E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা

২০১৯ নভেম্বর ১৫ ১৪:১১:০৩
চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা

নিউজ ডেস্ক : উত্তরাঞ্চলের ধান-চালের সবচেয়ে বড় মোকাম নওগাঁয় এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন চালের দাম প্রতি কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। আর বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বেড়েছে প্রায় ২০০ টাকা। বাজারে জিরাশাইল ও বিরি-২৮ জাতের ধানের সরবরাহ কমায় চালের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সেই সঙ্গে ভারত থেকে ‘সম্পা কাটারি’ চালের আমদানি বন্ধ হওয়ায় জিরাশাইলের ওপর চাপ পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চালকল মালিকরা বলছেন, ধানের দামের সঙ্গে চালের বাজারের সামঞ্জস্য না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। বেশি দামে ধান কিনে কম দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। যে হারে ধানের দাম বেড়েছে, সে তুলনায় চালের দাম বাড়েনি। চিকন চালের দাম ৫০ টাকার মধ্যে থাকলে কৃষকরা ধানের দাম পাবেন বলে মনে করছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন নওগাঁয় মোট ৯৫৭টি চালকল রয়েছে। এর মধ্যে ৫২টি অটোরাইস মিল, বাঁকিগুলো হাসকিং মিল। প্রতিদিন মিলগুলোর চাল উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় দেড় হাজার মেট্রিক টন।

এদিকে হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষেরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বোরো মৌসুমে নওগাঁয় প্রায় ১ লাখ ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছিল। এরমধ্যে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয় চিকন জাতের ধান। এ জেলায় বছরে ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হয়। স্থানীয় চাহিদা প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত খাদ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

জিরাশাইল ও আটাশ (২৮) চিকন জাতের ধান। বছরে বোরো মৌসুমে যে ধান উৎপাদন হয় তার ৬০ শতাংশই এ দুই জাতের ধান। তাই সারা বছর এ ধান সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। ফলে বছরের অর্ধেক সময় পর চালকল মালিকরা চিকন ধানের সংকটে পড়েন। কৃষকরা ধারদেনা করে যে ধান উৎপাদন করেন তার বেশির ভাগই কাটা-মাড়াইয়ের কিছুদিনের মধ্যেই বিক্রি করে দেন।

এছাড়া, আমাদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন হয়েছে। এখন বেশির ভাগ মানুষই মোটা চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত না। বাসা-বাড়ি, ছাত্রাবাস, হোটেল সবখানেই চিকন চালের ভাত। বর্তমানে মোটা ও চিকন চালের দামের পার্থক্য সামান্য হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষই চিকন চাল কিনছেন। এ কারণে বাজারে চিকন চালের সংকট দেখা দিয়েছে।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিবস্তা ১ হাজার ৮শ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার টাকা হয়েছে। অর্থাৎ বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বেড়েছে প্রায় ২০০ টাকা। এতে চালের দাম প্রতি কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে চিকন চালের দাম ৩৬ টাকা থাকলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। ফলে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। আগামীতে এই দাম আরও বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে।

খুচরা চাল ব্যবসায়ী মহাদেব ঘোষ বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে জিরাশাইল বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৩৬ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। আটাস ২/৩ টাকা বেড়ে ৩৪/৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া স্বর্ণা ৩০ টাকা, কাটারিভোগ ৫০/৫২ টাকা, পাইজাম ৫০/৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রকার ভেদে মোটা চালের দামও কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে।

মেসার্স সমতা রাইচ এজেন্সির মালিক সুকুমার বলেন, প্রকার ভেদে প্রতি বস্তায় চালের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অপরদিকে ধানের দাম প্রতিমণে বেড়েছে ১৫০-২৫০ টাকা। এতে করে ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। শুধু জিরাশাইল চাল ও ধানের দাম বেড়েছে। কিন্তু বাকি সবগুলো অপরিবর্তীত রয়েছে।

নওগাঁ ধান ও চাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, জিরাশাইল, আটাস ও উনত্রিশ বছরে একবার বোরো মৌসুমে উৎপাদন হয়ে থাকে। বছরের সাত মাস পেরিয়ে গেছে। এদিকে- কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছে ধানের পরিমাণ কমে এসেছে। এই ধান দিয়ে আরও পাঁচ মাস চালাতে হবে। যার কারণে বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি বছর এই সময়ে এসে চালের দাম কিছুটা বেড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন যাবত চিকন চালের দাম কম থাকায় সব শ্রেণির মানুষই এ চাল কিনছেন। ‘ভারত থেকে ‘সম্পা কাটারি’ চালের আমদানি বন্ধ হওয়ায় জিরাশাইলের ওপর চাপ পড়েছে।’

তিনি বলেন, এছাড়া সরকার কৃষকদের ধানের দাম দিতে চাইছেন। যার কারণে ধানের দাম ২৬ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ধান ও চালের বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখি হবে। আমরা মনে করি এটা নিয়ে ঘাবড়ানোর (হতাশ) কিছু নেই।

নওগাঁ জেলা চাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, সরকার ২৬ টাকা দরে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করবে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করবে। যা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। যা আগে কখনোই করেনি। কৃষকদের ধানের ন্যায্য দাম দিতে এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকার পর্যায়ক্রমে উদ্যোগ নিয়েছে। যার কারণে ধান ও চালের দাম বেড়েছে। আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হলেও এখনো বাজারে আসতে আরও এক সপ্তাহ লাগতে পারে।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test