বিগত দুইশ’ বছর ধরে উপ-মহাদেশের মধ্যে এ মহাশ্মশানকে ঘিরে সবচেয়ে বড় শ্মশান দীপাবলী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অন্য কোথাও এ রকম আলোকমালার সজ্জা দিয়ে পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি সমাধিতে দীপ জ্বালিয়ে উৎসব পালন করার নজির নেই। তাই দেশ-বিদেশের স্বজনরা শ্মশান দীপালির সময় এখানে ছুটে আসেন।

প্রতিবছর ভূত চতুর্দশীর পূর্ণ তিথিতে সমাধিতে দীপ জ্বালিয়ে এ উৎসব পালিত হয় বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে শ্মশান দীপবলী। আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার দিনভর বরিশালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছিলো। শনিবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মহাশ্মশানের দীপালিতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটবে। যাদের স্বজনরা অনুপস্থিত থাকবেন তাদের সমাধিও অন্ধকার থাকবে না। পার্শ্ববর্তী সমাধির স্বজনরা মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করে স্বর্গীয় আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করবেন।

সূত্রমতে, নগরীর পশ্চিম কাউনিয়া ও নতুন বাজার এলাকার ছয় একর জমির ওপর এ মহাশ্মশানের জন্ম বরিশাল নগরীর পত্তনের আগেই। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ধনাঢ্য জমিদারদের আর্থিক সহায়তায় নতুন বাজারে প্রথম মহাশ্মশান স্থাপিত হয়। পরে তা কাউনিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কালের বিবর্তনে কাউনিয়ার শ্মশানটির উন্নয়ন হলেও নতুন বাজারের প্রায় এক একর শ্মশানের জমি বেদখল হয়ে গেছে। পুরোনো শ্মশানের অধিকাংশ সমাধি ধ্বংস হয়ে গেলেও এখনো সেখানে ব্রাহ্মদের কয়েকটি সমাধী রয়েছে। তার পাশেই রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের পিতা সত্যানন্দা দাশ ও পিতামহ সর্বানন্দা দাশের সমাধি এখনো টিকে আছে।

শ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার বলেন, দিপাবলী উৎসবকে ঘিরে পুরো এলাকায় ২০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এবারই প্রথম শ্মশান দিপালী কমিটি উৎসবে মাদক সেবন করা হলে বা সেবন করে শ্মশান এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করা হলে তাকে তাৎক্ষনিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাছে সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্য মাদকাসক্ত চিহ্নিত করার জন্য শ্মশান এলাকার প্রবেশপথে বসানো হয়েছে মাদক চিহ্নিত করন মেশিন যা সাথে সাথে মাদকাসক্তকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে।

মহাশ্মশান কমিটির নেতারা জানান, নতুন পুরনো মিলিয়ে এখন ওই মহাশশ্মানে লক্ষাধিক সমাধি রয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার সমাধির মঠ এখন বেওয়ারিশ। এদের বংশধররা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে চলে গেছেন। পুরনো বেওয়ারিশ মঠগুলোকে সংস্কার করে যে কয়টির সন্ধান মিলেছে তাতে খোদাই করে পরিচয় লেখা হয়েছে।

মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জী জানান, পুরাকীর্তি আর দৃষ্টিনন্দন এ পবিত্র মহশ্মশানে রয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিল্পবী দেবেন ঘোষ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী মনোরমা মাসিমা, শিক্ষাবিদ কালি চন্দ্র ঘোষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমাধি।

(টিবি/এসপি/অক্টোবর ২৬, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test