E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সরকারের ধান সংগ্রহে কৃষকের সাথে এই প্রতারণার শেষ কোথায়?

২০১৯ নভেম্বর ২৭ ১৭:৪৬:৫৭
সরকারের ধান সংগ্রহে কৃষকের সাথে এই প্রতারণার শেষ কোথায়?

কাজী নজরুল ইসলাম, শরীয়তপুর : উৎপাদক কৃষকদের উৎসাহ মূল্য বা ন্যায্য মূল্য প্রদান করা, খাদ্যশস্যের বাজার দর যৌক্তিক পর্যায়ে স্থিতি রাখা, খাদ্য নিরাপত্তা মজুদ গড়ে তোলা এবং সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থায় সরবরাহ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সরকার প্রতি বছরই সংগ্রহ মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ও গম সংগ্রহ করেন। প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে নানা ধরনের অভিযোগ শুনে এবং গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে কৃষকের উৎপাদিত খাদ্য শস্য ক্রয় পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বেড়িয়ে এসেছে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র। 

জানা গেছে, কৃষকের সাথে প্রতারণার ভয়াবহ কাহিনী। পাওয়া গেছে মৃত ব্যক্তির নামে, কৃষি কাজের সাথে জরিত নয় এমন লোকদের থেকে ধান সংগ্রহের প্রমান।

কৃষকের নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলে শত শত মেট্রিক টন ধান কিনে তা ঢোকানো হলো সরকারি খাদ্যগুদামে। আবার ধানের মূল্যও ব্যাংক থেকে পরিশোধ করা হলো ওই একই কৃষকের নামে। কিন্তু হতভাগা কৃষক এর কিছুই জানেন না। কে তার নাম কৃষি তালিকায় অন্তরর্ভূক্ত করলো, কে তার নামের তালিকা খাদ্য বিভাগকে প্রদান করলো, কে তার নামে ব্যাংক হিসেব খুলে কেইই বা আবার টাকা তুলে নিলো, এসবের কোন তথ্যই জানা নেই গত মৌসুমে শরীয়তপুরের বোরো ধান চাষি অনেক কৃষকের কাছে।

বাংলাদেশ এখনো কৃষি নির্ভর দেশ। সরকার এখনো কৃষি অর্থনীতিকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছে। কৃষি এবং কৃষককে বলা হচ্ছে দেশের প্রাণ। গোটা দেশবাসীর মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাদ্য তুলে দিতে সুর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত নিরন্তর হাঁড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে কৃষক ফসল উৎপাদন করে চলেছেন সভ্যতার গোড়া থেকেই। মাত্র কিছুকাল আগেও দেশের বড় কৃষক বা গৃহস্তরাই ছিলেন দেশের সবচে স্বচ্ছল ও সুখী মানুষ। এখনো বলা হয়ে থাকে দেশের ৮০ শতাংশ লোক কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু সুখে নেই তারা। দুখের ভাগারে ফেলে সুখ তাদের কপাল থেকে নির্বাসনে গেছে বহু আগেই। দিন দিন ধার দেনা মাথার বোঝাঁ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কৃষকের। ঋণ-কর্জ করে, চড়া দরে সাব বীজ কিনে, দ্বিগুন-তিনগুন দরে শ্রমিক নিয়ে, মহাজন-এনজিও থেকে মোটা সুদে টাকা তুলে এখনো আমার দেশের কৃষককে ফসল ফলাতে হয় প্রতি মৌসুমে।

খড়া, বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি সহ নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে অভাগা কৃষক যখন তার উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলেন, ঠিক তখনি তাদের কপাল পুড়ে। কৃষকের উৎপাদিত ফসল বিশেষ করে ধানের বাজারে ধ্বস নামে ভরা মৌসুমে। উৎপাদন ব্যয়ের ধারে কাছেও পৌছেনা ধানের মূল্য। বাধ্য হয়ে সীমাহীন লোকসান মেনে নিয়ে পানির দরে ধান বিক্রি করতে হয় কৃষককে।

সাম্প্রতিক কালে সরকার কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে ধান ও গম ক্রয় পদ্ধতি শুরু করেছেন। এর আওতায় প্রতি কেজি বোরো ও আমন ধানের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ টাকা। অর্থাৎ ১ হাজার ৪০ টাকায় প্রতি মন ধান খাদ্য বিভাগের কাছে বিক্রি করতে পারবেন উৎপাদক কৃষক। তাতে কৃষকের খরচ পুষিয়ে কিছুটা লাভের মুখ দেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু কোন জেলায় কতজন কৃষক কত টন ধান উৎপাদন করলো, আর সরকার সংশ্লিষ্ট জেলায় কতজন কৃষকের কাছ থেকে কত টন বা মন ধান ক্রয় করলো এ নিয়ে একটি প্রশ্ন থেকে যায়। আমি এখানে দেশের একটি শতভাগ কৃষিনির্ভর পশ্চাদপদ জেলা শরীয়তপুরের পরিসংখ্যান তুলে ধরতে চেষ্টা করছি।

২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে সরকার ২৫ এপ্রিল থেকে ৩১ আগষ্ট তারিখের মধ্যে দুই দফায় সারা দেশ থেকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন। এর আওতায় শরীয়তপুর জেলায়ও ১ হাজার ৯৭৩ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করেন। জেলায় ২৭ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৬১৫ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন করেছেন ৮৭ হাজার ৫০৮ জন কৃষক। কৃষি বিভাগ জেলার ৬টি উপজেলা থেকে খাদ্য বিভাগকে উৎপাদক কৃষকের তালিকা দিয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৩৯ জনের। খাদ্য বিভাগ মাত্র ৮৪০ জন কৃষকের নামে ৫ কোটি ১২ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকার বিনিময়ে ধান ক্রয় করেছে ১ হাজার ৯৭৩ মেট্রিক টন।

জেলায় উৎপাদিত প্রায় পৌনে ২ লক্ষ টন ধানের বিপরীতে সরকার কিনলেন মাত্র ১ হাজার ৯৭৩ মেট্রিক টন ধান। আর সাড়ে ৮৭ হাজার কৃষকের মধ্য থেকে মাত্র ৮৪০ জনের নামে ধান ক্রয় করলো খাদ্য বিভাগ। যা উৎপাদিত ফসলের মাত্র ১.১৪% এবং উৎপাদক কৃষকের ১% এরও কম অর্থাৎ ০.৯৬%। এটা শুধু বৈষম্যই নয়, ধান ক্রয়ের নামে কৃষকের সাথে সরকারের রীতিমত উপহাস।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যে ৮৪০ বা সাড়ে ৮’শ কৃষকের নামে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে তার অধিকাংশ কৃষকই জানেন না তাদের নামে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান ক্রয় বা বিক্রি করা হয়েছে। দেখা গেছে, ৩/৪ বছর আগে মৃত্যু বরণ করেছেন এমন লোকের নামেও কৃষি বিভাগ খাদ্য বিভাগকে তালিকা সরবরাহ করেছে এবং ওই সকল মৃত ব্যক্তিদের নামে ব্যাংকে হিসাব নাম্বার খুলে, তাদের নামে ধান বিক্রি দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ধানের মূল্য তুলে নিয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। শুধু তাই নয়, কোন ভাবেই কৃষি কাজের সাথে জরিত নন এমনকি এক শতাংশ কৃষি জমিও নেই, পরিবারের কেউ কোন দিন কৃষি কাজ করেনি এমন লোকের নামও ধান সংগ্রহের তালিকায় পাওয়া গেছে।

শরীয়তপুর জেলায় এ বছর উপজেলা ভিত্তিক কতজন কৃষক কি পরিমান ধান উৎপাদন করেছেন এবং কতজনের কাছ থেকে সরকার কতটুকু ধান ক্রয় করেছে সে পরিসংখ্যানটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরছি।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবছর জেলার সদর উপজেলায় ১৮ হাজার ৬৫০ জন কৃষক ৪০ হাজার ১৫৭ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করেছেন। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ খাদ্য বিভাগকে তালিকা সররাহ করেছে ৯৫০ জন উৎপাদক কৃষকের। আর খাদ্য গুদাম ১৬৩ জন কৃষকের থেকে কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করেছে মাত্র ৪৪৫ মেট্রিক টন।

নড়িয়া উপজেলায় ১৭ হাজার ৩১৫ জন কৃষক ৩৬ হাজার ৬৯৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করেছেন। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ খাদ্য বিভাগকে ১৯২ জন উৎপাদক কৃষকের তালিকা সররাহ করেছে। আর খাদ্য গুদাম ১৫৮ জন কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করেছে ৪৪৭ মেট্রিক টন। জাজিরা উপজেলায় ১ হাজার ২০০ জন কৃষক ৭ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করেছেন।

এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ খাদ্য বিভাগকে তালিকা সররাহ করেছে ৩৯৪ জন কৃষকের। আর ৩৫ জন কৃষকের কাছ থেকে খাদ্য গুদাম ধান সংগ্রহ করেছে মাত্র ৯০ টন। ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ১৯ হাজার ২০০ জন কৃষক ৩০ হাজার ১০৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করেছেন, এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ খাদ্য বিভাগকে তালিকা সররাহ করেছে ৯১০ জন কৃষকের। খাদ্য গুদাম ধান সংগ্রহ করেছে ১৪৯ জন কৃষকের থেকে কাছ থেকে ৩৩১ মেট্রিক টন। ডামুড্যা উপজেলায় ১৩ হাজার ১৪৩ জন কৃষক ২৭ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করেছেন।

এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ খাদ্য বিভাগকে তালিকা সররাহ করেছে ৪৫০ জন কৃষকের। খাদ্য গুদাম ধান সংগ্রহ করেছে ১৮৪ জন কৃষকের থেকে কাছ থেকে ২৯৫ মেট্রিক টন। গোসাইরহাট উপজেলায় ১৮ হাজার কৃষক ৩১ হাজার ৫০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করেছেন। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ খাদ্য বিভাগকে তালিকা সররাহ করেছে ১৪৩ জন কৃষকের আর খাদ্য গুদাম ধান সংগ্রহ করেছে ১৫০ জন কৃষকের কাছ থেকে ৩৬৫ মেট্রিক টন।

খাদ্য বিভাগকে ঘিরে অসাধু চক্র বা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন থেকেই শরীয়তপুরে বেশ তৎপর। সরকারি ভাবে ন্যায্য মূল্যের ধান, গম, চাল ক্রয়ে তারা সব সময়েই দুই নম্বরী পথ বেছে নেয়। সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকেন চিহ্নিত খাদ্য ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক আশ্রয়ে লালিত সুবিধাবাদী অসাধু নেতা। খাদ্য ও কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কিছু অসৎ লোকের যোগসাজোশে কৃষকের সাথে প্রতারণা করে ওই চক্রটি প্রতি বছর হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কৃষি বিভাগ খাদ্য গুদামকে কৃষকের মূল তালিকা প্রদানের পর ধান সংগ্রহ চালাকালিন সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা কৃষি কাজের সাথে জরিত নয় এমন কিছু লোকের নামে সম্পূরক তালিকা প্রদান করে থাকেন। উভয় তালিকায়ই অসংখ্য ভূয়া কৃষকের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আর ভূয়া কৃষকের নামেই বেশীরভাগ ধান সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। সরেজমিন

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের কৃষকের নামে কৃষি বিভাগ শরীয়তপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কয়েকজন বাসিন্দার নাম তালিকাভূক্ত করেছে। এদের মধ্যে দক্ষিন মধ্যপাড়া গ্রামের সামাদ শেখ মারা গেছেন তিন বছর আগে, তার নামে ৫০ মন ধান ক্রয় করেছে খাদ্য গুদাম। তার ছেলে ইদ্রিস শেখও মারা গেছে দুই বছর আগে। ইদ্রিসের নামেও খাদ্য গুদাম ক্রয় করেছে ৭৫ মন ধান এবং সামাদ শেখের অপর দুই ছেলে জাকির শেখের নামে ৫০ মন ও ইয়াসিন শেখের নামে ২৫ মন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। উত্তরা ব্যাংক শরীয়তপুর শাখা চেকের মাধ্যমে তাদের ধান বিক্রির টাকা পরিশোধ করেছে বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সামাদ শেখের ছেলে ইয়াছিন শেখ জানিয়েছেন, তারা অল্প কিছু ধান উৎপাদন করলেও কোথাও কোন ধান বিক্রি করেননি, এমনকি কে তাদের নামে কোথায় ধান বিক্রি করেছে তাও তাদের জানা নেই। তিনি আরো জানিয়েছেন, তার পিতা সামাদ শেখ ও মেজ ভাই ইদ্রিশ শেখ অনেক আগেই মৃত্যু বরণ করেছেন। একই গ্রামের মান্নান ঢালীর ছেলে মুনসুর আলম ঢালী এবং আবু আলম ঢালীর কাছ থেকেও ৭৫ মন করে মোট দেড়‘শ মন ধান ক্রয় করেছে আঙ্গারিয়া খাদ্য গুদাম। মুনসুর ঢালী এবং আবু আলম ঢালীও জানিয়েছেন তারা সামান্য কিছু ধান উৎপাদন করলেও সরকারের কাছে ধান বিক্রি করেননি। উত্তরা ব্যাংক থেকে চেকের মাধ্যমে ধানের মুল্য বাবদ ৭৮ হাজার টাকা উত্তলোন করেছেন কিনা জানতে চাইলে আবু আলম ঢালী বলেন, “ আমি তো স্বাক্ষর দিতেই জানিনা, টাকা তুলবো কিভাবে”?

একইভাবে জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল কাঁচিকাটা ইউনিয়নের বাসিন্দা গ্রাম পুলিশ আক্তার হোসেনের নামে ৫০ মন, মেছের আলী মির্জির নামে ৫০ মন, ইউপি সদস্য খায়রুন নেছার নামে ৫০ মন, গ্রাম পুলিশ জহিরুল ইসলামের নামে ৫০ মন, সাবেক ইউপি মেম্বার নজরুল ইসলামের নামে ৫০ মন ধান ক্রয় করেছে ভেদরগঞ্জ খাদ্য গুদাম। তারা জানিয়েছেন, সরকারি গুদামে তাদের নামে ধান ক্রয় বিষয়ে তারা কিছুই জানেননা।

জাজিরা উপজেলার মূলনা ইউনিয়নের ছাব্বিশ পাড়া গ্রামের ফারুখ মাদবরের নামে ৫০ মন এবং মজিবর খালাসীর নামে ৫০ মন ধান সংগ্রহ করেছে জাজিরা খাদ্য গুদাম। তারা জানিয়েছেন, জাজিরা বাজারের খাদ্য ব্যবসায়ী রশীদ বেপারী তাদের নামে ব্যাংকে একাউন্ট খুলিয়ে প্রতিটি চেকে দুইটি করে পাতায় স্বাক্ষর রেখে চেকের পাতা ছিড়ে রেখেছেন। রশীদ বেপারী তাদের দুইজনকে মাত্র ২০০ টাকা পথ খরচ দিয়েছেন। কিন্তু তারা কোন ধান গুদামে বিক্রি করিনি।

একই উপজেলার বড় কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মাঝির নামে জাজিরা উপজেলা খাদ্য গুদাম ৭৫ মন ধান ক্রয় করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এক আত্মীয় আমার কাছ থেকে যাবতীয় কাগজ ও সই স্বাক্ষর রেখে আমার নামে ৩ টন ধান গুদামে দিয়েছে বলে আমি জানি। তবে আমি নিজে ধান বিক্রি করিনি। আমার নামে ধান ক্রয়ের বিনিময়ে আমার ওই আত্মীয় আমাকে ২ হাজার টাকা দিয়েছেন। এমনিভাবে যাদের নামে গুদামে ধান ক্রয় করা হয়েছে এনম অনেক কৃষকের সাথে কথা বলার পর তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানেননা বলে বলে জানিয়েছেন।

খাদ্য মন্ত্রনালয়ের ২০১৭ সালের আভ্যন্তরিন খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে উপজেলা সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটি উপজেলার ধান ও গম উৎপাদন অনুযায়ী সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ইউনিয়নওয়ারী বিভাজন করবে। উপজেলা কৃষি অফিসার কর্তৃক সরবরাহ করা মৌসুমে আবাদকৃত জমির পরিমান এবং সম্ভাব্য উৎপাদনের পরমিান সহ ডাটা বেইজ হতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কৃষক নির্বাচন করবে। উপজেলা কমিটি প্রত্যেকের প্রদেয় খাদ্যশস্যের পরিমান সহ নির্বাচিত কৃষকদের তালিকা সংশ্লিষ্ট ক্রয় কেন্দ্রে প্রেরণ করবে। এ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত কৃষকদের নিকট থেকে ধান ও গম ক্রয় করা হবে।

ক্রয়কারি কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ যেমন, কৃষি কার্ড, পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে তালিকাভূক্ত কৃষকদের সনাক্ত করবেন। তালিকা বহির্ভূত কারো কাছ থেকে ধান গম ক্রয় কার যাবেনা। আরো বলা হয়েছে, অধিক সংখ্যক কৃষককে ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রির সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে উপজেলা কমিটি একজন কৃষকের কাছ থেকে সর্বনিন্ম তিন বস্তা পরিমান বা ১২০ কেজি ধান ও ১৫০ কেজি গম থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার কেজি বা তিন মেট্রিক টন দাধ ও গম ক্রয় করতে পারবে। কিন্তু লক্ষ্য করা গেছে সরকারের এই নীতিমালার শর্ত ভঙ্গ হয়েছে পদে পদে।

গত ২০ নভেম্বর থেকে নতুন করে সরকার সারা দেশ থেকে ৬ লক্ষ মেট্রিক টন আমন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রতিটি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক তালিকা প্রেরণ করেছেন। ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তারিখের মধ্যে ধান ক্রয় করতে হবে। এর আওতায় শরীয়তপুর জেলায় ১ হাজার ৭৩৫ মেট্রিক টন আমন ধান ক্রয় করা হবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে খাদ্য বিভাগ।

শরীয়তপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানিয়েছেন, কোন অনিয়মের সুযোগ থাকবেনা আমন ধান সংগ্রহে। তালিকাভূক্ত কৃষকদের কাছ থেকে লটারীর মাধ্যমে ধান ক্রয় করা হবে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা, সরকার কি শতভাগ নীতিমালা অনুসরণ করে কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করবেন, নাকি পূর্বেকার নিয়মের গন্ডিতেই বাধা হবে অসহায় কৃষকের ভাগ্য।

(কেএনআই/এসপি/নভেম্বর ২৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test