E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মদনে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

২০১৯ নভেম্বর ১৪ ১৭:২১:৫৭
মদনে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : নেত্রকোনার মদন উপজেলার ৭নং নায়েকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আতিকুর রহমান রুমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ করেছেন একই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। ২০১৬/১৭ অর্থবছর হইতে অদ্যাবধি পর্যন্ত ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। 

অভিযোগে জানা যায়, ২০১৮/১৯ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি(এডিপি) প্রকল্পের আওতায় রিং কালভাট নির্মানের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পায়। এ প্রকল্পের সভাপতি সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রুমেলা আক্তার। অদ্যাবধি পর্যন্ত এ প্রকল্পের কোনো কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৮/১৯ অর্থ বছরে ইউনিয়ন পরিষদে চারপাশে গর্ত ও মাটি ভরাট প্রকল্পে কোনো কাজ না করেই কাবিখা প্রকল্পে সারে সাত মেঃটন গম আত্মসাৎ করেছেন। ১৫/০৫/২০১৮ ইং তারিখে ক্ষতিগ্রস্থ প্রান্তিক কৃষক ও জেলেদের বিশেষ বরাদ্দ ভিজিএফ এর ৩০ কেজি চাল ও নগত ৫শ টাকা ৭৮০ জনের মধ্যে বিতরণে অনিয়ম. কালো বাজারে পাচার ও আত্মসাৎ করেন।

এ বিষয়ে ০৬ ইউপি সদস্য ও ১৫৭ ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের বরাবরে লিখিত অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো সুরাহা হয়নি। ২০১৬/১৭ অর্থ বছরে ঈদুল ফিতরের চাল ভূয়া নাম লিখে চেয়ারম্যান নিজস্ব লোক দ্বারা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৭/১৮ অর্থ বছরের ইজিপিপি-র ২য় পর্যায়ে শ্রমিকদের কার্ড সচিবের মাধ্যমে আটক করে প্রতি কার্ড বাবদ ৭হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন। যারা টাকা দেয়নি তাদের কার্ড এখন পর্যন্ত সচিবের কাছে রয়েছে। নন-ওয়েজের টাকা দ্বারা এ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের দরজা জানালা ও কম্পিউটার প্রকল্পে ইউপি সদস্য শিখা আক্তার কে সভাপতি করে তার স্বাক্ষর নিয়ে বরাদ্দকৃত সাকুল্য টাকা আত্মসাৎ করেছে চেয়ারম্যান।

সৌর-বিদ্যুৎ ও টাকার বিনিময়ে দিয়েছেন যা প্রকল্প অফিসে জমাকৃত তালিকা নিয়ে তদন্ত করলেই এর প্রমাণ মিলবে। ভিজিটি তালিকায় নিয়মের ব্যাতিক্রম করিয়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করিয়াছেন। জন্ম নিবন্ধনের জন্য ৫শ থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের ফি বাবদ উদ্যোক্ততার মাধ্যমে চেয়ারম্যান ও সচিব টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করে থাকেন। ২০১৬/১৭ অর্থ বছরে থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত নায়েকপুর ইউনিয়নে টিআর, কাবিখা,কাবিটা, ইজিপিপি প্রকল্পের টাকা নামে মাত্র কাজ করে সিংহভাগ টাকা আতœসাৎ করেছেন যা সরজমিনে তদন্ত করলে প্রমাণ মিলবে।

এ ব্যাপারে সাম্প্রতিক সরজমিনে গেলে এডিপি প্রকল্প সভাপতি সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রুমেলা আক্তার জানান, চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রুমান ও সচিব আনিসুজ্জামান কাজ বাস্তবায়ন করবে বলে আমার ছবি,আইডি কার্ড ও বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর নেন। এ ব্যাপারে আমি আর কিছুই জানি না।

ইউনিয়ন পরিষদের দরজা-জানালা ও কম্পিউটার সংস্কার প্রকল্পের সভাপতি সংরক্ষিত ইউপি সদস্য শিখা আক্তার জানান, উক্ত প্রকল্পে আমাকে সভাপতি করে বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর নেয়। ২ কিস্তিতে ১লাখ টাকা উত্তোলন করে আমাকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে বলে বাকী টাকা দিয়ে কাজ বাস্তাবায়ন করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কাজ করা হয়নি।

ইউপি সদস্য রাসেল, গোলাপ জানান, আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে বৎসরে একটিও সভা হয় না। প্রকল্পের কোনো কাজ আসলে চেয়ারম্যান তার পছন্দ মতো সদস্যকে সংশ্লিষ্ট অফিসে ডেকে নিয়ে কমিটির সভাপতি সম্পাদকের স্বাক্ষর রেখে দেয়। যার কারণে ইউনিয়ন পরিষদের কোনো সদস্য উন্নয়ন মূলক কার্যক্রমের কিছুই বলতে পারে না। উক্ত চেয়ারম্যানের দূর্নীতির বিরুদ্ধে গত ১৭ মে ২০১৮ ইং তারিখে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষক ও জেলেদের বিশেষ বরাদ্দের ভিজিএফ এর ৩০ কেজি চাল ও নগদ ৫০০ টাকা করে ৭৮০ জনের মধ্যে বিতরণে অনিয়ম কাল বাজারে পাচার ও আত্মসাতের বিষয়ে ৬ ইউপি সদস্য সহ ভূক্তভোগী ১৫৭ জন বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও আমরা কোনো সুফল পাইনি।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের টিপু জানান,উক্ত চেয়ারম্যান বিএনপি টিকিটে নির্বাচিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য টি আর, কাবিখা, কাবিটা,এডিপি,ইজিপিপিসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি করে জনগনকে সেবা থেকে বঞ্চিত করেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।

ইউপি সচিব হিরণ মিয়া জানান, কর্মসৃজন কর্মসূচির টাকা শ্রমিকরা নিজেরাই উত্তোলন করেছে। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা।

অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রুমান জানান, সব অভিযোগ মিথ্যা,আমি সরকারি বিধিমোতাবেক সবকাজ সম্পন্ন করেছি। আমি বিএনপির চেয়ারম্যান বলে আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করার জন্য এ অভিযোগ দায়ের করেছে।

উপজেলা প্রকৌশলী এডিপি তদারকি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম মৃধা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা এডিপির টাকা নিয়ে মালামাল ক্রয় করেছে কি-না তা আমার সন্দেহ হয়। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেওয়ানি মামলা হবে। এর দায়বার প্রকল্পের সভাপতিই নিতে হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শওকত জামিন জানান, ইউএনও স্যার এ বিষয়ে সরজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ওয়ালীউল হাসান বলেন, এ ব্যাপারে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি তবে শোনেছি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি সরজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য।

ট্যাগ অফিসার ও সমবায় কর্মকর্তা খাইরুল ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

(এএমএ/এসপি/নভেম্বর ১৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test