E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

 

সংখ্যালঘু কলেজ ছাত্রীসহ একই পরিবারের চারজনকে পিটিয়ে জখম

২০১৯ নভেম্বর ০৮ ১৫:৫৪:৫৮
সংখ্যালঘু কলেজ ছাত্রীসহ একই পরিবারের চারজনকে পিটিয়ে জখম

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে এক কলেজ ছাত্রীসহ তার পরিবারের চার সদস্যকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার রাউতাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশ করলে বা হাসপাতালে ভর্তি হলে অস্ত্র ও গুলি দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের নতুন করে হামলার আশঙ্কায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ওই সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা।

আহতরা হলেন. রাউতাড়া গ্রামের গোবিন্দ মণ্ডলের ছেলে গ্রাম ডাক্তার বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল (৫৬), তার স্ত্রী সুমিত্রা মণ্ডল (৪৬), তার ছেলে বিভুতিভূষণ মণ্ডল (২৭) ও তার মেয়ে বড়দল আফতাবউদ্দিন ডিগ্রী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ধৃতি রানী মণ্ডল (১৯)।

গ্রাম ডাক্তার বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, তিনি আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ফকরাবাদ বুড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২৭ বছর আগে তিনি খাজরা ইউনিয়নের রাউতাড়া গ্রামে জমি কিনে শ্বশুর বাড়ির পাশে বসবাস শুরু করেন। ২০০৮ সালের ৯ এপ্রিল একই গ্রামের পূর্ণচন্দ্র মণ্ডলের কাছ থেকে ১০৪৭ নং রেজিষ্ট্রি কোবালা মূলে রাউতাড়া মৌজার ১২ শতক জমি কেনেন তার দাদা শ্বশুর মনোরঞ্জন মণ্ডল। ওই বছরের ২৪ এপ্রিল ১২২৪ নং রেজিষ্ট্রি কোবালা মুলে পূর্ণ চন্দ্র মণ্ডলের কাছ থেকে নয় শতক জমি কিনেছেন বলে একই গ্রামের কওছার ঢালীর ছেলে সালাম ঢালী দাবি করে আসছে। দলিল মুলে তার দাদা শ্বশুরের জমি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল সালাম ও তার স্বজনরা।

এ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় সালাম ঢালীসহ ২১ জনকে বিবাদী করে আশাশুনি সহকারি জজ আদালতে শর্ত সাব্যস্ত দখল কায়েম এর জন্য দেওয়ানী ৫/১০ নং মামলা করেন মনোরঞ্জন মণ্ডল। মামলায় চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। এ মামলার তিনি সাক্ষী। বিবাদী পক্ষ নতুন বিবাদী করার জন্য আদালতে পার্টিক্যুলার জমা দিলে আদালত তা না’মঞ্জুর করে। বাদিপক্ষের দেওয়া নতুন বিবাদীগনের নাম মঞ্জুর হওয়ার রেজিষ্ট্রি কার্ড বৃহষ্পতিবার জারি করা হয়। কার্ড পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সালাম ঢালীসহ কয়েকজন বিবাদী।

বিনয় ডাক্তার আরো জানান, বৃহষ্পতিবার রাত সাতটার দিকে তার ছেলে উন্মুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী বিভুতি মণ্ডল পার্শ্ববর্তী কালিমন্দিরের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এ সময় বিবাদী সালাম ঢালীর ছেলে হাতেম ঢালী, আক্তারুল ঢালী, সালাম ঢালীর ভাগ্নে এবাদুল , ইমদাদুল, সামাদ ঢালীর ছেলে আজাহারুল তার ছেলে বিভুতি মণ্ডলকে মামলায় সাক্ষী না দেওয়ার জন্য বলতে বলে। আপিত্ত করায় তাকে কিল, চড় ও ঘুষি মারে তারা। একপর্যায়ে জীবন বাঁচাতে দৌড়ে ঘরের মধ্যে পালায় বিভুতি।

এ সময় উপরোক্তরা ছাড়াও সালাম ঢালী ও তার পরিবারের মহিলা সদস্যরা হাতে বাঁশের লাঠি ও লোহার রড নিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে বিভুতিকে মারপিট শুরু করে। ভাঙচুর করা হয় ঘরের আসবাবপত্র। লুটপাট করা হয় নগদ টাকা ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র। পরে তাকে টানতে টানতে ঘর থেকে বের করে উঠানে ফেলে এলাপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে। তাকে রক্ষায় তিনিসহ স্ত্রী সুমিত্রা ও মেয়ে ধৃতি রানী মণ্ডল এগিয়ে গেলে তাদেরকেও পিটিয়ে জখম করা হয়। স্ত্রী সুমিত্রার ডান কান ছিঁড়ে সোনার দুল নিয়ে যায় হামলাকারিরা।

ঘটনার পরপরই চেয়ারম্যান ডালিম বাহিনীর সদস্য অস্ত্র ও ডাকাতিসহ কমপক্ষে হাফ ডজন মামলার আসামী র‌্যাব ও পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারি বনদস্যু সোলায়মান গাজী, কালাম ঢালী, হান্নান, অলিয়ার ঢালী, সোহাগ ঢালী ও রহমান গাজীসহ কয়েকজন তাদের বাড়িতে আসে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে বা থানায় মামলা করতেক গেলে ফল ভাল হবে না। তোর মেয়ে তো কলেজে যায়। বাড়ি ফিরতে দেব না। কুদ্দুস ফকিরের মত অস্ত্র ও গুলি দিয়ে র‌্যাব এর মাধ্যমে জেলের ঘানি টানানো হবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়।

চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমের বরাত দিয়ে ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জালালউদ্দিন সরদার তাদের বাড়িতে এসে থানা পুলিশ না করে শনিবার বিকেলে উভয় পক্ষকে শালিসি সভায় মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে যান। একপর্যায়ে তারা বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে সালাম ঢালী কোন হুমকি ধামকির কথা অস্বীকার করে বলেন, বিনয় ডাক্তারের ছেলের সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে।

খাজরা ইউপি’র তিন নং ওয়ার্ড সদস্য ইব্রাহীম গাজী বলেন, তিনি খুলনা থেকে ফিরে বিষয়টি শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে জেনেছেন। তাদেরকে হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা ও আইনি সহায়তার ব্যাপারে তিনি উদ্যোগ নেবেন।

খাজরা ইউপি’র ২নং ওয়ার্ড সদস্য জালালউদ্দিন সরদার বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম মোবাইল ফোনে তাকে বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যোহ নিতে বললে তিনি রাউতাড়া চামটায় যান। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে বিনয় ডাক্তার, তার মেয়ে, ছেলে ও স্ত্রীর উপর সালাম ও তার পরিবারের সদস্যরা হামলা করেছে মর্মে নিশ্চিত হন। বিভুতির মাথা ও শরীরের কয়েকস্থানে সেলাই, দুল ছিঁড়ে নেওয়ায় সুমিত্রার ডান কানে তিনটি সেলাই ছাড়াও বিনয় ডাক্তার ও তার মেয়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন তিনি দেখেছেন।

এ সময় সোবহান সরদার, আমিনুর সরদার, আবু সাত্তার, দাউদ সরদার, ডাব্লু শাহ্, পরিতোষ মণ্ডল, ভবেন সরদার, বিমল মণ্ডল, পরিমল মাষ্টারসহ স্থানীয় শতাধিক নারী , পুরুষ ও শিশু সেখানে হাজির হয়ে বর্বরোচিত নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। একপর্যায়ে তিনি থানা পুলিশ না করে শনিবার বিকেলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে শালিসি বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালামের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ০৮, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test