E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পা দিয়ে লিখে পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছে মুক্তামনি

২০১৯ নভেম্বর ২৩ ১৫:৫২:৪৫
পা দিয়ে লিখে পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছে মুক্তামনি

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর নিজের প্রাণপন চেষ্টায় দুটি হাত না থাকার পরেও পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ১২ বছরের মুক্তামনি। শুধু পরিবার নয়; শিক্ষকরাও মুক্তাকে নিয়ে বিজয়ের স্বপ্ন দেখছেন। জেলার হিজলা উপজেলার পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী মুক্তামনি।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাছিমা খানম বলেন, না দেখলে বিশ্বাস হবেনা মুক্তামনির পড়াশোনা করার ইচ্ছা কতোটা প্রবল। তিনি আরও বলেন, আমাদের স্কুল থেকে এবারে ১৪জন শিক্ষার্থী পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এদেরমধ্যে মুক্তার দুটি হাত না থাকায় পা দিয়েই সে লিখে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। ওর (মুক্তা) পায়ের লেখাও অন্যদের হাতের লেখার চেয়ে অনেক সুন্দর।

জানা গেছে, মুক্তা শুরুতে গ্রামেই বসবাস করতো। তার মা ঝুমুর বেগম গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে ঢাকার সাভারে বসবাস করে। দুইবছর আগে তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় মুক্তা তার মায়ের কাছে সাভারে যায়। সেখানে একদিন খেলার ছলে পাখি ধরতে গিয়ে দুই হাত দিয়ে বৈদ্যুতিক তার চেঁপে ধরে মুক্তা। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে তার দুই হাত বিকল হয়ে যেতে শুরু করে। চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রথমে কনুই থেকে দুটি হাত কেটে ফেলা হলেও ক্ষত ঠিক না হওয়ায় এক পর্যায়ে পুরোপুরি দুটো হাতই মুক্তার শরীর থেকে বাদ দিতে হয়েছে।

এরপর পত্তণীভাঙ্গা গ্রামে দাদি জাহানারা বেগমের কাছে থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলে পুনরায় পড়াশোনা করতে চায় মুক্তা। তার ইচ্ছেতেই ২০১৮ সালে বাবা সেন্টু মিয়া ও মা ঝুমুর বেগম পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে মুক্তামনিকে ভর্তি করেন।

নতুন স্কুল জীবনের শুরু থেকেই ডান পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে কলম দিয়ে লেখার অভ্যাস করতে থাকে মুক্তা। আর এখন হাতে লেখা যে কারো মতো স্বাভাবিক গতিতেই পা দিয়ে অনায়াসে সে লিখে যেতে পারে। মুক্তার চিকিৎসাসহ আরও এক বোনের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে তার হতদরিদ্র পরিবার। তবুও মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করতে চান তাদের মা। মুক্তামনির স্বপ্ন সে একদিন শিক্ষক হবে।
অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া মুক্তামনির মা ঝুমুর বেগম বলেন, তার স্বামী তেমন কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। নিজের সামান্য উপার্জনে দুই মেয়েকে পড়াশোনা করাতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। তারপরেও মেয়েদের আগ্রহের কারণে এখনও তিনি পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছেন। তিনি মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।

মুক্তার স্কুলের প্রধানশিক্ষক জানান, মুক্তামনি এতোটাই ভালো ছাত্রী যে, সে কখনো বিনা কারণে স্কুলে অনুপস্থিত থাকেনা। সে নিজের যেকোনো সমস্যা শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে নেয়। আমরা চাই সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এগিয়ে চলা মুক্তার মাথায় বিজয়ের মুকুট উঠবে। মুক্তা শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জন করবে। হাত হারিয়েও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া মুক্তামনির মুখে হাসি ফুটলেই আমাদের সবার চেষ্টা স্বার্থক হবে।
মুক্তা পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছে পত্তণীভাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, সেখানকার প্রধানশিক্ষক সাহিদা ইয়াসমিন বলেন, যে কয়টা পরীক্ষা গেছে, সবকয়টা পরীক্ষাতেই মুক্তামনি অংশনিয়েছে। খুব মনোযোগের সাথে মুক্তা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।

(টিবি/এসপি/নভেম্বর ২৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test