E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘সিডর-সিডরা’র ভাগ্যে আশ্বাস ছাড়া কিছুই জোটেনি, তাদের পড়াশুনা অনিশ্চিত

২০১৯ নভেম্বর ১৪ ১৮:৩৯:৫৪
‘সিডর-সিডরা’র ভাগ্যে আশ্বাস ছাড়া কিছুই জোটেনি, তাদের পড়াশুনা অনিশ্চিত

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : আগামীকাল ১৫ নভেম্বর সিডর দিবস। এই দিনে বাগেরহাটসহ উপকূলে জেলাগুলো লন্ডভন্ড করে দেয় সুপার সাইক্লোন সিডর। শুধু বাগেরহাট জেলাতেই মারা যায় ১ হাজারের উপর মানুষ। শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নেই মরা যায় ৮ শতাধিক মানুষ। সিডর চলাকালে নিজে ও অনাগত সন্তান বাঁচতে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে যায় দুজন সন্তান সম্ভাবা গৃহবধূ। প্রলংয়কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের তান্ডব চলাকালে ওই রাতেই মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের সেন্ট মেরিস প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে জন্ম গ্রহণ করে। এই দুটি শিশুর নাম রাখা হয় সিডর –সিডরা। তখন সিডরের রাতে জন্ম নেয়া দুই শিশুর খবর স্থান করে নেয় দেশী-বিদেশী বিভিন্ন গণমাধ্যম। এরপর থেকে অনেকেই তাকে সাহায্য সহযোগীতার আশ্বাস দিতে থাকেন অনেকে। দীর্ঘ এক যুগে আশ্বাস ছাড়া ভাগ্যে কিছুই জোটেনি দুই শিশু সিডর- সিডরার। সিডর চলাকালে জন্ম নেয়া সদ্য ভূমিষ্ট সিডর-সিডরী মাতৃকোলে থেকে ঝড়ের তান্ডব বুঁচতে না পারলেও এখন দারিদ্রতার সাথে লড়াই করতে হচ্ছে। অতিদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া মেধাবী এই দুই শিশুর পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া এখন দায় হয়ে পড়েছে। জন্মের পর সিডর-সিডরীর মা-বাবাকে অনেকে শিশু দুটির পড়াশুনার দায়িত্ব নেয়া ও জমি কিনে বাড়ী করে দেয়াসহ অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কেই রক্ষা করেনি। তাই অভাবের তাড়নায় এখন পড়াশুনা চারিয়ে যেতে সিডর- সিডরীকে ঘরবাড়ী ছেড়ে থাকতে হচ্ছে বহুদূরে খ্রীষ্ট্রান মিশনারী হোমে।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে সুন্দরবন উপকূল দিয়ে বাংলাদেশে আঘাত করে সুপার সাইক্লোন সিডর। সাগর থেকে থেয়ে আসা এই গোর্কি চলাকালে মোংরার চিলা গ্রামের খৃষ্ট্রান মিশনারীর সেন্ট মেরিস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কানাইনগর গ্রামের গৃহবধূ সাথী সরকার জন্ম দেন একটি ছেলে শিশু। নাম রাখা হয় সিডর সরকার।

এই শিশুটি দাদী রিভা সরকার (৬৫) দাবী করেন, সিডরের জন্মের পর একটি পত্রিকা (প্রথম আলো) সিডরের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয় কথা জানায় তাদের। প্রতিশ্রুত দেয় জমি কিনে বাড়িঘর করে দেয়ার। সিডরের ছবি দিয়ে পত্রিকার ক্যালেন্ডার ছাপে। তার প্রতিশ্রুতি রাখেনি। ওই পত্রিকার কারনে অন্য এনজিওরা আমাদেও কোন সহায্য করেনি। তারা বলছে, তোরাতো ওদেও কাছ থেকে অনেক পেয়েছো। আসলে সিডরের ভাগ্যে জোটেনি কোন সহয়তা। আমরা অতিদরিদ্র। ওর বারা জর্জি সরকার মাছ ধরে সুন্দরবনে। মা আমি কাজ করি অন্যের বাড়ীতে।

তবে, ‘সরকারের জমি আছে- ঘর নেই প্রকল্প’ থেকে পেয়েছে একটি ঘরসহ কিছু সহয়তা পেয়েছি। আমাদের আয়ে সংসার না চললে না, সিডরের পড়াশুনার খরচ চালাবেন কেমন করে। অর্থাভাবে এক বছর লেখাপড়া বন্ধের থাকার পর তাকে একটি মিশনারী হোমে দেয়া হয়েছে। সিডর এখন লেখাপড়া শিখছেন খুলনা’র দাকোপ উপজেলার লাউডোপ ইউনিয়নের হরিণটানায় ‘লাভ ইউ নেভার’ মিশনারী হোমে থেকে ৫ম শ্রেনীতে পড়াশুনা করছে। পরিবারের পক্ষ থেকে তার অর্ধেক খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। না জানি কখন ওর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়।

সিডর চলাকালে একই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে অপর সন্তান সম্ভাবা সুখী ফলীয়া জন্ম দেন একটি মেয়ে শিশুর। সিডরের সাথে মিলিয়ে তারও নাম রাখা হয় সিডরা ফলীয়া। চিলা গ্রামের সেন্ট মেরিস চার্চের পার্শে এই অতিদরিদ্র পরিবারটিও আশ্বাস ছাড়া ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। এমনকি সরকারী কোন সহায়তাও জোটেনি এই পরিবারটির। দারিদ্রতার কারনে কয়েক বছর আগে স্ত্রী সন্তানদের রেখে নিরুদ্যেশ হয়েছেন তপন ফলীয়া।

দারিদ্রতা সইতে না পেরে স্বামী তপন ফলীয়া বাড়ী ছেড়ে চড়ে যাবার পর দু’মুঠো ভাত ও সিডর ফলীয়াসহ ৩ ছেলেমেয়ের পড়াশুনা চালিয়ে নিতে তাকে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে সুখী ফলীয়াকে। দারিদ্রতার মধ্যে সন্তান সিডর ফলীয়াকে মোংলার সেন্টপর্স মিশনারী হোমে রেখেছেন। সিডর ফলীয়াকে মোংলার সেন্টপর্স মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়াশুনা করেছে। পরিবারটিকেও মিশনারী হেমের অর্ধেক খরচ বহন করতে হচ্ছে। তবে, সিডর-সিডরাও চায় পড়াশুনা শেষ করে পরিবারের দারিদ্রতা দূর করাসহ দেশ সেবা করতে। এজন্য তারা আর কোন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি নয়, চায় সবার ার্থিক সহযোগীতা।

মোংলার চিলা গ্রামের খ্রীষ্ট্রান মিশনারী সেন্টমেরীস ক্যাথলিক চার্চের তত্বাবাধায়ক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভিনসেট মন্ডল জানান, আমাদের স্কুল আশ্রয় কেন্দ্রে জন্ম নেয়া অতিদরিদ্র মেধাবী দুই শিশুর লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার ওদের জন্য দায় হয়ে দাড়িয়েছে। জন্য সবার অর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

মো. রাহাত মান্নান মোংলা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা জানান, সিডরের পরিবারকে সরকারী ঘরসহ সহয়তা করা হয়েছে। তবে, আশ্রয় কেন্দ্রে জন্ম নেয়া অপর শিশু সিডরা’র বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন থেকে এই দুটি পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগীতার করা হবে।

জেলা সমাজ সোবা অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক খলিল আল রশীদ জানান, এই দুটি পরিবাররে বয়স্ক ও বিধবাদের কিভাবে সাহয্য করা যায় তা সমাজ সোবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যাচাই-বাছাই কওে দেয়া হচ্ছে। তাদের সহয়তা দেয়া হবে।

(এসএকে/এসপি/নভেম্বর ১৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৮ মার্চ ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test