E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিক্ষকের বেত্রাঘাতে ছাত্রের মৃত্যু, শিক্ষক আটক

২০১৯ নভেম্বর ০৬ ২৩:৪৯:৩৮
শিক্ষকের বেত্রাঘাতে ছাত্রের মৃত্যু, শিক্ষক আটক

মাদারীপুর প্রতিনিধি : টাকা চুরির অপবাদে মাদারীপুর সদর উপজেলার গাছবাড়িয়া জামিয়া কারিমিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকের বেত্রাঘাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসিফ মাতুব্বর (১০) নামের এক ছাত্রে মৃত্যুর অভিযোগ করেছে পরিবার। 

এ ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় শিক্ষক মো. আবুল হাসান খানকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। হাসিফ মাতুব্বর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের শ্রীনদী এলাকার আনোয়ার মাতুব্বরের ছেলে।

পুলিশ, পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়া জামিয়া কারিমিয়া মাদ্রাসের ২য় শ্রেণীর ছাত্র হাসিফকে ৫ শত টাকা চুরির অভিযোগে গত রবিবার ঐ মাদ্রাসার শিক্ষক ইউসুফ মোল্ল্যা পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে জোড়া বেত দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।

এরপর হাসিফ মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে তার নিজ বাড়ী চলে গেলে বুধবার সকালে তার বাবা-মা পুনরায় মাদ্রাসায় দিয়ে যায়। পরে আবারও বিকেলে হাসিফকে মারাত্মকভাবে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে মাদ্রাসার শিক্ষকরা।

এই ঘটনায় হাসিফের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে কয়েকজন শিক্ষক নির্যাতনে কথা ধামাচাপা দিতে হাসিফের মুখে বিষ (কিটনাশক) ঢেলে হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে নিয়ে আসার কিছু সময় পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ সময় হাসপাতালে নিয়ে আসা মাদ্রাসার শিক্ষকরা পালিয়ে যায়। তবে মো. আবুল হাসান খান নামের একজন শিক্ষক পালানোর আগ মুহূর্তে তার কথায় সন্দেহ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আটক শিক্ষক রাজৈর উপজেলার মোল্লাকান্দি গ্রামের আ. মান্নান খানের ছেলে।

মাদ্রাসার পাশে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করা কালাম ফকির জানান, আমি ঐ মাদ্রাসার পাশে একটি বাড়ীতে কাজ করতে ছিলাম। হঠাৎ দেখি একটি ছেলে মাদ্রাসার বাহিরে ছটপট করছে। আমি দৌড় দিয়ে কাছে গিয়ে সবাইকে ডাক দেয়। তখন মাদ্রাসার শিক্ষকসহ ছাত্ররা বের হয়ে আসে। পরে তাকে একটি ভ্যানে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর কি হয়েছে আমি জানি না।

হাসিফের মামা বাদল বেপারী বলেন, আমার ভাগ্নিনার সমস্ত শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পাষন্ড মাদ্রাসার শিক্ষকরা আমার ভাগ্নিনাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমরা মাদ্রাসার শিক্ষকের ফাঁসির দাবি জানাই।

হাসিফের বাবা আনোয়ার মাতুব্বর কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, আমার ছেলেকে মাত্র ৫শত টাকা চুরি অভিযোগে নির্যাতন করে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে মাদ্রাসার শিক্ষকরা। আমার ছেলেকে মেরে ফেলে সেটা ধামাচাপা দেয়ার জন্য মুখে বিষ দিয়ে হত্যা করেছে। আমরা এর কঠিন শাস্তির দাবি জানাই।

মাদ্রাসার শিক্ষক মো. ইউসুফ আলী মোল্লা বলেন, আমার টেবিলের ওপর টাকা রাখা ছিল। এ টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে আমি সামান্য মারধর করি। পরে ঐ ছাত্র বাড়ী চলে যায়। সকালে ছাত্রের বাবা-মা মাদ্রাসায় দিয়ে যায়। আমি সারাদিন মাদ্রাসায় ছিলাম না। বিকেলে মারধরের ঘটনা আমি জানিনা।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক অখিল সরকার বলেন, আমাদের হাসপাতালে একটি শিশুকে বিষপানের অভিযোগে কিছু লোক ভর্তি করে। হাসপাতালে ভর্তির পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়।

শিশুটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ঐ চিকিৎসক বলেন, লাশের ময়না তদন্তের পরে বলতে পারবো, এটা হত্যা না আত্মহত্যা।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. সওগাতুল আলম বলেন, এক মাদ্রাসার ছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগে আমরা এক শিক্ষককে আটক করেছি। মাদ্রাসায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। এখনো কোন অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নিব।

(এএস/এসপি/নভেম্বর ০৬, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test