E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

 

লোহাগড়ায় পকেট কমিটি দিয়ে চলে শতবর্ষী লাইব্রেরি

২০১৯ নভেম্বর ১৪ ১৭:৩৯:২২
লোহাগড়ায় পকেট কমিটি দিয়ে চলে শতবর্ষী লাইব্রেরি

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত নড়াইলের লোহাগড়া রামনারায়ণ পাবলিক লাইব্রেরি। লাইব্রেরিটি উপজেলা পর্যায়ে সারা দেশে প্রতিষ্ঠার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে। অভিযোগ রয়েছে, ঐতিহ্যবাহী এই লাইব্রেরি চলে পকেট কমিটি দিয়ে। সম্পাদক তাঁর ইচ্ছামত পছন্দের লোক নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করে থাকেন। আছে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ।

লাইব্রেরি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ হাজার বই রয়েছে লাইব্রেরিতে। একটি ব্যাংকসহ ১৬টি দোকান থেকে প্রতিমাসে ভাড়া আসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। সাধারণ ও আজীবন সদস্য সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। ১৭ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটির দিয়ে পরিচালিত হয় লাইব্রেরিটি। কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ তিন বছর। পদাধিকার বলে এ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

অভিযোগ রয়েছে, গত ২৭ বছর ধরে সৈয়দ আকরাম আলী আখিদুল লাইব্রেরির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি তিন বছর পর কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হলে অতি গোপনে পছন্দের লোক নিয়ে সম্পাদক আখিদুল ইচ্ছামত কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করেন। সাধারণ ও আজীবন সদস্যদের না জানিয়ে কমিটি করা হয়। সম্পাদকের ইচ্ছামত চলে লাইব্রেরি। কার্যনির্বাহী কমিটির কেউ তাঁর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলে পরবর্তী মেয়াদের কমিটি থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়।

গত ৭ নভেম্বর লাইব্রেরির আজীবন সদস্য সলিমুল্লাহ পাপ্পু, মোল্যা মনিরুজ্জামান ও তাওহিদ শেখ লাইব্রেরি সভাপতি ও ইউএনও মুকুল কুমার মৈত্রের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন, অধিকাংশ সাধারণ ও আজীবন সদস্যকে অবহিত না করে তড়িঘড়ি করে লাইব্রেরি তফসিল ঘোষণা করে কমিটি করা হচ্ছে।
আরো অভিযোগ রয়েছে, প্রতি মাসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা ভাড়া থেকে আয় হয়। এ ছাড়া মোটা অংকের অনুদান আসে প্রতিনিয়ত। সম্পাদক লাইব্রেরি নাম করে একা একা এসব অনুদান সংগ্রহ করেন।

কার্যনির্বাহী কমিটির অন্য কেউ তা জানতে পারে না। অনেকের কাছ থেকে অনুদান নেওয়ার সময়ে বলা হয়েছে, দাতা হিসেবে লাইব্রেরি চত্বরে বড় করে দাতার তালিকা খোদাই করে লেখা হবে। তা কখনো লেখা হয়নি। লাইব্রেরি হিসাবসহ সব কিছু সম্পাদক নিজের কাছে রাখেন, কমিটির অন্যরা তা জানেন না। প্রায় দুই হাজার সদস্য থাকলেও কখনো সাধারণ সভা হয় না। সাধারণ ও আজীবন সদস্যদের লাইব্রেরির হিসাব ও কোনো তথ্য জানানো হয় না। হয় না বাৎসরিক সভা (এজিএম)।

কয়েকজন আজীবন সদস্য জানান, সৈয়দ আকরাম আলী আখিদুল লাইব্রেরিকে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করেন। এটি হয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নির্বাহের অনুষজ্ঞ। লাইব্রেরিতে পাঠক টানার কোনো পদক্ষেপ নেই। বইয়ের তালিকা ও ক্যাটালগ সংরক্ষণ না করায় পাঠকদের বই খুঁজতে সময় লাগে।

বর্তমানে বইয়ের বদলে শুধু পত্রিকা পড়তে আসে ৩-৪ জন পাঠক। লাইব্রেরিতে চলে তাস খেলার আড্ডা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লাইব্রেরি চত্বর ময়লা-অবর্জনায় ঠাসা। চত্বরে যত্রতত্র রাখা লোহাগড়া বাজারের বিভিন্ন মালটানা গাড়ি। লাইব্রেরিতে প্রবেশ করাও দুঃসাধ্য। বোঝাই যায় না এটি একটি শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী লাইব্রেরি।

অভিযুক্ত লাইব্রেরির সম্পাদক সৈয়দ আকরাম আলী আখিদুল অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি ১৯৯৩ সাল থেকে লাইব্রেরির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। কোনো অনিয়ম করিনি। প্রতিমাসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা ভাড়া আসে। এছাড়া সরকারি এবং বিভিন্ন অনুদান পাওয়া যায়। তা যথাযথভাবে খরচ করা হয়।

লাইব্রেরির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, অনিয়মের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরএম/এসপি/নভেম্বর ১৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test