E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মান্দায় স্কুলের অদুরে ইটভাটা, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

২০১৯ নভেম্বর ১৫ ১৮:২৫:১৩
মান্দায় স্কুলের অদুরে ইটভাটা, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দায় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অদুরে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটি। ইতোমধ্যে ভাটিতে নতুন ইটকাটা শুরু হয়েছে। কয়লার পরিবর্তে ভাটিতে মজুত করা হচ্ছে কাঠের খড়ি। অচিরেই এ ভাটিতে ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করা হবে। এতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে দুটি বিদ্যালয়ের অন্তত ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ফিক্সট চিমনির সাহায্যে দীর্ঘদিন ধরে এ ভাটিতে ইট পোড়ানো হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। বুধবার উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় ভাটিটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা।

সরজমিনে দেখা গেছে, নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে মান্দা উপজেলার সাবাইহাট এলাকায় ঝাঁঝরের মোড়ে ভাটিটি স্থাপন করেছেন, গোঁসাইপুর গ্রামের কার্তিক চন্দ্র নামে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। ভাটিটির নাম দেয়া হয়েছে যমুনা ব্রিক্স। এ ভাটির মাত্র ২৫০ মিটার দুরে রয়েছে একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একরুখী উচ্চ বিদ্যালয়। রয়েছে দুটি আম বাগান ও আবাসিক এলাকা। ভাটিতে ইট পোড়ানো শুরু হলেই এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এবারও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম জানায়, ‘গতবছর ইটভাটি চালু হওয়ার পর হঠাৎ একদিন আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। শ্বাসকষ্টসহ একাধিকবার বমন করেছি। পরে ডাক্তারের নিকট গিয়ে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠি।’

একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন ও মোস্তাকিম জানায়, ইটপোড়ানো শুরু হলে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ সময় আমাদের ক্লাস করতে সমস্যা হয়। এছাড়া স্কুল মাঠের আম গাছগুলোর ফল নষ্ট হয়ে যায়। পরিপক্ক হওয়ার আগেই পচন ধরে গাছ থেকে ঝরে পড়ে আম।

ইট প্রস্তুত ও পোড়ানো পরিবেশ অধিদপ্তর আইনে (২০১৩ এর সংশোধনী) উল্লেখ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাগান ও আবাসিক এলাকার ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটি স্থাপন করা যাবে না। এ আইনের তোয়াক্কা না করেই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাত্র ২৫০ মিটার দুরে ভাটিটি স্থাপন ও দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ইটপোড়ানোর কাজ করে আসছেন কার্তিক চন্দ্র। কোন খুঁটির জোরে ভাটি মালিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ইটপোড়ানোর কাজ করে আসছেন এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা জানান, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে ইটপোড়ানো বন্ধ রাখার জন্য ভাটিমালিক কার্তিককে বারবার নিষেধ করার পরও তা মানছেন না। চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, ভাটিমালিক কার্তিক চন্দ্রের দম্ভোক্তি পরিবেশ অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কিনে পকেটে রেখেছেন তিনি। এবিষয়ে প্রশাসনের কোথাও অভিযোগ দিয়েও কাজ হবে না।’

ভাটিমালিক কার্তিক চন্দ্র জানান, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই ভাটির কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কয়লার পরিবর্তে ভাটিতে খড়ির মজুদ কেন, জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান তিনি।

একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম জানান, ‘একবছর হয়েছে আমি এ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছি। এর অনেক আগে থেকেই বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাটিটি রয়েছে। ইটভাটি থেকে যে কালো ধোঁয়া নির্গত হয় তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। এতে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যেই শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, যমুনা ব্রিকসের মালিক কার্তিক চন্দ্রের ইটপ্রস্তুত ও পোড়ানোসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে কি না সেটি আমার জানা নেই। এবিষয়ে তদন্ত করে আইনীগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া লাইসেন্সবিহীন প্রত্যেকটি ইটভাটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়ার পরিদর্শক মকবুল হোসেন জানান, ‘বিদ্যালয়, বাগান ও আবাসিক এলাকার ১ কিলোমিটারের মধ্যে ভাটি স্থাপন করে ইট প্রস্তুত ও পোড়ানো আইন সম্মত নয়। যমুনা ব্রিকস এ নীতিমালা লঙ্ঘন করে ভাটির কার্যক্রম পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

(বিএম/এসপি/নভেম্বর ১৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test