E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দক্ষিণাঞ্চলে ফেরি পারাপারে যাত্রী দুর্ভোগ

২০১৯ নভেম্বর ১৭ ১৬:৩৯:১২
দক্ষিণাঞ্চলে ফেরি পারাপারে যাত্রী দুর্ভোগ

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলেও দক্ষিণাঞ্চলে ফেরি পারাপারে যাত্রীদের দুর্ভোগ এখনও কমেনি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২০টি ফেরির সবগুলোই দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পরেছে। 

সম্প্রতি সময়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম নেছারাবাদের (স্বরূপকাঠি) সন্ধ্যা নদীতে এবং সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার মীরার উদ্যোগে বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে নতুন ফেরি আনা হলেও বাকি ১৮টি ফেরি বেহাল অবস্থায় রয়েছে।

সূত্রমতে, লক্কর-ঝক্কর এসব ফেরিগুলোতে প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এসব ফেরিগুলোতে প্রায় দুই যুগেও নতুন ইঞ্জিন না কেনায় মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন মেরামত করে সচল রাখা হচ্ছে ফেরি সার্ভিস। যেকারণে এসব ইঞ্জিন অহরহ বিকল হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পরছেন যাত্রীরা।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ফেরির ইঞ্জিনের মেয়াদ কোনটার এক দশক আবার অনেকটার দেড় যুগ পার হলেও নতুন ফেরির সন্ধান মেলেনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, বর্তমানে সরকারের সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার-হাজার কিলোমিটার রাস্তার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় আরও কয়েকটি ঘাটে ফেরির চাহিদা থাকলেও তা যোগান দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সঙ্কট নিরসনে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) জমা দেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই নতুন ইঞ্জিন পাওয়া যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন সওজ’র ফেরি রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের বরিশাল সার্কেলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী।

সওজ’র বরিশাল সার্কেল সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের লক্ষীপাশা, গোমা, নেহালগঞ্জ, মীরগঞ্জ, বেলতলায় পাঁচটি ফেরি রয়েছে। পিরোজপুর জেলার চরখালী, বেকুটিয়া, টগড়া ফেরি, আমড়াঝুডি ও স্বরূপকাঠিতে ফেরি চলাচল করছে। পটুয়াখালী জেলার লেবুখালী, বগা, গলাচিপা, পায়রাগঞ্জ ও নলুয়াবাহেরচর মোট পাঁচটি ফেরি চলাচল করছে। বরগুনা জেলার আমতলী ও বড়ইতলীতে দুইটি এবং ঝলকাঠি জেলার ষাটপাকিয়া ও আমুয়াতে দুইটি ফেরি চলাচল করছে। এরমধ্যে লেবুখালী, চরখালী, আমতলী ও বেকুটিয়া ব্যস্ততম ফেরিঘাট। এ ঘাটগুলো দিয়ে প্রতিনিয়ত ২৪ ঘন্টাই যানবাহন পারাপার হচ্ছে। তবে এসব ফেরি ষ্টেশনগুলোতে ৩১৫ অশ্বশক্তির ইউটি টাইপ একটি ফেরি রয়েছে। এছাড়াও অন্যগুলোয় ২০০ অশ্বশক্তির ইউটি টাইপ দুইটি ফেরি চলাচল করছে।

ফেরি রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইংল্যান্ডে নির্মিত ফেরির ইঞ্জিন বেশির ভাগই ১৯৭৯ থেকে ৮২ সালের মধ্যে আনা হয়েছিল। এ সাড়ে তিন দশক পার হওয়াতে ইঞ্জিনের সিলিন্ডার, পিস্টন, লার্নারে সমস্যা বেশি দেখা দিয়েছে। সূত্রমতে, এসব ইঞ্জিন ২৫ বছর পার হলেই অশ্বশক্তি কমে আসে। এজন্য মাঝে মধ্যে স্রোতের বিপরীতে ফেরিগুলো অশ্বশক্তি দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারেনা। যে কারণে অতিরিক্ত চাঁপ পড়ায় ইঞ্জিন সিজ হয়ে বিস্ফারণের ঘটনা ঘটে ফেরি বিকল হয়ে যায়।

এসব ফেরিগুলির অধিকাংশ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, গুরুত্বপর্ণ ঘাটগুলোর জন্য বাড়তি ইঞ্জিন মেরামত রাখা হয়। নতুন পাওয়া যায়না বলে পুরানো ইঞ্জিন ১১ থেকে ১৩ লাখ টাকা খরচ করে যন্ত্রাংশ লাগিয়ে চলাচলের উপযোগী করা হলেও তা আবার দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই বিকল হয়ে যায়। এছাড়াও ইজারাদাররা সময়মত ইঞ্জিনের মবিল পরির্বতন না করায় অনেক সময় ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।

সিনিয়র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শামসুল হক জানান, দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক যুগ ধরে ফেরির অবকাঠামোর জরাজীর্ণতা বর্তমানে অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ৩১৫ অশ্বশক্তির ইউটি টাইপ-১ ফেরির ধারণ ক্ষমতা ১১০ টন যা মাঝারি ধরণের ১২টি গাড়ি বহন করতে পারে। ২০০ অশ্বশক্তির ইউটি টাইপ ফেরি-২ যার ধারণ ক্ষমতা ৭০ টন যা ছয়টি গাড়ি বহন করার সম্ভব। বর্তমানে পাথর বা রডবাহী প্রতিটি ট্রাকে অতিরিক্ত মালবহনে ৩৫ থেকে ৩৮টন ওজন হওয়ায় দ্রুত ফেরিগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।

(টিবি/এসপি/নভেম্বর ১৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test