E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শ্বশুর-শাশুড়িকে খাবার না দিয়ে নির্যাতন : পুত্রবধূর কারাদণ্ড

২০১৯ অক্টোবর ৩০ ১৭:২১:৫৩
শ্বশুর-শাশুড়িকে খাবার না দিয়ে নির্যাতন : পুত্রবধূর কারাদণ্ড

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে খাবার না দিয়ে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিতে মারধরের অভিযোগে পুত্রবধূ মনিকা বৈরাগীকে মঙ্গলবার রাতে এক মাসের কারাদনণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ৩নং বাগধা ইউনিয়নের আস্কর গ্রামে। বৃদ্ধ শ্বশুর ভবসিন্ধু বৈরাগী (৬৭) ওই গ্রামের মৃত যোগেশ বৈরাগীর ছেলে।

মঙ্গলবার রাতে দণ্ডপ্রাপ্ত মনিকা ভবসিন্ধু বৈরাগীর বড় ছেলে ভ্যান চালক খোকন বৈরাগীর স্ত্রী মনিকা বৈরাগী (৩৫)। বুধবার সকালে দন্ডপ্রাপ্ত মনিকাকে বরিশাল কেন্দ্রীয় জেলে প্রেরণ করছে পুলিশ।

ভবসিন্ধু বৈরাগী জানান, গত ছয় মাস যাবত তাকে ও তার স্ত্রী বিমলাকে ঘরের বারান্দায় থাকতে বাধ্য করছে পুত্রবধু মনিকা। কোন রকমে বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রী বারান্দায় থাকলেও তাদের কোন খাবার দেয়না পুত্রবধূ মনিকা। রান্নাঘরে রান্না করতে গেলে গালাগাল থেকে শুরু করে তাদের মারধর করলেও মনিকার অশ্রাব্য ভাষার কারণে বাড়ির কোন লোকও তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি।

ঘর থেকে তাড়িয়ে দিতেই তাদের উপর পুত্রবধু এমন অমানবিক আচরণ ও নির্যাতন চালিয়ে আসছে জানিয়ে গত ২৩ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন বৃদ্ধ ভবসিন্ধু বাড়ৈ। ভবসিন্ধুর ছোট ছেলে অসীম বৈরাগী পূর্বে ঢাকায় একটি ফার্মে কর্মরত থাকা অবস্থায় সেখান থেকে টাকা-পয়সা চুরি করে একই উপজেলার সাহেবেরহাট এলাকায় আলাদা বাড়ি করে বসবাস করলেও বৃদ্ধ বাবা-মা’র কোন খোঁজ খবরও নেয় না বলে অভিযোগ করেন ভবসিন্ধু।

পুত্রবধূ মনিকার অমানবিক আচরণের তার ছেলে খোকন জানলেও সে বৌয়ের উপর কোন কথা বলতে পারে না। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। আমাদের খাবার না দেয়ায় আমি নৌকা নিয়ে শামুক সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে যা পাই তা দিয়ে কোনভাবে আমাদের দুই জনের চলে যায়।

ভবসিন্ধু আরও বলেন, আমাদের খাবার না দিলেও কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু মনিকা এখন আমাদের ঘর থেকে বের করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এ কারনে অব্যাহতভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এই বৃদ্ধ বয়সে আমরা এখন কোথায় যাবো এমন প্রশ্ন রেখে বিষয়টি সমাধানের জন্য লিখিতভাবে ইউএনও স্যারকে জানাই।

ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক ও ইউএনও বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, ২৩ অক্টোবর ভবসিন্ধু বৈরাগীর লিখিত অভিযোগ পেয়ে তিনি মনিকাকে তার অফিসে আসার জন্য নেটিশ করেন। কিন্তু মনিকা ওই নোটিশে কোন কর্নপাত করেনি। এ কারনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশের এএসআই মফিজুল ইসলাম সঙ্গিয় ফোর্স নিয়ে তিনি ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের নিয়ে ভবসিন্ধুর বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে বাড়ির লোকজনের উপস্থিতিতে পুত্রবধু মনিকার সামনে আবারও ভবসিন্ধুর সকল অভিযোগ শোনেন কর্মকর্তারা। ঘটনা শুনে ইউএনও উভয়ের মধ্যে আপোষ মীমাংসার চেষ্টা করলেও মনিকা কোনভাবেই তা মেনে নেয় নি। এ সময় মনিকার স্বামী খোকন বৈরাগী বাড়িতে ছিলেন না। এক পর্যায়ে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মনিকাকে আটক করে কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। এসময় বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুরীকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেন তারা।

ইউএনও কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মনিকা তা অকপটে স্বীকার করে। পরে ভ্রাম্যমান আদালতে মনিকাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়ে রাতে আগৈলঝাড়া থানায় রাখা হয়। বুধবার সকালে দন্ডপ্রাপ্ত মনিকাকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

আদালতের বিচারক বিপুল চন্দ্র দাস তার দেয়া আদেশ সম্পর্কে বলেন, বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি অথবা বাবা মাকে খাবার না দেয়া ও তাদের মানসিক ও শারিরীক নির্যাতনের বিরুদ্ধে এই রায় একটি অনুকরনীয় দৃস্টান্ত হবে।

(টিবি/এসপি/অক্টোবর ৩০, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test