E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চাঞ্চল্যকর ৪টি গণধর্ষণ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

২০১৯ নভেম্বর ১৯ ১৮:৫২:৫১
চাঞ্চল্যকর ৪টি গণধর্ষণ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা কেন্দুয়া, (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৪ নারীকে বিয়ের প্রলোভনে পুলিশের এস.আই ও হবু স্বামী পরিচয়ে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে ৪টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার প্রাথমিক তদন্তে ১৬ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। পুলিশ অভিযুক্ত ওই ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে। 

অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে কেন্দুয়া উপজেলার দীগর সহিলাটি গ্রামের লিটন মিয়া। হারারকান্দি গ্রামের সাইদুল, চন্দলারা গ্রামের লাল মিয়া, হুমায়ুন, জামরুল ওরফে জাম্বু, কাজল ও সাকরা গ্রামের জয়নাল। এছাড়া কেন্দুয়া পৌর শহরের সলপ কমলপুর গ্রামের ইকবাল, হাসান, শরিফ, রাজিব ও সাধার গ্রামের আরিফুজ্জামান। বৈরাটি দিঘলকুর্শা গ্রামের টিপু, আনোয়ার, আমির হামজা ও নূরে আলম। ৪টি মামলার বাদী ও বিভিন্ন সামাজিক এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা মামলার আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরদাবীতে মানব বন্ধন করেছে।

চলতি বছরের গত ২মার্চ লাল মিয়ার ছেলে লিটন মোবাইল ফোনে নিজেকে পুলিশের এস.আই পরিচয় দিয়ে নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার এক যুবতীকে বিয়ের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে কেন্দুয়ায় নিয়ে আসে। পরে ওই দিন রাতেই বাড়ির পিছনের একটি পুকুর পাড়ে লিটন ও সাইদুল দুজনে মিলে ওই যুবতীকে পালাক্রমে ধর্ষন করে। এ ঘটনায় ধর্ষিতা নিজেই বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কেন্দুয়া থানায় ২জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। গড়াডোবা গ্রামের এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধি যুবতী তার বাবার বাড়ি থেকে খালার বাড়ি যাচ্ছিলেন। গত ১০ জুন দিনের বেলায় লাল মিয়া, হুমায়ুন, জাম্বু, কাজল ও জয়নাল ওই যুবতীকে ফুসলিয়ে প্রথমে চিকনি গ্রামের জঙ্গলে ও পরে পূবাইল গ্রামের এক ব্যক্তির গোয়াল ঘরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় যুবতীর ভাই বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কেন্দুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করে।

৬ জুন দুপুরে বৈরাটী দিঘলকুশা গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে নূরে আলম নিজেকে মদন উপজেলার ঝাউলা গ্রামের সুমন নামের যুবক পরিচয় দিয়ে কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা গ্রামের এক পোষাক কর্মীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রেম সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঘটনার দিন ঈদ উপলক্ষ্যে ওই নারীকে হাওর এলাকায় বেড়ানোর কথা বলে, মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর গোগবাজার এলাকায় শাপলা ব্রিকসের নিকট এসে তার মোটর সাইকেলটি বিকল হয়ে যায় বলে নারীকে জানায়। পরে নূরে আলম ইট ভাটার ভিতরে গিয়ে আর ফিরে আসেনি।

ওই নারী তাকে খুঁজতে গিয়ে দেখে ইট ভাটার ভেতর কে বা কারা তাকে বেঁধে রেখেছে। সেখান থেকে হতবাক হয়ে ফেরার পথে কয়েকজন দূর্বৃত্ত তাকে ঝাপটে ধরে ইট ভাটার ভেতরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তদন্তে বেড়িয়ে আসে নূরে আলম প্রকৃত নাম গোপন রেখে স্বামীর অভিনয় করে। তার পরামর্শেই দূর্বৃত্তরা তাকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ধর্ষিতা নারী নিজেই বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রথমেই টিপু, আনোয়ার ও আমির হামজাকে গ্রেফতার করে। তাদের কথা মতো কয়দিন পর নূরে আলমকেও গ্রেফতার করে।

এদিকে গত ১১ জুন, পৌর শহরের সলপ কমলপুর গ্রামের ইকবাল, হাসান, শরিফ, রাজিব ও সাধার গ্রামের আরিফুজ্জামান কেন্দুয়া আটারবাড়ী পাকা সড়কের অদূরে একটি পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের টিনের চালা ঘরে এক নারীকে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। স্থানীয় লোকজন ওই নারীকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে।

জ্ঞান ফিরে পেলে ধর্ষিতা ওই যুবতীর কথামতো তার বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কেন্দুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কেন্দুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান ও ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান মোবাইল ফোন নাম্বার ট্রেকিং করে তাদেরকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়।

চাঞ্চল্যকর এই ৪টি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানা পুলিশের পরিদর্ষক (তদন্ত) মোঃ রফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার বলেন, ৪টি মামলার তদন্তে ওঠে এসেছে পুলিশের এস.আই ও বিয়ের প্রতিশ্রুতি সহ অন্যান্য কারণে পৃথক গণ ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। যথাসময়ে মামলা তদন্ত শেষে ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে বিচারের জন্য চার্জশিট দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ১৬ জনের মধ্যে ১৪ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হলেও চন্দলারা গ্রামের লাল মিয়া ও জয়নাল পলাতক রয়েছে।

(এসবি/এসপি/নভেম্বর ১৯, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test