E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আটঘরিয়ায় বাপ-বেটার দাপটে অস্থির আ. লীগের রাজনীতি!

২০১৯ নভেম্বর ১১ ১৫:১৮:৪৭
আটঘরিয়ায় বাপ-বেটার দাপটে অস্থির আ. লীগের রাজনীতি!

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হওয়া এবং বাবা পৌর মেয়র হওয়ার সুবাধে পিতা-পুত্রের অত্যাচার, দাপটে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

পাবনার আটঘরিয়া পৌরসভার মেয়র, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন ও উপজেলা চেয়ারম্যান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তানভীর ইসলামের দাপটে এ উপজেলার আওয়ামীলীগের রাজনীতি অসন্তোষের পাশাপাশি সংঘাতের দিকে এগুচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের। পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন ও উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম সম্পর্কে পিতাপুত্র। পিতাপুত্রের বিরুদ্ধে জামাত-বিএনপির কতিপয় ক্যাডারকে দলে যোগদান করিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করারও অভিযোগ রয়েছে। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ন অভিযোগ হচ্ছে, জামাতের নায়েবে আমীরকে সাথে নিয়ে এখনো একই মঞ্চে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠান করা। এটাই মেনে নিতে পারে না ত্যাগী নেতা-কর্মীরা।

সদ্য সমাপ্ত হওয়া উপজেলা নির্বাচনে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ছেলেকে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে নির্বাচন করেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন।

নিজ দলের ক্ষতি করে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের সাথে আঁতাত করে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মিদের হুমকি-ধামকি আর কোনঠাসা করে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন তানভীর ইসলাম এমন অভিযোগ উপজেলা আওয়ামীলীগ, শ্রমিকলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মিদের।
একাধিক নেতার অভিযোগ, পৌরসভা ও উপজেলা নিয়ন্ত্রণের পর বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মিদের নিজ দলে অনুপ্রবেশের সুযোগ তৈরী করে তাদের বিভিন্ন পদ দিয়ে এলাকায় ক্ষমতার ক্ষমতা আর প্রভাব বিস্তারের মরিয়া হয়ে উঠেছেন জনপ্রতিনিধির অন্তরালে এই পিতাপুত্র।

আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের অফিস ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, দলীয় নেতাকর্মিদের মারপিট ও মামলা দিয়ে হয়রানী করা বিএনপি’র একাধিক নেতাকর্মি নামধারী সন্ত্রাসীকে আওয়ামীলীগ ও শ্রমিকলীগে এনে দলীয় নেতাকর্মিদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়িয়ে দিয়েছেন ক্ষমতাধর পিতাপুত্র।

আটঘরিয়া পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম মুকুল বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের সময়ে পৌর আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয় সে সময়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিনুল হকের ক্যাডার বুলবুলের নেতৃত্বে কমপক্ষে ৫ বার ভাংচুর ও লুটতরাজ করা হয়েছে। অথচ সেই বুলবুলকে মেয়র রতন আওয়ামীলীগের জায়গা দিয়েছেন।

স্থানীয় রাজনীতিকরা বলছেন, ক্ষমতাধর পিতাপুত্র নিজনিজ চেয়ারের ক্ষমতার পাশাপাশি দলীয় প্রভাব বিস্তার করে আওয়ামীলীগ বিরোধীদের সাথে নিয়ে তাদেরকে মামলাসহ নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজেদের ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার করছেন। যা উপজেলা ও পৌর এলাকার সাধারণ জনগণের উন্নয়নের বাঁধার পাশাপাশি দলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ। তারা বলেন, পিতাপুত্র মিলে ২ সদস্যের যুবলীগ আহবায়ক কমিটি করেছেন। ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি এবং স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি গঠন বন্ধ করে রেখেছেন। এছাড়াও শ্রমিকলীগের কমিটি জোরপূর্বক গঠনের পায়তারা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক আওয়ামীলীগ নেতার দাবী, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলায় আওয়ামীলীগের তিনটি গ্র“পে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এমপি সমর্থিত ইশারত আলী, উপজেলা চেয়ারম্যান-মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন পান্না-কামাল চেয়ারম্যান গ্রুপ।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীকে ভর করেই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন তার ছেলে তানভির ইসলামকে উপজেলা চেয়ারম্যান বানিয়েছেন।

উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম কামাল অভিযোগ করেন, উপজেলা ও পৌরসভায় সরকারি প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে এমনকি দলীয় নানা কর্মকান্ডে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমীর ও জেলা পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত আমীর মাওলানা জহুরুল ইসলামকে অতিথি করা হয়। তিনি বলেন, ছেলেকে উপজেলা চেয়ারম্যান করার শর্তপূরণ করছেন মেয়র।

এলাকায় বিএনপি’র শীর্ষ ক্যাডার ও সন্ত্রাসী হিসেবে খ্যাত বুলবুল আহমেদ ওরফে গাজা বুলবুলকে জেলা শ্রমিকলীগের নেতাকর্মিদের ঘরবন্দি করে জোরপূর্বক উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি বানিয়ে নিয়েছেন ক্ষমতাধর এই পিতাপুত্র এমন অভিযোগ প্রকৌশলী কামালের।

আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন পান্না অভিযোগ করেন, নিজ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান না করে পৌর মেয়র উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন তার ছেলে তানভির ইসলামকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেন। পান্নুর অভিযোগ, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের সাংসদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু দলীয় প্রার্থীর পক্ষ না নিয়ে তার পছন্দের প্রার্থী ইশারত আলীর পক্ষে অবস্থান নেন।

স্থানীয় সাংসদও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেননি। পান্না বলেন, ছেলে তানভিরকে চেয়ারম্যান করার সময়ে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনে সকল রাষ্ট্রিয় মামলা থেকে খালাশ, রাজনৈতিক সকল সুযোগ সুবিধা দেয়া, স্বাভাবিক ভাবে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনাসহ নানা প্রলোভনে তাদের ভোট আদায় করেছেন ছেলের পক্ষে মেয়র রতন।

আওয়ামীলীগ ঘরণার একাধিক নেতাকর্মি জানান, স্থানীয় সাংসদ শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর আটঘরিয়া কেন্দ্রিক ডান হাত ‘পালিত পুত্র’ হিসেবে খ্যাত ছিলেন শহিদুল ইসলাম রতন। সাংসদ, পরে মন্ত্রীর প্রভাবে এলাকায় একক আধিপত্য গড়ে তোলেন রতন। গত নির্বাচনের আগে থেকে এমপি-পৌর মেয়র সম্পর্কের মধ্যে ব্যাপক ফাটল ধরে। আটঘরিয়ার রাজনীতিতে মন্ত্রী ও মেয়র পন্থি গ্র“পে বিভক্ত হয়ে যায়। এলাকায় নিজের আধিপত্য রক্ষা ও প্রভাব বিস্তারে পরিকল্পিত ভাবে পৌর মেয়র রতন ছেলে তানভিরকে চেয়ারম্যান বানিয়ে নিজেদের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত করেছেন। এলাকায় মেয়র-চেয়ারম্যান মিলে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মিদের আশ্রয়প্রশয় দিয়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মিদের কমিটিসহ দলীয় নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করায় দিনদিন নেতাকর্মিরা ফুঁসে উঠেছেন এই ক্ষমতাধর পিতাপুত্রের বিরুদ্ধে।

এদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরু, দেবোত্তর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নিখিল কুমার সাহাসহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মিদের নির্যাতন, তাদের উপর হামলাসহ নানা অপরাধ করার পরও সেই সন্ত্রাসীদের আওয়ামীলীগের ঠাই দেওয়ায় দেখা দিয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগ অঙ্গনে অসন্তোষ ও চাপা উত্তেজনা।

নিজ দলের ক্ষতি, এলাকায় ক্ষমতার দাপট, দলের ভেতরে অনুপ্রবেশকারি ঢুকানো এবং দলীয় প্রার্থীদের পদবঞ্চিত ও হয়রানীসহ নানা অভিযোগে বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন বলেন, যারা এ সকল অভিযোগ করেছেন, তারা সকলেই একাত্তরের পিচ কমিটি তথা রাজাকার পরিবারের সন্তান। তারা অনুপ্রবেশকারী হলেও মনে প্রাণে তারা আওয়ামীলীগের কেউ নন।

তারা আওয়ামীলীগের ভালো চাননা। কেউ যদি বিএনপি জামায়াত থেকে আওয়ামীলীগের আসতে চান, তাদেরকে আমি বাঁধা দিতে পারি না। দলীয় প্রার্থী বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া, বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মিদের পৃষ্ঠপোষকতা করা, দলীয় নেতাকর্মিদের উপর হামলা ও কোনঠাসা করে রাখার বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভির ইসলামের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। ফলে তার কোন মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।

(পিএস/এসপি/নভেম্বর ১১, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test